কোলাঘাট : একদিকে বাবার অসুস্থতার জেরে পরিবারের গুরুদায়িত্ব কাঁধে তুলে নিতে হয়েছে, সেই সঙ্গে জীবনের প্রথম বড় পরীক্ষা। সব দিক সামলে টোটো চালিয়েই নিজের পরীক্ষা কেন্দ্রে যাচ্ছেন কোলাঘাট গার্লস স্কুলের মাধ্যমিকের ছাত্রী দেবশ্রী খাঁড়া। বাড়ি থেকে প্রতিদিন কেটিপিপি হাইস্কুলে মাধ্যমিক পরীক্ষা কেন্দ্রে টোটো চালিয়ে দেবশ্রীর ছুটে বেড়ানোর ঘটনা নিয়ে রীতিমতো আলোড়ন পড়ে গিয়েছে এলাকায়।
দেবশ্রীর পরিবার সুত্রে জানা গেছে, বছর কয়েক আগে দুর্ঘটনায় পায়ে জোরাল আঘাত পান বাবা সনাতন খাঁড়া। তারপর থেকে কাজকর্ম করতে সমস্যা হয়। চরম আর্থিক দূরবস্থার জেরে পরিবারের হাল ধরে একরত্তি দেবশ্রী। বাবার টোটো নিয়ে কোলাঘাট বাজারে যাত্রী পরিবহন শুরু করে সে। তবে সেই সঙ্গেই চলতে থাকে পড়াশোনা। এবার জীবনের বড় পরীক্ষায় বসেছে মেয়েটি। বাবা মাকে নিয়ে নিজেই টোটো চালিয়ে তাই পরীক্ষা কেন্দ্রে যাচ্ছে এই সাহসী কিশোরী।
দেবশ্রীর বাবা সনাতন জানান, “আমি এক জায়গায় কাজ করি। এতে সংসার চলে না। পরিবারের দায়িত্ব নিয়ে মেয়ে আমার টোটো চালায়। আমরা থাকি কোলাঘাট বাজারের কাছে। সেখান থেকে সেন্টারে যেতে অনেকটা গাড়িভাড়া লেগে যাবে। কিন্তু মেয়ের যাতায়াতের জন্য টোটো বা গাড়ি ভাড়া করার ক্ষমতা আমার নেই। তখনই মেয়ে জানাল, বাবা আমি নিজেই টোটো চালিয়ে সেন্টারে চলে যাব”।
তিনি জানান, “এতে একদিকে খরচও বাঁচবে আবার সময়ে সেন্টারে পৌঁছাতেও সমস্যা হবে না। আজ বলে কয়ে ছুটি নিয়ে এসেছি মেয়ের সঙ্গে। মেয়ে বলেছে, আমার টোটো চালালেও কোনও চাপ পড়বে না”। তিনি আরও জানান, “মেয়ের পরীক্ষা বেশ ভালই হচ্ছে। আমরা ওর ভালো রেজাল্টের বিষয়ে আশাবাদী”।
দেবশ্রী জানান, “একটা দুর্ঘটনার পর বাবার পায়ে প্লেট লাগানো হয়েছে। তারপর থেকেই বাবাকে সাহায্য করতে আমি টোটো চালানো শিখেছি। আমি পরিবারের পাশে দাঁড়াতে টোটো চালাই। এখন পরীক্ষা কেন্দ্রে আসার জন্য নিজেই টোটো চালিয়ে আসছি। তবে অনেকেই আমার দিকে দেখছে। এতে আমার কোনও সমস্যা নেই। এভাবেই বাবা মায়ের সংসারে সাহায্যের হাত বাড়িয়ে দিতে চাই। তবে টোটো চালালেও আমার পরীক্ষায় কোনও সমস্যা হয়নি”।