NewzBangla, Nandigram : এবার অযোধ্যার আদলে নন্দীগ্রামের সোনাচূড়া গ্রাম পঞ্চায়েতের গাংড়া এলাকায় রাম মন্দির নির্মাণ করতে চলেছেন (Nandigram) বিজেপি বিধায়ক শুভেন্দু অধিকারী। নিজের নামে কেনা প্রায় চার বিঘা (১.৫ একর) জমির ওপর এই মন্দিরটি তৈরি করতে চলেছেন তিনি। আগামী ৬ এপ্রিল সকাল ১০টায় রাম নবমীর দিন আনুষ্ঠানিক ভাবে এই মন্দিরের ভিত্তি প্রস্তর স্থাপন হবে বলে নন্দীগ্রামে একটি অনুষ্ঠানে এসে জানিয়েছেন শুভেন্দু।
শুভেন্দু জানান, “নন্দীগ্রামের দক্ষিণ প্রান্ত সোনাচূড়ার গাংড়ায় প্রায় ৪ বিঘা জমির ওপর রাম মন্দিরের নির্মাণ শুরু হচ্ছে। সকাল ১০টায় শিলান্যাস। তার জন্য সকাল সাড়ে ৯টার মধ্যে সবাই স্নান সেরে, কপালে তিলক কেটে পৌঁছে যাবেন”। শুভেন্দু জানান, “এখানে অযোধ্যার রাম মন্দিরের আদলে নন্দীগ্রামের এই মন্দিরটি নির্মাণ শুরু হতে চলেছে। এই অনুষ্ঠানে পৌঁছানর জন্য প্রয়োজনীয় পরিবহনের ব্যবস্থা থাকবে” বলেও জানিয়েছেন তিনি।
শুভেন্দুর মতে, “এই রাজ্যে যোগী আদিত্যনাথের মতো সরকার গড়ে তোলাই আমাদের মূল লক্ষ্য। যেখানে প্রতি মানুষের মাথায় ছাদ, প্রতি মানুষের পেটে ভাতের জোগান থাকবে”। পাশাপাশি শুভেন্দু জানিয়ে দেন, “ধর্মীয় উৎসবের জন্য মানুষের আবেগ থাকবে। তবে তা কখনওই উচ্ছৃঙ্খলতা দেখিয়ে নয়। সবাই শান্তিতে নিজ নিজ ধর্ম পালন করুন, এটাই হোক আমাদের একমাত্র লক্ষ্য”। শুভেন্দু জানান, “আগামী ২রা মে নন্দীগ্রামের বিধায়ক হিসেবে আমার ৪ বছরের মেয়াদ শেষ হচ্ছে। ওইদিন আমার এমএলএ ল্যাডের টাকার উন্নয়নের কাজের হিসেব প্রকাশ করছি। সেদিন প্রতিটি বুথ এলাকা থেকে আমার হিসেবের বইটি সবাইকে সংগ্রহ করতে অনুরোধ জানাচ্ছি”।
তবে এই জমি যে উদ্দেশ্যে কেনা হয়েছিল তা মানা হয়নি বলেই দাবী জানিয়েছেন এলাকার তৃণমূল নেতৃত্বরা। তৃণমূলের দাবী, রাম মন্দিরের বিরোধী আমরা নই। কিন্তু শহীদদের জন্য হাসপাতাল গড়ার নাম করে এই জমি অত্যন্ত কম দামে কেনা হয়েছিল। তাই মন্দিরের পাশাপাশি এখানে শহীদদের নামে হাসপাতাল গড়ে তোলারও দাবী জানানো হচ্ছে। সেই সঙ্গে এই জমি কেনার টাকার উৎস্য জানতেও তৃণমূলের তরফে জেলা প্রশাসনের কাছে আবেদন জানানো হবে বলে জানানো হয়েছে।
তৃণমূলের নন্দীগ্রাম ১ ব্লকের সভাপতি বাপ্পাদিত্য গর্গ জানান, “তৃণমূলের সাংসদ থাকা কালীন শুভেন্দু অধিকারী সোনাচূড়ার বাসিন্দা সুনীল মন্ডল ও পূর্ণিমা মন্ডলের কাছ থেকে গাংড়া মৌজার জেএলনং ২৫০ এর দাগ নম্বর ৭০৯ ও ৭১১ তে জমিটি কিনেছিলেন”। বাপ্পাদিত্যের দাবী, “সেই সময় এলাকায় শহীদদের জন্য হাসপাতালে গড়ার জন্য জমিটি অত্যন্ত কম দামে কিনেছিলেন শুভেন্দু। জমিটি নিজের নামেই রেজিষ্ট্রি করেন তিনি”। বাপ্পাদিত্য’র মতে, “পরে ওই জমি শহীদদের জন্য ট্রাস্ট বানিয়ে তাদের হাতে হস্তান্তর করার কথা ছিল বলে শুনেছিলাম। কিন্তু এখন শহীদদের কথা ভুলে গিয়ে সেই জমিতে মন্দির বানাতে চলেছেন বিজেপি বিধায়ক”।
বাপ্পাদিত্য’র আরও দাবী, “একটা সময় শুভেন্দু অধিকারী নিজের সাংসদ কোটা (এমপি ল্যাড) টাকা দিয়ে সোনাচূড়ায় ১৪ লক্ষ টাকা ব্যায়ে শহীদদের জন্য হাসপাতাল গড়তে জমি ক্রয় করেছেন বলে দাবী করেছিলেন। তৎকালীন একটি ছাপানো পুস্তিকায় এই বিষয়টি উল্লেখ রয়েছে। এছাড়াও নন্দীগ্রামের ভাঙাভেড়াতেও এমপি ল্যাডের টাকায় প্রায় ১ লক্ষ টাকা ব্যায়ে শহীদ পার্ক গড়ার জন্য জমি ক্রয় করেছিলেন”। বাপ্পাদিত্যের দাবী, “এমপি ল্যাডের টাকায় সোনাচূড়ায় শহীদদের জন্য হাসপাতাল গড়তে যে জমি শুভেন্দু কিনেছিলেন সেই জমিটিতেই মন্দির গড়া হচ্ছে বলে আমাদের অনুমান। এই কারনে মন্দির তৈরির জমি কেনার টাকার উৎস্য জানতে আমরা জেলা প্রশাসনের কাছে বিষয়টি নিয়ে আবেদন করতে চলেছি”।
তবে এই জমি নিয়ে তৃণমূলের বিতর্কের জবাব দিয়ে নন্দীগ্রামের বিজেপি নেতা মেঘনাদ পাল সাফ জানিয়েছেন, “শুভেন্দু অধিকারী নিজের উদ্যোগে সোনাচূড়ায় বিশালাকায় শহীদ মিনার তৈরি করেছেন। প্রতিনিয়ত নন্দীগ্রামের জমি আন্দোলনকারী মানুষদের পাশে থেকে তাঁদের জন্য সাহায্যের হাত বাড়িয়ে দিয়েছেন”। মেঘনাদের দাবী, “তৃণমূল কিছুতেই চাইছে না এখানে রাম মন্দির গড়া হোক। তাই বিভিন্ন ভাবে এর বিরোধীতা করতে চেষ্টা করছেন। তবে গাংড়ায় যে জমিতে রাম মন্দির হচ্ছে তা নিয়ে বিতর্কের কোনও অবকাশ নেই” বলেই জানিয়েছেন মেঘনাদ।
