নিউজবাংলা ডেস্ক : ঝকঝকে তরতাজা চেহারা। মুখে সর্বদা লেগে আছে আলতো হাঁসি। কথাবার্তায় অত্যন্ত চৌখশ। কখনও বৃদ্ধা সব্জি ব্যবসায়ীর পায়ে হাত দিয়ে আশীর্বাদ চেয়ে নিচ্ছেন, কখনও আবার পথ চলতি মানুষের সঙ্গে সেরে নিচ্ছেন করমর্দন। তিনি তমলুক লোকসভা কেন্দ্রের সিপিএম প্রার্থী সায়ন ব্যানার্জী। রীতিমতো সেলিব্রিটির তকমা পাওয়া এই আইনজীবিকে হাতের কাছে পেয়ে সেলফি তুলতে ভুলছেন না বাম কর্মীরা। আর সায়নও সমর্থকদের আবদার মেটাচ্ছেন হাঁসিমুখেই।
এবারের লোকসভা নির্বাচনে তমলুক কেন্দ্রে নজর কাড়ছে সিপিএমের প্রার্থী সায়ন ব্যানার্জী। যুব সমাজের কাছে অত্যন্ত জনপ্রিয় তরুণ এই আইনজীবির সাবলিল ব্যবহার মন জয় করছে গ্রাম থেকে শহরের মানুষেরও। আর তাঁকে কেন্দ্র করেই নতুন করে ঘুরে দাঁড়ানোর স্বপ্নে মশগুল জেলার বাম মনোভাবাপন্ন মানুষেরা।
একটা সময় বাম দুর্গ হিসেবে খ্যাত ছিল পূর্ব মেদিনীপুর। ত্রিস্তর পঞ্চায়েত থেকে বিধানসভা ও লোকসভা নির্বাচনে বামেদের দাপট ছিল চোখে পড়ার মতো। কিন্তু নন্দীগ্রামের জমি আন্দোলনের পর রাজ্য জুড়ে ওঠা পরিবর্তনের (Loksabha Election 2024) ঝড়ে সেই বামেদের অস্তিত্ব ক্রমেই ফিকে হয়েছে। পরিবর্তে পূর্ব মেদিনীপুরে বিরোধীদলের তকমা ছিনিয়ে নিয়েছে বিজেপি। শেষবার ২০১৯ লোকসভা নির্বাচনে বামেরা চলে গিয়েছে তৃতীয় স্থানে।
সায়ন বিলক্ষণ জানেন, তমলুক কেন্দ্রে বামেদের লড়াই ততটা সহজ হবে না। গত কয়েক বছরে বহু ঝড় ঝাপটার মধ্যে দিয়ে যেতে হয়েছে এই দলটিকে। জেলা থেকে গ্রামস্তরের সর্বত্র বামেদের সাংগঠনিক ভিত এখন যথেষ্ট নড়বড়ে। তারওপর এক সময়ের তমলুকের দাপুটে সিপিএম নেতা লক্ষ্মণ শেঠ দল থেকে বিতাড়িত হওয়ার পর বিজেপিতে যোগ দিয়েছিলেন। তাঁর হাত ধরে বিজেপিতে চলে গিয়েছেন বহু সিপিএম নেতা কর্মী।
এখন বিজেপির শক্তি অনেকাংশে সেই প্রাক্তন বাম নেতা কর্মীদের হাতেই। তাই সায়নের লড়াই শুধু তৃণমূল বা বিজেপির বিরুদ্ধে নয়, নিজের দলের প্রাক্তনীদের সঙ্গেও তাঁকে লড়াই করতে হচ্ছে। এমন একটা পরিস্থিতিতে হতাশায় ডুবে যাওয়া বাম নেতা কর্মীদের কাছে নতুন করে ভরসার পাত্র হয়ে ওঠার কঠিন লড়াই সায়নের সামনে। সেই সঙ্গে পুরানোদের দলে ফিরিয়ে আনাটাও সায়নের কাছে মস্তবড় চ্যালেঞ্জের।
প্রথমবার তমলুক লোকসভা কেন্দ্রে প্রার্থী হিসেবে লড়াইয়ে নামলেও হাবেভাবে সায়ন বুঝিয়ে দিয়েছেন তিনি হাল ছেড়ে দেওয়ার পাত্র নন। ভোট ঘোষণার পর থেকেই প্রতিদিন সায়নের নিরবচ্ছিন্ন জনসংযোগ নতুন করে অক্সিজেন যোগাচ্ছে বাম কর্মী সমর্থকদের মনে। মাত্র কয়েক দিনেই সায়ন বুঝিয়ে দিয়েছেন, লড়াইয়ের মাঠে তিনি শুধু নেমেই ক্ষান্ত থাকছেন না। একজন দক্ষ বাম কর্মী হিসেবে শূন্য থেকেই নিজের লড়াইটা শুরু করেছেন তিনি। গত প্রায় মাসখানেক যাবৎ সায়নের কর্মসূচীর দিকে নজর রাখলে স্পষ্ট দেখা যাবে, তিনি অত্যন্ত সচেতন ভাবেই প্রচারের অভিমুখ নির্বাচন করছেন।
তাঁর লক্ষ্য নির্বাচনের আগেই তমলুক লোকসভা কেন্দ্রের অন্তর্গত সমস্ত গ্রাম থেকে শহরাঞ্চলে মানুষের কাছে পৌঁছে যাওয়া। বিশেষতঃ এক সময়ের বাম অধ্যুষিত এলাকাগুলিকেই সবথেকে বেশী প্রাধান্য দিচ্ছেন তিনি। একটা দিনও তিনি নষ্ট করছেন না। নিরবচ্ছিন্ন ভাবে ছুটে বেড়াচ্ছেন তমলুকের একপ্রান্ত থেকে অপরপ্রান্তে। এর জন্য বড় জনসভা নয়, সায়ন বেছে নিয়েছেন জনসংযোগকেই। প্রতিনিয়ত পথে ঘাটে সাধারণ মানুষের হাতের নাগালে চলে যাচ্ছেন তিনি। অল্প দিনেই তমলুকের ঘরের মানুষ হয়ে উঠেছেন সায়ন।