নিউজবাংলা ডেস্ক : পুলিশের বিরুদ্ধে তোলাবাজির অভিযোগ তুলে রাজ্য জুড়ে পোল্ট্রি মুরগি সরবরাহ বন্ধ করার সিদ্ধান্ত নিল ওয়েষ্ট বেঙ্গল পোল্ট্রি ট্রেডার্স অ্যাসোসিয়েশান। সোমবার পূর্ব মেদিনীপুরের পাঁশকুড়ায় সংগঠনের বৈঠকের পর (Bengal Police) এই সিদ্ধান্তের কথা জানিয়ে দেওয়া হয়েছে। সংগঠনের অভিযোগ, গভীর রাতে পোল্ট্রির গাড়ি থামিয়ে দেদার তোলা আদায় করছে পুলিশ। প্রতিবাদ করতেই জুটছে লাঞ্ছনা। এমন ঘটনার বিব্রত পোল্ট্রি ট্রেডার্স অ্যাসোসিয়েশান অবশেষে আগামী বৃহস্পতিবার মধ্যরাত থেকে রাজ্য জুড়ে পোল্ট্রি মুরগি সরবরাহ বন্ধের সিদ্ধান্ত জানিয়েছে।
সংগঠন সূত্রে খবর, বাজারের চাহিদা মেটাতে প্রতিদিন বিভিন্ন ফার্ম থেকে গভীর রাতে পোল্ট্রি মুরগী নিয়ে রাজ্যজুড়ে দোকানগুলিতে সরবরাহ করা হয়। কিন্তু রাতের সড়কে পুলিশের অমানবিক জুলুমবাজি রীতিমতো সংকটে ফেলেছে পোল্ট্রি সরবরাহকারীদের। দিন কয়েক আগে পশ্চিম মেদিনীপুরের বেলদা থানার পুলিশকে দাবী মতো তোলা না দেওয়ায় পোল্ট্রি মুরগী বহনকারী গাড়ির চালকের ওপর নারকীয় হামলা হয়েছে বলে অভিযোগ। পুলিশের মারে মাথায় চোট পেয়ে ওই গাড়ি চালক বেলদা হাসপাতালে চিকিৎসাধীন।
এই ঘটনার জেরেই এবার ধৈর্যের বাঁধ ভেঙেছে পোল্ট্রি সরবরাহকারীদের। পুলিশের জুলুমের প্রতিবাদে আগামী বৃহস্পতিবার মধ্যরাত থেকে রাজ্য জুড়ে অনির্দিষ্ট সময়ের জন্য পোল্ট্রি সরবরাহ বন্ধ রাখার সিদ্ধান্ত নিয়েছে সংগঠনের কার্যকর্তারা। ওয়েষ্ট বেঙ্গল পোল্ট্রি ট্রেডার্স অ্যাসোসিয়েশানের চেয়ারম্যান সন্দীপ দাস জানান, “রাজ্যজুড়ে রাতের রাস্তার পুলিশের তোলাবাজি কিছুদিনের জন্য বন্ধ হয়ে গিয়েছিল। কিন্তু গত এক দেড় বছর ধরে তা আবারও মাথা চাড়া দিয়ে উঠেছে। রাতের রাস্তায় পোল্ট্রি বোঝাই গাড়ি নিয়ে গেলেই তাঁদের বৈধ কাগজ থাকার পরেও চড়া হারে টাকা দাবী করা হচ্ছে। এর প্রতিবাদ করলেই জুটছে লাঞ্ছনা, মিথ্যে মামলার হুমকি”।
কিভাবে পুলিশের জুলুম চলছে তার উদাহরণ তুলে ধরে সন্দীপ জানান, “গত ১১ জুলাই রাত্রি প্রায় সাড়ে তিনটে নাগাদ পোল্ট্রি বোঝাই গাড়ি চালিয়ে যাচ্ছিলেন শালবনির বাসিন্দা সমীর ঘোষ। পথে বেলদা থানার পুলিশ তাঁর গাড়ি আটকায়। সমস্ত বৈধ কাগজ দেখার পরেও তাঁর কাছে মোটা টাকা চাওয়া হয়। সেই টাকা দিতে না চাইলে পুলিশ আধিকারীকরা হাতে থাকা টর্চ দিয়ে মেরে চালকের মাথা ফাটিয়ে দেয়”। সন্দীপের দাবী, “চালক ৫০টাকা দিতে চেয়েছিল। তা ওই অফিসারের প্রেস্টিজ ইস্যু হয়ে গিয়েছিল। সেই রাগেই হামলা চালানো হয়েছে”।
সন্দীপের অভিযোগ, “খবর পেয়েই আমরা দ্রুত ঘটনাস্থলে গিয়ে দেখি রক্তাক্ত অবস্থায় চালক রাস্তার পাশে পড়ে রয়েছে। তার গাড়িটিকে তখনও আটক করে রাখা হয়েছে। আমরা দ্রুত সমীরকে উদ্ধার করে বেলদা হাসপাতালে চিকিৎসার জন্য নিয়ে যাই। বর্তমানে গাড়ি চালক ওই হাসপাতালেই চিকিৎসাধীন”। সন্দীপের দাবী, “এরপরেই গোটা ঘটনা ইমেল আকারে পুলিশ ও প্রশাসনের একাধিক জায়গায় জানানো হয়েছে। কিন্তু তারপরেও পুলিশের জুলুম বাজি বন্ধের কোনও নামগন্ধ নেই”।
তিনি জানান, “রাজ্যজুড়ে পুলিশের এহেন তোলা আদায়ের বিরুদ্ধে রুখে দাঁড়াতেই আজ সোমবার পূর্ব মেদিনীপুরের পাঁশকুড়ায় সংগঠনের কার্যকর্তাদের একটি গুরুত্বপূর্ণ বৈঠক হয়েছে। সেখানেই সিদ্ধান্ত হয়েছে আগামী ১৮ জুলাই বৃহস্পতিবার মধ্যরাত থেকেই রাজ্যজুড়ে পোল্ট্রি সরবরাহ অনির্দিষ্টকালের জন্য বন্ধ রাখা হচ্ছে”। রাজ্য সরকার যতক্ষণ পর্যন্ত না পুলিশের তোলা আদায়ের বিরুদ্ধে কঠোর ব্যবস্থা নেবে ততক্ষণ পর্যন্ত রাজ্য জুড়ে পোল্ট্রি মুরগি সরববাহ বন্ধের সিদ্ধান্ত বলবৎ থাকবে বলে সংগঠনের নেতৃত্বরা জানিয়ে দিয়েছেন।