কোলাঘাট, পূর্ব মেদিনীপুর : চলছে ইলিশের ভরা মরশুম। অথচ এখনও রূপনারায়নের কোলাঘাট, গেওখালি এমনকি হুগলির মোহনাতেও দেখা মিলছে না কাঙ্খিত রুপোলী ফসল ইলিশের। গত ২ বছর ক্রমান্বয়ে ইলিশের আমদানী তলানিতে ঠেকে যাওয়ার পর অধিকাংশ মৎস্যজীবি আশা করেছিলেন, এবার অন্ততঃ অভাব কিছুটা মিটবে। কিন্তু বর্ষা মরশুমের মধ্যগগনে এসেও ইলিশের দেখা না মেলায় কার্যত হতাশ মৎস্যজীবিরা। ইলিশের আকালের জেরে অনেক ক্ষুদ্র মৎস্যজীবি মাছ ধরার পরিবর্তে শ্রমিকের কাজ করে রুজি রোজগারের চেষ্টা চালাচ্ছেন বলে জানিয়েছেন।
কিন্তু কেন এই বেহাল দশা? এই বিষয়ে এখনও পর্যন্ত নির্দিষ্ট কারণ হাতড়ে বেড়াচ্ছেন মৎস্যজীবিরা। কোলাঘাটের মৎস্যজীবিরা যেমন দাবী জানিয়েছেন, নদীর নাব্যতা কমে যাওয়াই ইলিশ উৎপাদনের পথে বড় বাধা হয়ে দাঁড়িয়েছে। কেউ বা আবার বৃষ্টি না হওয়াকেই দায়ী করছেন। কেউ বলছেন দিঘা ও সংলগ্ন গভীর সমূদ্রে যথেচ্ছ হারে ইঞ্জিন বোট নিয়ে মাছ ধরা, বছরের পর বছর ছোট ফাঁসের জাল দিয়ে চারা মাছ নষ্ট করা, বটম ট্রলিং (মাটি কামড়ে জাল টানা) প্রভৃতি কাল হয়েছে।
কোলাঘাটের মৎস্যজীবি মানু খাঁড়া’র দাবী, “বিদ্যুৎ কারখানার ছাই মিশ্রিত জল নদীতে ফেলা হচ্ছে। কমে যাচ্ছে নদীর নাব্যতা। ভরাট হচ্ছে যত্রতত্র। কমেছে স্রোতের টান। তাই সমূদ্রের উজান টপকে কোলাঘাট এলাকার নদীতে আর ইলিশের দেখা একেবারেই মিলছে না”।
আর এক মৎস্যজীবি নিত্য বারিক জানান, “পেটের জ্বালায় এখন বাধ্য হয়েই মাছ ধরা ছেড়ে শ্রমিকের কাজে যেতে হচ্ছে। ইলিশ ধরা না পড়ায় রুজি রোজগার প্রায় নেই বললেই চলে। এই পরিস্থিতিতে মাছ ধরার পেশা থেকে বাধ্য হয়েই মুখ ফিরিয়ে নিতে হচ্ছে অধিকাংশ মৎস্যজীবিদের”।
অন্যদিকে দিঘার সমূদ্রে ইলিশ সহ সামূদ্রিক মাছের আকাল নিয়ে বরাবরই সরব হয়েছে পূর্ব মেদিনীপুর মৎস্যজীবি ফোরাম। সংগঠনের সাধারণ সম্পাদক দেবাশিষ শ্যামলের অভিযোগ, “সমূদ্রে ঘন জাল ব্যবহার থেকে বিপুল পরিমানে মেশিন চালিত ট্রলার নেমে যাওয়া, বটম ট্রলিং (মাটি কামড়ে জাল টানা) সহ নানাবিধ বেনিয়ম চলছে। কিন্তু এই নিয়ে বৃহৎ মৎস্যজীবি সংগঠন থেকে সরকারী স্তরে চরম উদাসীনতার মাশুল দিতে হচ্ছে এখন”।
যদিও পূর্ব মেদিনীপুর জেলা মৎস্য দফতরের অ্যাসিস্ট্যান্ট ইঞ্জিনিয়ার (মেরিন) জয়ন্ত প্রধান জানান, “নাব্যতা কমে যাওয়া একটা সমস্যা হলেও ভারী বৃষ্টিপাত হলেই এই সমস্যা মিটে যাবে। সেই সঙ্গে রাজ্য সরকারের তরফে ড্রেজিং করেও নাব্যতা ফেরানোর চেষ্টা হচ্ছে”। জয়ন্তবাবুর মতে, “কোলাঘাটের ইলিশ শীঘ্রই আবারও মিলবে। এই বিষয়ে মৎস্য দফতর আশাবাদী”।