দীপক প্রধান, হলদিয়া : মঙ্গলবার ভয়াবহ অগ্নিকান্ডের ঘটনা ঘটল হলদিয়া রিফাইনারীর একটি টাওয়ারে। এই অগ্নিকান্ডের জেরে ঘটনাস্থলে কর্মরত প্রায় বহু শ্রমিক গুরুতর জখম হন। এদিন বেলা প্রায় ২টো ৫০টা নাগাদ এই অগ্নিকান্ডের ঘটনা বলে প্রাথমিক ভাবে জানা গেছে।
আগুনে ঝলসে যাওয়া কর্মীদের দ্রুত উদ্ধার করে হলদিয়ার টাউনশীপের ইন্ডিয়ান অয়েলের হাসপাতালে নিয়ে যাওয়া হয়। সেখানেই ৩ জনের মৃত্যু হয়েছে বলে রিফাইনারী সূত্রে জানা গেছে। সেই সঙ্গে প্রায় ৪৪ জনেরও বেশী আহত হয়েছেন। তবে আহত ও মৃত্যুর সংখ্যা আরও বাড়তে পারেই বলেই মনে করছেন কর্মীদের একাংশ।
ঘটনাস্থলে থাকা কর্মীরা জানাচ্ছেন, এদিন বেলার দিকে কারখানায় মকড্রিল ছিল। অন্যদিকে অত্যন্ত স্পর্শকাতর ওই টাওয়ার সংলগ্ন এলাকায় শাটডাউনের কাজও চলছিল। মকড্রিল শেষ হওয়ার পর বেলা ২টোর কাছাকাছি সময় বিকট শব্দে আগুন ধরে যায়। তবে এর সঙ্গে মকড্রিলের কোনও যোগ ছিল না বলেই দাবী কর্মীদের। অত্যন্ত দাহ্য পদার্থে পরিপূর্ণ টাওয়ারে আগুন লাগতেই তা মুহূর্তের মধ্যে ছড়িয়ে পড়ে। জ্বলন্ত তেল ছিটকে পড়ে ঘটনাস্থলেই বহু শ্রমিক ছিটকে পড়েন।
এরপরেই কারখানার দমকলের কর্মীরা দ্রুত উদ্ধার কাজে ঝাঁপিয়ে পড়ে। তবে বিপজ্জনক জায়গা হওয়ায় সেখানে উদ্ধার কাজ ব্যাহত হয়। সন্ধ্যে পর্যন্ত একে একে আহতদের উদ্ধার করে হলদিয়ার টাউনশীপে রিফাইনারীর হাসপাতালে নিয়ে যাওয়া হয়। পরে অত্যন্ত গুরুতর আহতদের কলকাতায় চিকিৎসার জন্য পাঠানো হয়েছে।
২০২০ সালের ২০ সেপ্টেম্বর এমনই এক ভয়াবহ অগ্নিকাণ্ডের ঘটনা ঘটেছিল হলদিয়া পেট্রোকেমের ন্যাপথা ক্র্যাকার ইউনিটে। সে দিনের অগ্নিকাণ্ডে একসঙ্গে ১৩ জন কর্মীর মৃত্যু হয়। কয়েক জনকে উদ্ধার করে হাসপাতালে নিয়ে যাওয়ার পরে হাসপাতালে আরও তিন জন প্রাণ হারান। মঙ্গলবারের ঘটনা সে দিনের ভয়াবহ অভিজ্ঞতার স্মৃতিকেই উসকে দিয়েছে বলেই জানাচ্ছে কারখানা-শ্রমিকদের একাংশ।
হলদিয়া শিল্পাঞ্চলের তৃণমূলের অবজারভার সঞ্জয় ব্যানার্জী জানিয়েছেন, “এখন পর্যন্ত এই ঘটনায় ৪৪ জন জখম হয়েছেন বলে জানতে পারছি। এছাড়াও ৩ জনের মৃত্যু হয়েছে। এঁদের মধ্যে ৭ জন বাদ দিয়ে বাকীদের কলকাতায় স্থানান্তরিত করা হচ্ছে। ঘটনার খবর পেয়েই জেলা শাসক, পুলিশ সুপার সহ প্রশাসনিক আধিকারীকরাও দ্রুত ঘটনাস্থলে ছুটে এসেছেন। যারা আহত হয়েছেন তাঁদের দ্রুত আরোগ্য কামনা করছি। এই ঘটনা অত্যন্ত দুর্ভাগ্যজনক”।
হলদিয়া পুরসভার চেয়ারম্যান ইন কাউন্সিল আজগর আলি জানান, “এমন একটি বিপজ্জনক জায়গায় আরও বেশী সতর্কতা বজায় রেখে কাজ করা উচিত ছিল। গোটা ঘটনায় কারখানার গাফিলতি ছিল কিনা তা খতিয়ে দেখা উচিত। হলদিয়া রিফাইনারীতে এতবড় দুর্ঘটনা আগে কখনও ঘটেনি। এগগুলো মানুষ একসঙ্গে জখম হয়েছেন যা অত্যন্ত দুর্ভাগ্যজোঁক”।
ইন্ডিয়ান অয়েল কর্পোরেশান এর হলদিয়া রিফাইনারীর তরফে প্রেস বিজ্ঞপ্তি দিয়ে জানানো হয়েছে, “হলদিয়া শোধনাগার বিভিন্ন প্রধান ইউনিট রক্ষণাবেক্ষণের শাটডাউন কাজ চলার সময় MSQ ইউনিটে বেলা প্রায় ২.৫০টা নাগাদ আজ একটি অগ্নিকান্ডের ঘটনা ঘটেছে। প্রাথমিক কারণটি একটি ফ্ল্যাশ ফায়ার বলে মনে হচ্ছে যার ফলে ৪৪ জন পুড়ে আহত হয়েছে এবং ৩ জন দুর্ভাগ্যবশত ভাবে মারা গেছে। তাৎক্ষণিকভাবে আগুন নেভানো হয়েছে এবং পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে রয়েছে”।
রিফাইনারীর তরফে আরও জানানো হয়েছে, “আহতদের প্রাথমিক চিকিৎসা কেন্দ্রে প্রাথমিক চিকিৎসার পর রিফাইনারীর হাসপাতালে স্থানান্তরিত করা হয়েছে। এরপর আহতদের দ্রুত সরিয়ে নিয়ে জেলা প্রশাসনের সহযোগিতায় কামনা করা হয়েছে। উচ্চতর চিকিৎসার জন্য কলকাতায় স্থানান্তর করা হয়েছে। জন্য জেলা প্রশাসনের সহায়তায় একটি সবুজ করিডোর চালু করা হয়েছে। ঘটনার কারণ খতিয়ে দেখছে কর্তৃপক্ষ।