NewzBangla Desk : এবার হোম সেন্টার বা নিকটবর্তী কলেজের পরিবর্তে স্নাতক স্তরের ভুগোল বিষয়ের ব্যবহারিক (Practical) পরীক্ষার আয়োজন করা হচ্ছে বিদ্যাসাগর বিশ্ববিদ্যালয়ের ক্যাম্পাসে। ইতিমধ্যে (VU Exam) এই সংক্রান্ত পরীক্ষার সূচী দুই মেদিনীপুর ও ঝাড়গ্রামের ৫৪টি কলেজে পাঠিয়ে দিয়েছে বিদ্যাসাগর বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষ। আর এমন নির্দেশ প্রকাশ্যে আসার পরেই চরম সমস্যায় পড়েছেন বিপুল পরিমানে ছাত্রছাত্রী।
দূরদূরান্ত থেকে বিপুল টাকা ও সময় নষ্ট করে কেন ছাত্রছাত্রীদের বিদ্যাসাগর বিশ্ববিদ্যালয় ক্যাম্পাসে প্র্যাকটিক্যাল পরীক্ষা দিতে যেতে হবে তা ভেবেই কুল পাচ্ছেন না অনেকে। ইতিমধ্যে এই সিদ্ধান্ত বাতিলের দাবীতে বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষকে চিঠি দিয়ে প্রতিবাদ জানিয়েছে একাধিক কলেজের তৃণমূল ছাত্রপরিষদ ইউনিট। এরপরেও সিদ্ধান্ত বাতিল না হলে প্রয়োজনে বৃহত্তর আন্দোলনে নামা হবে বলে হুঁশিয়ারি দিয়েছেন টিএমসিপি ছাত্রসংসদের প্রতিনিধিরা।
সূত্রের খবর, এতদিন পর্যন্ত স্নাতক স্তরের ছাত্রছাত্রীদের ব্যবহারিক পরীক্ষা হোম সেন্টারে আয়োজন করা হত। সেক্ষেত্রে ছাত্রছাত্রীদের যাতায়াতের সুবিধার কথা বিশেষ ভাবে মাথায় রেখেই সেন্টার নির্বাচন করা হয়। তবে এই প্রথমবার বিদ্যাসাগর বিশ্ববিদ্যালয়ের ভুগোল বিষয়ের বোর্ড অফ স্টাডিজ সিদ্ধান্ত নিয়েছে এবার দুই মেদিনীপুর ও ঝাড়গ্রামের প্রায় ৫৪টি কলেজের সমস্ত ছাত্রছাত্রীদের ব্যবহারিক পরীক্ষা দিতে যেতে হবে বিদ্যাসাগর বিশ্ববিদ্যালয়ের ক্যাম্পাসে। এরজন্য কলেজগুলির হাতে ইতিমধ্যেই পরীক্ষার সূচী পাঠিয়ে দেওয়া হয়েছে।
তবে টিএমসিপি রাজ্য কমিটির প্রাক্তন সদস্য আবেদ আলী খান আবেদ আলি খানের দাবী, “এবার স্নাতকে ভুগোলের দ্বিতীয় সেমেস্টারের কোস্টাল ম্যানেজমেন্ট বিষয়ের ব্যবহারিক পরীক্ষা বিদ্যাসাগর বিশ্ববিদ্যালয়ে আয়োজন করা হয়েছে। ভুগোল বিষয়ের বোর্ড অফ স্টাডিজ ছাত্রছাত্রী বা তাদের প্রতিনিধিদের সঙ্গে আলোচনা না করেই এই সিদ্ধান্ত চাপিয়ে দেওয়া হয়েছে”।
আবেদ জানান, “এমনিতেই স্নাতকে ছাত্রছাত্রীদের ভর্তির হার মারাত্মক ভাবে কমে গিয়েছে। তারওপর এই ব্যবহারিক পরীক্ষা দিতে দূর দূরান্ত থেকে ৫৪টি কলেজের ছাত্রছাত্রীদের বিপুল টাকা ব্যয় করে আসতে হবে। পূর্ব মেদিনীপুরের অধিকাংশ ছাত্রছাত্রীকেই আগের দিন থেকে বিশ্ববিদ্যালয়ে হাজির হতে হবে। সেখানে যাওয়া, থাকা খাওয়া আবার পরের দিন পরীক্ষা শেষ করে পুনরায় বাড়ি ফিরে আসার অর্থ বিপুল টাকার বোঝা তাদের ওপর চাপিয়ে দেওয়া”। আবেদের মতে, “এই সিদ্ধান্ত সম্পূর্ণ ভাবে ছাত্রছাত্রীদের পরিপন্থী। বোর্ড অফ স্টাডিজের এই সিদ্ধান্ত এখনই বদল হওয়া দরকার” বলেই দাবী জানিয়েছেন তিনি।
অন্যদিকে বিদ্যাসাগর বিশ্ববিদ্যালয় জিওগ্রাফির বোর্ড অফ স্টাডিজের চেয়ারম্যান নীলাঞ্জনা দাস চ্যাটার্জীর দাবী, “ছাত্রছাত্রীদের শিক্ষার মান উন্নয়নের লক্ষ্যেই এই সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়েছে”। তিনি জানান, “দুই মেদিনীপুর ও ঝাড়গ্রামের সমস্ত কলেজের বিভাগীয় প্রধানদের সঙ্গে আলোচনার ভিত্তিতেই বিশ্ববিদ্যালয় ক্যাম্পাসে ভুগোলের ব্যবহারিক পরীক্ষা নেওয়া হচ্ছে”। নীলাঞ্জনা জানান, “করোনাকাল থেকে গত বছর পর্যন্ত এই ধরণের পরীক্ষা হোম সেন্টার বা পাশাপাশির কলেজের সেন্টারে নেওয়া হচ্ছিল। এর ফলে অনেক ক্ষেত্রেই নিউট্রাল অ্যাসেসমেন্ট হচ্ছিল না বলে অভিযোগ উঠেছিল। সবিদিক বিবেচনা করেই এবার বিশ্ববিদ্যালয়ে পরীক্ষা নেওয়া হচ্ছে”।
নীলাঞ্জনা জানান, “সব মিলিয়ে প্রায় ৮৫০ থেকে ৯০০ ছাত্রছাত্রীর জন্য এই পরীক্ষার আয়োজন হয়েছে। ইউজি সেক্রেটারির উপস্থিতিতেই বিভিন্ন কলেজের প্রতিনিধিদের নিয়ে বৈঠকে এই সিদ্ধান্ত হয়েছে”। তাঁর দাবী, “কলকাতা, বর্ধমান বিশ্ববিদ্যালয়ে আগে থেকেই এমন ব্যবস্থা রয়েছে। এবার বিদ্যাসাগরের ছাত্রছাত্রীদেরও বিশ্ববিদ্যালয় ক্যাম্পাসে এসে পরীক্ষা দিতে হবে। এর ফলে ছাত্রছাত্রীদের মানসিক বিকাশ হবে” বলেই দাবী জানিয়েছেন তিনি।