নিউজবাংলা ডেস্ক, পূর্ব মেদিনীপুর : “প্রথম থেকে স্বামীর মৃত্যু নিয়ে আমার মনে সন্দেহ ছিল। আমি কখনওই উত্তর পেলাম না শুভেন্দু অধিকারীর সিকিউরিটি হিসেবে কাজ করা স্বত্ত্বেও আমার স্বামী কেন গুলিবিদ্ধ হলেন? চিকিৎসার জন্য আমার স্বামীকে কলকাতায় স্থানান্তরে দেরি কেন হল?” এমন একঝাঁক প্রশ্ন তুলে স্বামীর মৃত্যুর আড়াই বছর বাদে বিচারের দাবীতে প্রশাসনের দ্বারস্থ হলেন পূর্ব মেদিনীপুরের মহিষাদলের বাসিন্দা সুপর্ণা চক্রবর্তী।
সুপর্ণা’র স্বামী রাজ্য পুলিশের আর্মড ফোর্সের জওয়ান শুভব্রত চক্রবর্তী দীর্ঘ প্রায় ৬ থেকে ৭ বছর শুভেন্দু অধিকারীর দেহরক্ষী হিসেবে কর্মরত ছিলেন। প্রায় আড়াই বছর আগে ২০১৮ সালের ১৩ই অক্টোবর সকাল ১১টা নাগাদ কাঁথির পুলিশ ব্যারাকে মাথায় গুলি লেগে গুরুতর জখম হন শুভব্রত ওরফে বাপি। দিনভর কাঁথি হাসপাতালে জখম অবস্থায় পড়ে ছিলেন শুভব্রত। অনেক টানাপোড়েনের পর ওইদিন রাতের দিকে কলকাতা থেকে আইসিইউ অ্যাম্বুলেন্স আনা হয়। এবং কলকাতার একটি বেসরকারী হাসপাতালে তাঁকে নিয়ে যাওয়া হয়। এবং পরের দিন সেখানেই মৃত্যু হয় তাঁর।
সেই ঘটনাকে হাতিয়ার করে এবার খুনের অভিযোগে মামলা দায়ের হল কাঁথি থানায়। মৃতের স্ত্রী পেশায় প্রাথমিক স্কুলের শিক্ষিকা সুপর্ণা বৃহস্পতিবার কাঁথি থানায় লিখিত অভিযোগ দায়ের করে জানান, “সেই সময় শুভেন্দু অধিকারী জেলায় ও রাজ্যে একজন শক্তিশালী ব্যক্তি ছিলেন। তাই ওনার বিরুদ্ধে মুখ খুলতে ভয় পাই। দুই মেয়েকে নিয়ে থাকি তাই কাউকে কিছু বলে উঠতে পারনি। কিন্তু এখন পরিস্থিতির পরিবর্তন ঘটায় বিচার পেলেও পেতে পারি” দাবী জানিয়েছেন সুপর্ণা।
তবে তাৎপর্যপূর্ণ ভাবে এই অভিযোগ পত্রে উঠে এসেছে সাম্প্রতিক বিতর্কের কেন্দ্রে থাকা শুভেন্দুর ঘনিষ্ঠ হিসেবে পরিচিত রাখাল বেরা, হিমাংশু মান্না, স্বদেশ দাসের নামও। পুলিশ সূত্রে খবর, সুপর্ণার অভিযোগের ভিত্তিতে কাঁথি থানায় আইপিসি ধারা ৩০২, ১২০বি ধারা এফআইআর দায়ের হয়েছে। লিখিত অভিযোগে সুপর্ণা দাবী জানিয়েছেন, “দেহ ময়না তদন্তের সময় ঘটনাস্থলে উপস্থিত শুভব্রত’র দাদা দেবব্রত চক্রবর্তী সন্দেহ প্রকাশ করেছিলেন। তাঁকে ধমক দেন উপস্থিত রাখাল বেরা”। সুপর্ণার দাবী, “শুভেন্দুবাবু এই বয়ানে অসন্তুষ্ট হয়েছেন বলে জানান রাখাল। চিকিৎসকও দেহ ময়না তদন্তে রাজি হয়নি। অবশেষে এক পুলিশ আধিকারীক এসে বয়ান দেওয়ার পর দেহ ময়না তদন্ত হয়”, জানিয়েছেন সুপর্ণা।
অভিযোগপত্রের শেষ পর্যায়ে সুপর্ণা পুলিশকে জানিয়েছেন, “ মাস খানে আগে গত ১৫ মে দুপুর আড়াইটে নাগাদ হিমাংশু মান্না ও স্বদেশ দাস বাড়িতে এসে জিজ্ঞেস করে কেউ ফোন করেছিল কিনা”। এই ঘটনার পর থেকে মানসিক ভাবে বিপর্যস্ত বোধ করেন সুপর্ণা এবং স্বামীর মৃত্যু রহস্য সঠিক ভাবে তদন্ত করে প্রকৃত সত্য উদঘাটনের আবেদন জানিয়েছেন তিনি। পূর্ব মেদিনীপুরের পুলিশ সুপার অমরনাথ কে. জানিয়েছেন, অভিযোগ পেয়েছি। ঘটনার তদন্ত শুরু হয়েছে। তবে এই মুহূর্তে বেশী কিছু বলার নেই বলেই জানিয়েছেন তিনি।