নন্দীগ্রাম, পূর্ব মেদিনীপুর : পঞ্চায়েত নির্বাচনের প্রাক্কালে দাঁড়িয়ে জমি আন্দোলনের আঁতুড়ঘর নন্দীগ্রামে রীতিমতো দ্বিধাবিভক্ত তৃণমূল শিবির (Nandigram)। এক সময়ের জমি আন্দোলনের প্রথম সারির নেতা তথা তৃণমূলের জেলা পরিষদের সহ সভাপতি সেক সুফিয়ানই এবার টিকিট পাচ্ছেন না। প্রাথী বাছাইয়ের আলোচনা থেকে বাদ পড়েছেন আদি গোষ্ঠী। পরিবর্তে নব্য তৃণমূলেই আস্থা রাখছে দল।
যার ফল স্বরূপ নজির বিহীন ভাবে এখানকার ১৭টি গ্রাম পঞ্চায়েতের সবকটি আসনেই নির্দল হিসেবে মনোনয়ন জমা করছেন তৃণমূলেরই একটি গোষ্ঠী। বিক্ষুব্ধ গোষ্ঠীর দাবী, গত এক বা দেড় দশকেরও বেশী সময় ধরে তৃণমূল করার পর এখন তাঁদের কোনঠাসা করা হয়েছে। তাই নন্দীগ্রামে তৃণমূলকে বাঁচাতেই দলের বিরুদ্ধে প্রার্থী নামাচ্ছেন তাঁরা।
প্রসঙ্গতঃ গত বিধানসভা নির্বাচনে ভোট পরবর্তী হিংসা মামলা সহ একাধিক গুরুতর অভিযোগ রয়েছে আদি তৃণমূলের একাংশের বিরুদ্ধে। মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের নির্বাচনী এজেন্ট সেক সুফিয়ানের বিরুদ্ধে মাছ ধরার ট্রলার ও জাহাজবাড়ি তৈরির জন্য ব্যাঙ্কের টাকা ঋণ খেলাপির অভিযোগ ঘিরেও শোরগোল তৈরি হয়। তাই আদি নেতাদের সঙ্গে ক্রমেই দূরত্ব বাড়ছে নব্য তৃণমূলীদের। এই কারনেই জমি আন্দোলনের সময়কার বহু নেতা কর্মীর সঙ্গে ক্রমেই দূরত্ব বাড়ছে নব্যদের।
এই বিক্ষুব্ধ গোষ্ঠীর সদস্য প্রাক্তন ব্লক কমিটির নেতা বাবুল আখতার জানান, “২০০৭ সালে জমি আন্দোলনে আমরা রক্ত ঝরিয়েছি। বাম জমানাতেও তৃণমূলের ঝান্ডা ধরে বহু মামলা মোকদ্দমায় জড়িয়েছি। একসময় তৃণমূলের ব্লক কমিটির দায়িত্বও সামলেছি। কিন্তু এখন নতুন ব্লক কমিটি গড়ে আমাদের সবকিছু থেকে বঞ্চিত করেছে”। তিনি জানান, “আমাদের অবদান দল ভুলে গেছে। সব স্তরেই আমরা নিজেদের অবস্থান জানিয়েছি। কিন্তু কোনও সুরাহা হয়নি”।
বাবুল জানিয়েছেন, ” নন্দীগ্রামে তৃণমূলকে বাঁচাতেই আমরা নন্দীগ্রাম উন্নয়ন পর্ষদ নামে একটি শিবির গড়েছি। এক ছাতার তলায় ১৭টি অঞ্চলে নির্দল প্রার্থী দিচ্ছি। আমরা মানুষের সঙ্গে রয়েছি তার প্রমাণ মিলবে ভোটের পর যখন দলীয় প্রতীকের প্রার্থীরা হারের মুখ দেখবে”।
আর এক তৃণমূলের বিক্ষুব্ধ নেতা দাউদপুর অঞ্চলের তৃণমূলের পঞ্চায়েত সদস্য আব্বাস বেগের দাবী, “আমি ১০ বছরের পঞ্চায়েত সদস্য। অথচ প্রার্থী তালিকায় আমার নাম নেই। বর্তমান ব্লক নেতারা নিজেদের মনোনীত প্রার্থীদের টিকিট দিচ্ছে”। আব্বাসের দাবী, “আমরা সেক সুফিয়ান পন্থী নেতা। নতুন ব্লক কমিটি বেছে বেছে আমাদের কোনঠাসা করছে। তৃণমূলের নবজোয়ারের অভিষেক বন্দোপাধ্যায়ের কাছে এই বিষয়ে অভিযোগ জানাতে গিয়ে সুরক্ষাকর্মীদের হাতে মার খেয়েছি। এর যোগ্য জবাব ভোটের ময়দানে দেওয়া হবে”।
তবে দলে কোনঠাসা হলেও বিক্ষুব্ধদের সঙ্গে কোনও সম্পর্ক নেই বলেই স্পষ্ট জানিয়েছেন গত বিধানসভা নির্বাচনে মমতা বন্দোপাধ্যায়ের নির্বাচনী এজেন্ট সেক সুফিয়ান। সুফিয়ান জানান, “আমি তৃণমূলের একজন জেলা নেতৃত্ব এবং জমি আন্দোলনের সৈনিক। কেউ দলের বিরুদ্ধে গেলে তৃণমূল তাকে ক্ষমা করবে না। তাই যারা আমার নাম নিয়ে দল বিরোধী কাজ করবেন তাঁদের সঙ্গে আমার কোনও সম্পর্ক নেই।
অ্ন্যদিকে নন্দীগ্রামের তৃণমূলের ব্লক সভাপতি বাপ্পাদিত্য গর্গ জানান, ” পঞ্চায়েত ভোটে সবার লড়াইয়ের অধিকার আছে। তবে যারা মমতা বন্দোপাধ্যায়ের আদর্শ ও তৃণমূলের ওপর বিশ্বাস রাখেন তাঁরা কোনওদিনই দল বিরোধী কাজে যাবেন না এটাই আমার বিশ্বাস। দল যখন যাকে দায়িত্ব দেবে তিনি সেই কাজ করবেন। তবে কেউ দলের ক্ষতি করতে চাইলে তার বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেওয়া হবে”।
তবে তৃণমূলের এই গোষ্ঠী কোন্দল নিয়ে রীতিমতো উচ্ছ্বসিত গেরুয়া শিবির। বিজেপির তমলুক সাংগঠনিক জেলার সভাপতি তপন কুমার ব্যানার্জী’র মন্তব্য, “জমি আন্ূোলনের আঁতুড়ঘরেই তৃণমূল শিবিরের ছন্নছাড়া অবস্থা। যারা একসময় রক্ত ঝরিয়ে দল গড়েছিল তারাই এখন ব্রাত্য। এটাই তৃণমূলের চরিত্র। এরা মানুষের জ্ন্য কাজ করতে সময় পায় না শুধু গোষ্ঠী কোন্দলেই ব্যস্ত। ইতিমধ্যে নন্দীগ্রামে সবকটি অঞ্চলে বিষুব্ধ গোষ্ঠী নির্দলে মনোননয়ন দিয়েছে শুনছি। সামনে ভোটে ওরা হারিয়ে যাবে”।