দিঘা : আপাত দৃষ্টিতে আর পাঁচটা দিনের মতোই স্বাভাবিক ছন্দে রয়েছে দিঘা। তবে ওল্ড দিঘা ছাড়িয়ে নিউ দিঘার দিকে কয়েক হাত এগোলেই বদলে যাবে চিত্রটা। দিঘা থানা পেরিয়ে গেলেই ১১৬বি জাতীয় সড়কের দুই পাশে নজরে পড়বে ভারী ভারী বাঁশ-কাঠের শক্তপোক্ত (Digha) ব্যারিকেড। জগন্নাথ মন্দিরের দিকে আরও একটু এগিয়ে গেলেই দেখতে পাবেন পুলিশে পুলিশে রীতিমতো ছয়লাপ গোটা চত্বর। চারিদিকে চরম ব্যস্ততার ছবি। উপলক্ষ্য ‘দিঘা জগন্নাথ মন্দিরের রথযাত্রা’।
শুরু থেকেই নানাবিধ বিতর্কে জড়িয়েছে দিঘার জগন্নাথ মন্দির। একদিকে রাজ্য সরকারের কোষাগারের অর্থে জগন্নাথ মন্দিরের নির্মাণ কাজ থেকে শুরু করে ‘জগন্নাথ ধাম’ নামকরণ করা, কর্মী নিয়োগ থেকে সাম্প্রতিক রাজ্যবাসীর বাড়ি বাড়ি বিলি করা জগন্নাথ দেবের প্রসাদ তৈরি ঘিরে নানাবিধ বিতর্ক উস্কে দিয়েছে রাজ্যের বিরোধী রাজনৈতিক দলগুলি। তবে সাধারণ মানুষ এসবের পরোয়া করেন না। শিল্পের অসামান্য নিদর্শন চাক্ষুষ দেখার সুযোগ হাতছাড়া করতে নারাজ আম জনতা। মনে একরাশ ভক্তি নিয়েই তাই প্রতিদিন জগন্নাথ মন্দিরে প্রতিদিন ছুটে চলেছেন লক্ষাধিক পূণ্যার্থী।
এমন পরিস্থিতিতে দিঘার জগন্নাথ দেবের রথযাত্রা যে একটা অনন্য ইতিহাস গড়তে চলেছে তা নিয়ে সন্দেহের কোনও অবকাশ নেই। আর মাত্র দুটো দিনের অপেক্ষা। তার পরেই শুক্রবার প্রথমবারের জন্য গড়াবে দিঘার জগন্নাথ দেবের রথযাত্রা। যার প্রস্তুতি খতিয়ে দেখতে বুধবার বিকেল থেকেই দিঘায় এসে পৌঁছাবেন মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দোপাধ্যায়।
আর সেই কারনেই বুধবার সকাল থেকেই জোরদার সুরক্ষা বলয়ে মুড়ে ফেলা হয়েছে দিঘার বিস্তীর্ণ এলাকা। রথযাত্রার শেষ মুহুর্তের প্রস্তুতি সারতে ওল্ড দিঘার রাস্তায় যানচলাচলও নিয়ন্ত্রণ করা হচ্ছে। দিঘার জগন্নাথ মন্দির সূত্রে জানানো হয়েছে, রথযাত্রার প্রস্তুতির পাশাপাশি মন্দিরের আশেপাশের বিভিন্ন অংশে চলছে শেষ মুহুর্তের কাজ।
যার জন্য গত কয়েকদিন যাবৎ মন্দিরের ৬নং গেটে সাধারণের প্রবেশ বন্ধ রাখা হয়েছে। এছাড়াও মন্দিরের সামনের চৈতন্যদ্বার ও মাসীবাড়ি যাওয়ার রাস্তার মূল গেটের কাজও যুদ্ধকালীন পরিস্থিতিতে শেষ করা হয়েছে। সেই সঙ্গে দিঘা জুড়ে আলোকমালায় সাজিয়ে তোলার কাজও প্রায় শেষ পর্যায়ে রয়েছে বলে জগন্নাথ মন্দির কর্তৃপক্ষের তরফে জানানো হয়েছে।
কেমন প্রস্তুতি চলছে দিঘায়, দেখে নিন এক ঝলকে –
এদিন দিঘায় গিয়ে দেখা গেল ওল্ড দিঘায় জগন্নাথের মাসী বাড়ির কাছ থেকে নিউ দিঘা পর্যন্ত ১১৬ বি জাতীয় সড়কের দুই দিকের ফুটপাথ বর বড় কাঠের বল্লি দিয়ে ঘিরে দেওয়া হয়েছে। রথ টানার সময় যাতে অতিরিক্ত ভীড় নিয়ন্ত্রণ করা যায় তার জন্যই এমন বন্দোবস্ত বলে জানিয়েছেন দিঘা জগন্নাথ মন্দিরের দায়িত্বপ্রাপ্ত রাধারমন দাস। তিনি জানান, “আমরা আশা করছি ২ লক্ষেরও বেশী মানুষ রথযাত্রায় সামিল হবেন। তাই তাঁদের সুরক্ষার কথা মাথায় রেখেই যাবতীয় বন্দোবস্ত করা হচ্ছে”।
রাধারমন আরও জানান, “আজ দুপুর নাগাদ মুখ্যমন্ত্রীর দিঘায় পৌঁছানোর কথা রয়েছে। এরপর বিকেল সাড়ে ৪টে নাগাদ তিনি জগন্নাথ মন্দির দর্শনে আসবেন। তিনি নিজে উপস্থিত থেকে রথযাত্রার যাবতীয় প্রস্তুতি খতিয়ে দেখবেন”। রাধারমন জানিয়েছেন, “স্নান যাত্রা শেষ করে জগন্নাথ দেব এখন লোকচক্ষুর অন্তরালে বিশ্রামে রয়েছেন। তবে তাঁর ভোগ দর্শন নিয়মিত চলছে। এরপর আগামীকাল বৃহস্পতিবার সকালে তিনি অন্তরাল কাটিয়ে জনসমক্ষে আসবেন। এবং তারপর নির্দিষ্ট উপাচার মেনে তাঁকে রথে তোলা হবে। শুক্রবার বিকেলে তিনি মাসীর বাড়ি যাবেন”।