পাঁশকুড়া : নন্দীগ্রামে প্রকাশ্য সভায় দাঁড়িয়ে দেশের রাষ্ট্রপতির বিরুদ্ধে কুরুচিকর মন্ত্যের অভিযোগ ওঠে রাজ্যের কারা প্রতিমন্ত্রী অখিল গিরির বিরুদ্ধে। এই নিয়ে বিতর্কের জেরে অখিলের হয়ে ক্ষমা চান মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দোপাধ্যায়। পরে অখিলও ঘটনার জন্য ক্ষমা চেয়ে নেয়। তৃণমূলের তরফে দলের সর্বস্তরে এই বিষয়ে কোনও মন্তব্য বা কার্যক্রমে নিষেধাজ্ঞা জারী করা হয়।
কিন্তু সেই নির্দেশকে তোয়াক্কা না করেই অখিলের শাস্তির দাবীতে আদিবাসী সংগঠনের একটি মিছিলে নেতৃত্ব দেন পূর্ব মেদিনীপুরে পাঁশকুড়ার গোবিন্দনগর গ্রাম পঞ্চায়েতের তৃণমূল প্রধান কালীপদ মাজি। ‘জয় ভুমিজ জয় মুন্ডা’ নামের ওই সংগঠনের মিছিলে পা মেলান স্থানীয় বিজেপি, সিপিএম সহ বিরোধী দলের কর্মীরা। শুক্রবার স্থানীয় বেনেগলেসা থেকে রাতুলিয়া বাজার পর্যন্ত ওই মিছিল থেকে অখিল গিরিকে গ্রেফতারের দাবি ওঠে।
ঘটনাটি প্রকাশ্যে আসতেই ব্যাপক শোরগোল পড়ে যায় তৃণমূলের অন্দরে। শাসক দলের পঞ্চায়েত প্রধান হয়েও কেন অখিল বিরোধী মিছিলে পা মেলালেন কালীপদ, সেই প্রশ্নই উঠছে সর্বত্র। কালীপদর অবশ্য কোনও হেলদোল নেই। তাঁর সাপ কথা, “আগে দেশ, পরে দল। অখিল গিরি আদিবাসী সমাজের প্রতিনিধি দেশের রাষ্ট্রপতিকে অসম্মান করেছেন। এটা কিছুতেই মেনে নেওয়া যায় না”। কালীপদ জানান, ” আমি আদিবাসী সমাজের প্রতিনিধি হিসেবে প্রতিবাদ মিছিল করেছি”।
তবে এতে দলের তরফে কোনও বার্তা আসেনি, প্রশ্ন শুনে কালীপদর চটজলদি জবাব, “আমাকে দলের ওপর নেতৃত্বরা ফোন করে জানতে চেয়েছিল, আমি মিছিল করেছি কিনা। এর উত্তরে আমি হ্যাঁ বলেছি। এরপর কোনও কথা হয়নি”। আগামী দিনে দল যদি কোনও কড়া ব্যবস্থা নেয়, প্রশ্নের উত্তরে কালীপদ জানান,”এতবড় দল। যদি কোনও ব্যবস্থা নেয় তা করতে পারে”। তেমনটা হলে কি ওপর নেতৃত্বের সঙ্গে কথা বলবেন? কালীপদর উত্তর ” না”।
তবে কালীপদর মিছিল করা ঠিক হয়নি বলেই দাবী করেছেন প্রাক্তন মন্ত্রী তমলুক সাংগঠনিক জেলা তৃণমূলের সভাপতি সৌমেন মহাপাত্র। তাঁর দাবী, “অখিল গিরির ঘটনায় দলনেত্রী নিজে ক্ষমা চেয়েছেন। এরপর দলের আর কেউ এই প্রসঙ্গে মন্তব্য করতে পারবে না বলে ইতিমধ্যে জেলা জুড়ে জানিয়ে দিয়েছি। তারপরেও পঞ্চায়েত প্রধান কালীপদ কেন এমনটা করলেন জানা নেই”। সৌমেন জানান, “গোটা ঘটনার রিপোর্ট রাজ্য নেতৃত্বকে পাঠিয়ে দেব। তাঁরা যেমনটা নির্দেশ দেবেন সেই মতোই পদক্ষেপ নেওয়া হবে”।
তবে এই ঘটনাকে হাতিয়ার করে শোরগোল ফেলে দিয়েছে বিজেপি নেতৃতত্ব। বিজেপির তমলুক সাংগঠনিক জেলার সভাপতি তপন ব্যানার্জীর মন্তব্য, “তৃণমূলেও কিছু ভাল মানুষ রয়েছেন। তাঁরা এই ঘটনা মেনে নিতে পারছেন না। কালীপদ মাজির শুভবুদ্ধির উদয় হয়েছে বলেই উনি রাষ্ট্রপতির অপমানের বিরুদ্ধে পথে নেমেছেন।কালীপদ মাজি ওঁদের সমাজের চাপে পড়েই মিছিলে হেঁটেছেন।”