মহিষাদল, পূর্ব মেদিনীপুর : রাত্রি তখন প্রায় ১২টা বেজে ৪০ মিনিট। বৃষ্টি বাদলার মাঝেও ভ্যাপসা গরমে গৃহকর্তা সবে মাত্র বিছানা নিয়েছেন। বাড়ির অন্য সদস্যরাও ঘুমে আড়ষ্ট। হঠাৎই একটি হাত জানালা গলে চলে এল ভেতরে। চার্জে রাখা দামী হেডফোন নিমেষে বেরিয়ে গেল। এরপর একটি মোবাইলের টর্চ জ্বেলে পাশে থাকা মোবাইল সহ ল্যাপটপ, দামী সামগ্রী তোলার (Mobile Thief) তোড়জোড় শুরু হয়েছে। আধো ঘুমে বিষয়টা প্রথমে আঁচ করতে পারেননি গৃহকর্তা। সম্বিৎ ফিরে পেতেই চোর চোর চিৎকার। সঙ্গে সঙ্গেই দ্বোতলা থেকে নীচে লাফিয়ে পড়ল ষন্ডা মার্কা এক দুষ্কৃতী। ততক্ষণে আশেপাশের লোকেরাও ছুটে এলেন টর্চ জ্বেলে। সবার তাড়া খেয়ে অমনি সবার চোখের সামনে থেকে নিমেষে অন্ধকারে গা ঢাকা দিল চোর। বছর কয়েক আগেও এই দ্বোতলার জানালা থেকে একই কায়দায় মোবাইল চুরি গিয়েছিল।
ঘটনাস্থল হলদিয়া মেছেদা রাজ্য সড়কের ঠিক পাশে মহিষাদলের জগন্নাথপুর গ্রামে। ভারত সেবাশ্রম সংঘের উল্টো দিকে। মাঝ বরাবর গিয়েছে হলদিয়া মেছেদা রাজ্য সড়ক। রবিবার মাঝ রাতের এই ঘটনায় রীতিমতো আতংক ছড়িয়েছে এলাকায়। বাড়ির জানালা খুলে ঘুমানো, মোবাইল ও দামী আসবাবপত্র সুরক্ষিত রাখা, সর্বোপরি বাড়ির মহিলাদের সম্ভ্রম বজায় রাখাও দুষ্কর হয়ে উঠেছে এই চোরেদের দাপটে। রাস্তায় ঝকঝকে স্ট্রিট লাইট, সামান্য দূরে তেরপেখ্যা মোড়ে একাধিক সিভিক ভলেন্টিয়ারের পাহারাদারী এতেও কুছ পরোয়া নেই। গত কয়েক বছর পুলিশের ভয়ে গা ঢাকা দিলেও আবারও নতুন করে মাথা চাড়া দিয়েছে মহিষাদলের এই মোবাইল চোরেদের গ্যাং।
ঘটনার বিবরণ দিতে হয়ে প্রত্যক্ষদর্শীরা জানিয়েছেন, ওই দুষ্কৃতী ৩৮ থেকে ৪২ বছরের ষন্ডা মার্কা চেহারার। পরনে ছিল লুঙ্গি, খালি গা। ‘চোর চোর’ চিৎকার শুরু হতেই দ্বোতলার জানালা থেকে লাফ দিয়ে এক্কেবারে নীচে এসে পড়ে। এরপরেই একাধিক পাঁচিল টপকে জগন্নাথপুর গ্রামের ফাঁকা মাঠের দিকে ছুটে যায় দুষ্কৃতী। এর আগে হলদিয়া মেছেদা বাস রাস্তা হয়ে ওই দুষ্কৃতীকে অভিজিৎ সামন্তর বাড়ির দিকে আসতে দেখেছেন বলে আরও এক প্রত্যক্ষদর্শী জানিয়েছে। তবে এলাকার একাধিক বাসিন্দাদের তাড়া খেয়ে শেষ পর্যন্ত এলাকা ছেড়ে পালিয়েছে ওই দুষ্কৃতী।
এই ঘটনার খবর প্রকাশ্যে আসার পরেই জানা গেছে গত প্রায় আড়াই সপ্তাহ আগে একই কায়দায় মহিষাদলের ভক্তা নার্সিংহোমের গলিতে একটি বাড়ি থেকে মোবাইল চুরি গিয়েছে। তেরপেখ্যা মোড় সংলগ্ন শনি মন্দিরের পেছনের একটি বাড়ির দ্বোতলা থেকেও মোবাইল চুরি গিয়েছে। তবে অধিকাংশ ক্ষেত্রেই পুলিশে কোনও অভিযোগ দায়ের হয়নি বলেই খবর। ভারত সেবাশ্রমের উল্টো দিকে জগন্নাথপুর গ্রামের আর এক বাসিন্দা জানান, আগেও একাধিকবার এই এলাকায় চোরেদের দাপট বেড়ে গিয়েছিল। তবে মাঝে কিছুটা বিরতির পর আবার এই চক্রটি সক্রিয় হয়ে উঠেছে। তিনি জানান, এমন চুরির ঘটনা থানায় লিখে জানানোর অনেক ঝক্কি বলেই বিষয়টি নিয়ে উচ্চবাচ্চ করা হয় না।
গোপন সূত্রে খবর, মহিষাদল থানা এলাকায় বাড়ি থেকে মোবাইল চুরির ২ থেকে ৩টি চক্র রয়েছে। প্রত্যক্ষদর্শীরা চোরের চেহারার যা বিবরণ দিয়েছেন তাতে ওই দুষ্কৃতী অল্পবয়েসী নয়। অর্থাৎ পুরানো গ্যাং সক্রিয় হয়েছে সন্দেহ নাই। বর্তমান গ্যাংটির জগন্নাথপুরের আশেপাশের এলাকাতেই ডেরা রয়েছে বলে খবর। সূত্র জানাচ্ছে, চুরি যাওয়া মোবাইলগুলি দ্রুত হাত বদলে নির্দিষ্ট দালালের মাধ্যমে অত্যন্ত কম দামে বাছাই করা মোবাইল রিপেয়ারিং দোকানে চলে যায়। সেখানে মোবাইলের আইএমইআই নম্বর বদলে সেগুলিই আবার বাজারজাত করা হচ্ছে বলে খবর।