ময়না : বড় হয়েছে ছেলে ও মেয়ে। তারপরেও পরকীয়া প্রেমের অমোঘ টান উপেক্ষা করতে পারেননি পূর্ব মেদিনীপুরের ময়নার রায়চক গ্রামের গৃহবধূ তনুশ্রী বেরা। কিন্তু পথের কাঁটা হয়ে দাঁড়ায় স্বামী তুষারকান্তি বেরা। এরপরেই গভীর রাতে স্বামীকে রীতিমতো পরিকল্পনা করেই খুন করে তনুশ্রী।
তবে পরিবারের লোকেরাই পুলিশের কাছে এই ষড়যন্ত্র ফাঁস করে দেয়। যার জেরে পুলিশের জালে ধরা পড়ে যায় তনুশ্রী ও তাঁর প্রেমিক শ্যামল বেরা (Moyna Crime)। ধৃতদের তমলুক মহকুমা আদালতে নিয়ে গেলে বিচারক ধৃতদের পুলিশ হেফাজতের নির্দেশ দিয়েছেন বলে পুলিশ সূত্রে জানা গেছে। তবে গোটা ঘটনা ঘিরে রীতিমতো আলোড়ন পড়ে গিয়েছে এলাকায়।
পুলিস জানতে পেরেছে, স্বামীকে মারার জন্য তাঁর ডালে ৩০টি ঘুমের ট্যাবলেট মিশিয়ে দিয়েছিল তনুশ্রী। এতেও স্বামীর মৃত্যু না হওয়ায় বেহুঁশ স্বামীর গোপনাঙ্গে আঘাত করে তাঁকে প্রাণে মেরে ফেলা হয়। আর এই ওষুধ সরবরাহ করেছিল প্রেমিক শ্যামল। এদিকে, তনুশ্রী গ্রেপ্তার হতেই ময়নার রায়চকের দু’টি স্বনির্ভর গোষ্ঠী বিপাকে পড়েছে। তাদের ব্যাঙ্ক ঋণের টাকা তনুশ্রীর কাছে ছিল। তনুশ্রী একটি কাস্টমার সার্ভিস পয়েন্ট (সিএসপি) চালাত। স্বনির্ভর গোষ্ঠীর টাকা নিজের ব্যবসায় খাটাত বলে জানা গিয়েছে।
জানা গিয়েছে, তুষারকান্তি বেরা টিবি রোগে ভুগছিলেন। সেই রোগ থেকে ধীরে ধীরে সুস্থ হয়ে উঠছিলেন। এদিকে বছর দু’য়েক ধরে তনুশ্রী এবং শ্যামলের সম্পর্কের কথা এলাকায় জানাজানি হয়ে যায়। রাতে শ্যামলকে বাড়িতে থাকতে দেওয়া নিয়ে স্বামী-স্ত্রীর বিবাদ মেটাতে সালিশি সভাও বসেছিল। অভিযোগ, শ্যামলকে প্রতিবেশীরা সতর্ক করার পরও স্বভাব বদলায়নি। রায়চক গ্রামের বাসিন্দা তথা রামচক পঞ্চায়েতের প্রাক্তন উপপ্রধান তপনকুমার মান্না একাধিকবার দম্পতির বিবাদ মিটিয়েছেন। তপনবাবু বলেন, এরকম একটি সম্পর্কের পরিণতি এতটা ভয়াবহ হবে সেটা কল্পনাও করতে পারিনি।
জানা গিয়েছে, রবিবার রায়চক গ্রামে তুষারকান্তি বেরার এক প্রতিবেশীর বাড়িতে অনুষ্ঠান ছিল। সেই অনুষ্ঠান উপলক্ষে খাওয়া দাওয়া ছিল। এরকম একটা দিনকে খুনের জন্য বেছে নেওয়া হয়েছিল। গত সাতদিন ধরে একটি-দু’টি করে ঘুমের ট্যাবলেট জোগাড় করা হচ্ছিল। রাতে তুষারবাবুকে ভাত, ডাল ও সব্জির তরকারি দেওয়া হয়েছিল। সেই ডালের মধ্যে একসঙ্গে ৩০টি ঘুমের ট্যাবলেট মেশানো হয়।
স্বামীকে খুন করে শ্যামলের সঙ্গে সম্পর্ক আরও এগিয়ে নিয়ে যেতে চেয়েছিল তনুশ্রী। সকালে উঠে সে কাঁদতে কাঁদতে স্বামী মারা গিয়েছে বলে প্রতিবেশীদের জানায়। ওই দম্পতির মেয়ে নার্সিং পড়ুয়া। ছেলে দশম শ্রেণিতে পড়াশোনা করে। স্বামী অসুস্থতার জেরে মারা গিয়েছে বলে নিজের সন্তানদেরও বোঝাতে সফল হয়েছিল তনুশ্রী। কিন্তু প্রতিবেশীদের সন্দেহ হওয়ায় ময়না-তদন্ত না কগর দেহ সৎকারে আপত্তি তোলেন। পুলিসের জেরার মুখে স্ত্রী খুনের কথা স্বীকার করে নেয়। পুলিস জানিয়েছে, শ্যামলও বিবাহিত। তার স্ত্রী এবং দুই সন্তান আছে। তারপরও তনুশ্রীর মোহ থেকে মুক্ত হতে পারেনি।