নিউজবাংলা, পাঁশকুড়া : চারিদিকে থইথই জল। অথচ এত জলের মধ্যে (Panskura Flood) দাঁড়িয়েও মাত্র একবিন্দু জলের জন্য হাহাকার সর্বত্র। কিভাবে মিলবে একটা গ্লাস পানীয় জল তা ভাবতেই কুল কিনারা খুঁজে পাচ্ছেন না অধিকাংশ মানুষ। এক জলের মধ্যে দাঁড়িয়ে আর এক জল যন্ত্রণার দুঃসহ বেদনা নিয়েই রাত কাটছে পাঁশকুড়ার বিস্তীর্ণ এলাকার বাসিন্দাদের।
বুধভার ভোরের দিকে কংসাবতী নদীর একাধিক জায়গায় বাঁধ ভেঙে প্লাবিত হয়েছে পাঁশকুড়ার বিস্তীর্ণ এলাকা। বৃহস্পতির পর শুক্রবারেও সেই জলের পরিমান বেড়েছে পাল্লা দিয়ে। অপেক্ষাকৃত নীচু এলাকাগুলি এমনিতেই বর্ষার জলে টইটম্বুর ছিল। এবার বন্যার দাপটে সব ওলটপালট হয়ে গিয়েছে। কোনও কোনও এলাকায় একতলা বাড়ির গোটাটাই প্রায় জলের তলায় ডুবেছে। ইতিহাস গড়ে এবার কংসাবতীর জলে ডুবল ১৬নং জাতীয় সড়ক। এর জেরে চরম দুর্ভোগে পড়েছে এলাকার বাসিন্দারা।
তবে বন্যার ৩ টে দিন অতিক্রান্ত হয়ে গেলেও এখনও বহু এলাকায় জলবন্দী মানুষের কাছে ত্রাণ পৌছচ্ছেনা বলে অভিযোগ তুলেছেন এলাকাবাসীরা। এই নিয়ে প্রশাসনের ওপর চরম ক্ষুব্ধ দুর্গত এলাকার মানুষেরা। সব থেকে বেশী হাহাকার পড়েছে পানীয় জলের। অপেক্ষাকৃত উঁচু পাকাবাড়িতে অনেকেই আশ্রয় নিয়ে প্রাণ বাঁচিয়েছেন। সঙ্গে থাকা চাল, ডাল ফুটিয়ে রান্নার চেষ্টা করলেও পানীয় জলের অভাবে সেই প্রচেষ্টাও দূরঅস্ত। এদিকে দুর্গত মানুষদের কাছে পৌঁছাতে ব্যাপক তৎপরতা বাড়িয়েছে এনডিআরএফ।
এনডিআরএফ-টু ব্যাটেলিয়ানের ইস্ট এবং ওয়েস্ট বিভাগের ৬টি দল পাঁশকুড়ায় উদ্ধারকাজে নেমেছেন বলে খবর। শুক্রবার তাঁরা দুর্গত প্রত্যন্ত এলাকাগুলিতে যান। সঙ্গে ছিল পানীয় জলের পাউচ, শুকনো খাওয়ার। তবে খাওয়ারের তুলনায় পানীয় জল নেওয়ার জন্যই হুড়োহুড়ি ছিল চোখে পড়ার মতো। বিপুল পরিমানে পানীয় জল এলাকাবাসীদের মধ্যে বিতরণ করেন তাঁরা। এনডিআরএফ সেকেন্ড ব্যাটেলিয়ানের ইন্সপেক্টর জাহির আব্বাস জানান, “পানীয় জল ও খাওয়ার নিয়ে আমরা প্রত্যন্ত এলাকায় ঢুকেছি। বহু মানুষ জলের মধ্যে আটকে রয়েছেন। তবে কেউ অসুস্থ থাকলে বা ডাঙায় ফিরতে চাইলে তাঁদের আমরা উদ্ধার করছি”।
পূর্ব মেদিনীপুর জেলা প্রশাসন সূত্রে জানানো হয়েছে, ইতিমধ্যে বেশ কয়েকহাজার জলবন্দী মানুষকে উদ্ধার করে ক্যাম্পে এনে রাখা হয়েছে। প্রয়োজন মতো ত্রিপল, শুকনো খাওয়ার ও জল বিতরণ করাও হচ্ছে। এরই মাঝে রান্না করা খাওয়ার নিয়ে এলাকায় বিতরণ শুরু করেছে ভারত সেবাশ্রম সংঘ। শুভেন্দু অধিকারী সহ বিজেপি নেতৃত্বরাও নিজেদের উদ্যোগে বিভিন্ন জায়গায় খাওয়ার পৌঁছে দিচ্ছেন। বন্যা বিধ্বস্ত পাঁশকুড়ার বানভাসি মানুষের পাশে দাঁড়াতে পৌরসভার ১ ও ৯ নম্বর ওয়ার্ডে ত্রাণ সামগ্রী তুলে দিয়েছে ছাত্র সংগঠন AIDSO। ত্রাণ সামগ্রী বিতরণের কর্মসূচিতে ছিলেন সংগঠনের পূর্ব মেদিনীপুর উত্তর সাংগঠনিক জেলা কমিটির সম্পাদক নিরুপমা বক্সি।
অনেক স্বেচ্ছাসেবী সংগঠন নিজেদের উদ্যোগে রান্না করা খাওয়ার ও শুকনো খাওয়ার নিয়ে এলাকায় হাজির হয়েছেন। তবে প্রত্যন্ত এলাকায় বহু মানুষ এখনও গৃহবন্দী। অনেকেই রাস্তায় আশ্রয় নিয়ে রয়েছেন। পানীয় জল, খাওয়ারের হাহাকার চারিদিকে। তাই সব কিছুর মাঝেই বন্যা বিধ্বস্ত মানুষদের মধ্যে চাপা ক্ষোভ রয়েছে সর্বত্র।
জলবন্দী মানুষদের জল যন্ত্রণার সাহারা যখন এনডিআরএফ, দেখুন ভিডিওটি-