মহিষাদল : টহলরত অবস্থায় মর্মান্তিক দুর্ঘটনায় প্রাণ হারিয়েছেন মহিষাদল থানার সাব ইন্সপেক্টর জয়ন্ত ঘোষাল। মঙ্গলবার গভীর রাতে ১১৬নং জাতীয় সড়কে (Mahishadal) একটি বেপরোয়া ট্রাকের ধাক্কায় মৃত্যু হয়েছে সাব ইন্সপেক্টর সহ আরও এক পুলিশ কর্মীর। জেলা পুলিশ সূত্রে খবর, আজ বুধবার মৃতদেহ ময়না তদন্তের পর গান স্যালুট দিয়ে সম্মান জানানো হবে। তারপর দেহগুলি তাঁদের পরিবারের হাতে তুলে দেওয়া হবে বলে বলে জানা গেছে।
মহিষাদল থানা সূত্রে জানা গেছে, জয়ন্ত ঘোষাল একজন অত্যন্ত দায়িত্ববান পুলিশ অফিসার হিসেবে পরিচিত ছিলেন। সময়ানুবর্তিতা ছিল তাঁর অপরিসীম। থানার এক পুলিশ কর্মী জানান, যে কোনও জায়গায় ডিউটি থাকলে তিনি সময়ের আগেই সেখানে পৌঁছে যেতেন। অত্যন্ত ভদ্র স্বভাবের পুলিশ আধিকারীক ছিলেন জয়ন্তবাবু। এর আগে নন্দকুমার থানায় কর্মরত ছিলেন তিনি। সেখানেও মানবিক পুলিশ অফিসার হিসেবেই তাঁর পরিচিতি ছিল বলে জানিয়েছেন রক্তদান আন্দোলনের কর্মী সন্দীপ চক্রবর্তী।
সন্দীপ জানান, “জনপ্রতিনিধি থেকে সমাজকর্মী সবার সঙ্গেই সখ্যতা রেখে চলতেন জয়ন্তবাবু। একজন পুলিশ কর্মী হিসেবে সাধারণ ভাবে যে ছবি ভেসে উঠত জয়ন্ত ছিলেন তার থেকে অনেকটাই আলাদা। থানায় আসা অনেক ব্যক্তিকেই তিনি আইনী ভাবে পরামর্শ ও সহযোগিতা করেছেন” বলে জানিয়েছেন সন্দীপ।
পুলিশ সূত্রে খবর, মঙ্গলবার নাইট ডিউটির সময়সারনি মেনে রাত্রি ১০টায় সময় টহলদারির কাজে যোগ দিয়েছিলেন জয়ন্ত। মহিষাদল থেকে কাপসএড়িয়া ঘুরে তাঁদের গাড়িটি রাত্রি প্রায় ১টা নাগাদ পৌঁছেছিল ১১৬নং জাতীয় সড়কে গাড়ুঘাটা বাস স্ট্যান্ডের কাছে। সেখানেই রাস্তার পাশে অপেক্ষাকৃত চওড়া জায়গায় গাড়ি পার্কিং রেখে চালক কয়েক মুহূর্তের জন্য নেমে গিয়েছিলেন। সেই সময় এক কনস্টেবল ও একজন এনভিএফ কর্মীকে সঙ্গে নিয়ে গাড়িতেি অপেক্ষা করছিলেন জয়ন্ত।
আর ঠিক সেই সময়ই হলদিয়া থেকে মাল বোঝাই ট্রাকটি প্রচন্ড গতিতে এসে পুলিশের গাড়ির পেছনে ধাক্কা মেরে বেশ খানিকটা ঠেলে নিয়ে যায়। ট্রাকের ধাক্কায় পুলিশের গাড়িটি সটান গিয়ে পড়ে রাস্তার পাশের পুকুরে। আর সবটাই ঘটে যায় গাড়ি চালকের চোখের সামনেই। পুলিশ সূত্রে জানা গেছে, জয়ন্ত ঘোষাল হাওড়ার বাগনান থানা এলাকায় বসবাস করতেন। নিজের সামাজিক মাধ্যমের পাতায় তিনি নিজের পরিবার ও ছেলের সঙ্গে প্রায়শই ছবি ভাগ করে নিতেন বন্ধুদের সঙ্গে।

গত বছর কালীপুজোর সময় থানায় আয়োজিত সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠানে অত্যন্ত সক্রিয় ভূমিকায় ছিলেন জয়ন্ত। তাঁর হাত থেকে স্মারক উপহার নিয়েছিলেন ওই অনুষ্ঠানে অংশ নেওয়া স্বর্ণেন্দু শেখর দাস। সেই মুহূর্তের স্মৃতি রোমন্থন করতে গিয়ে অত্যন্ত মর্মাহত স্বর্ণেন্দু জানান, “মঞ্চের ছবিগুলো এখনও স্মৃতিতে জ্বলজ্বল করছে। যিনি আমাদের মঙ্গল কামনায় হাতে ভগবানের মূর্তি ও স্মারক তুলে দিয়েছিলেন আজ তিনিই অকালে চলে যাবেন তা মন থেকে মেনে নিতে কষ্ট হচ্ছে”।