নিউজবাংলা, কলকাতা : নির্বাচন কমিশনের হাতে বাংলার ৩৩ থেকে ৩৪ লক্ষ ‘মৃত’ ব্যক্তির তালিকা তুলে দিল আধার কর্তৃপক্ষ (ইউআইডিএআই)। বুধবার রাজ্যের (SIR 2025) মুখ্য নির্বাচনী আধিকারিক মনোজ আগরওয়ালের সঙ্গে বৈঠকের পর, আধার কর্তৃপক্ষের অধিকর্তা শুভদীপ চৌধুরি নিজেই এই তথ্য জানান।
আর এই তালিকা নিয়েই দানা বেঁধেছে বড়সড় রাজনৈতিক বিতর্ক। রাজ্যের শাসক দল তৃণমূল কংগ্রেসের সরাসরি অভিযোগ, বৈধ ভোটারদের তালিকা থেকে বাদ দেওয়ার জন্যই এটা বিজেপির ‘গভীর ষড়যন্ত্র’। ‘জীবিত’ ভোটারদেরও ‘মৃত’ দেখিয়ে তালিকা থেকে নাম ছেঁটে ফেলার চক্রান্ত চলছে বলে আশঙ্কা প্রকাশ করেছে তারা। অবিলম্বে এই তালিকা প্রকাশ্যে আনার দাবি তুলেছে তৃণমূল।
শাসক দলের মূল আপত্তির জায়গাটি হল আধার কর্তৃপক্ষের দেওয়া তথ্যের স্ববিরোধিতা। তৃণমূলের প্রশ্ন, যে সংস্থা কয়েকমাস আগেই সংসদে জানিয়েছিল যে তাদের কাছে নিষ্ক্রিয় আধার সংক্রান্ত রাজ্যভিত্তিক কোনও তথ্যই থাকে না, তারা আজ কীসের ভিত্তিতে লক্ষ লক্ষ মৃতের তালিকা কমিশনের হাতে তুলে দিচ্ছে?
সংসদের তথ্য ঘিরে জোরালো প্রশ্ন
তৃণমূলের তরফে মনে করিয়ে দেওয়া হয়েছে, ২০২৪ সালের ফেব্রুয়ারিতেই তৃণমূল সাংসদ সাকেত গোখলের প্রশ্নের জবাবে আধার কর্তৃপক্ষ রাজ্যসভায় জানিয়েছিল (২০১৭ সালের একটি চিঠির উল্লেখ করে) যে, রাজ্য বা বছর ভিত্তিক নিষ্ক্রিয় আধার কার্ডের কোনও তথ্য তারা সংগ্রহে রাখে না।
এই প্রসঙ্গ টেনেই তৃণমূলের রাজ্য সাধারণ সম্পাদক কুণাল ঘোষ আধার কর্তৃপক্ষ এবং নির্বাচন কমিশনকে একযোগে তোপ দেগেছেন। তাঁর কথায়, “যারা নিজেরাই সংসদে বলেছিল তথ্য রাখে না, তারা কী ভাবে পশ্চিমবঙ্গের মৃতদের তথ্য কমিশনকে দিচ্ছে? এটা দেখতে হবে যে, জীবিত ভোটারকে মৃত ভোটারের তালিকায় ফেলা হয়েছে কি না। এটা কমিশনেরই দেখার দায়িত্ব।”
কুণাল ঘোষের আরও অভিযোগ, “মহারাষ্ট্র, দিল্লির ভোটার লিস্ট তো কপি পেস্ট হয়েছিল। আধার কর্তৃপক্ষের উচিত আগে মৃতদের নাম প্রকাশ করা। তার আগেই ওঁরা তালিকা দিয়ে দিচ্ছেন কমিশনকে!” তাঁর প্রশ্ন, “একদিকে কেন্দ্র সরকার বলছে আধার সর্বোচ্চ, আবার অন্যদিকে বলছে আধার গ্রহণযোগ্য নয়!”
বিহারের উদাহরণ, আশঙ্কায় শাসক দল
শাসক দলের স্পষ্ট আশঙ্কা, এই কায়দায় পিছনের দরজা দিয়ে ভোটার তালিকা থেকে বহু বৈধ ভোটারের নাম বাদ দেওয়ার ষড়যন্ত্র হচ্ছে। তৃণমূল বিহারের প্রসঙ্গ টেনে মনে করিয়েছে, সেখানেও এসআইআর (SIR)-এর পরে খসড়া তালিকায় বহু বৈধ ভোটারকে ‘মৃত’ বলে দাগিয়ে দেওয়া হয়েছিল। পরে ফের তাঁদের নাম নতুন করে তুলতে হয়। তৃণমূলের দাবি, এ রাজ্যেও সেই একই ঘটনার পুনরাবৃত্তি ঘটানোর চক্রান্ত চলছে। এই বিষয়ে দল বড়সড় আন্দোলনের পথেও যেতে পারে বলে হুঁশিয়ারি দেওয়া হয়েছে।
আধার–বিহীন ও এনুমারেশন
এর মধ্যেই অন্য একটি তথ্য সামনে এসেছে। আধার কর্তৃপক্ষ বাংলার এমন ১৩ লক্ষ মানুষের তথ্যও কমিশনকে দিয়েছে, যাঁদের কোনও আধার কার্ডই নেই। কমিশন জানিয়েছে, ওই ব্যক্তিরা যদি এনুমারেশন ফর্ম জমা দেন এবং ৯ ডিসেম্বরের খসড়া তালিকায় তাঁদের নাম থাকে, তবে তাঁদের শুনানিতে ডেকে সেই সংক্রান্ত তথ্য যাচাই করে দেখা হবে।
কমিশন সূত্রে আরও খবর, রাজ্যে ভোটারদের হাতে এনুমারেশন ফর্ম (ACR) বিলির কাজও জোরকদমে চলছে। ১৩ নভেম্বর পর্যন্ত ৯৪.৯১ শতাংশ (৭ কোটি ২৭ লক্ষ) ভোটারের হাতে ফর্ম পৌঁছে গিয়েছে। গোয়া বা লাক্ষাদ্বীপের মতো ছোট রাজ্য ও কেন্দ্রশাসিত অঞ্চল ১০০ শতাংশ কাজ শেষ করলেও, বাংলার পারফরম্যান্স উত্তরপ্রদেশ বা মধ্যপ্রদেশের মতো রাজ্যের থেকে ভালো। বিএলও-দের উপর ১০০ শতাংশ ফর্ম বিলির জন্য কমিশন চাপ তৈরি করছে বলেও অভিযোগ উঠেছে।
তথ্যসূত্র – সংবাদ প্রতিদিন















