নিউজবাংলা ডেস্ক : আজ তমলুক লোকসভা কেন্দ্রের জন্য মনোনয়ন জমা করবেন বিজেপি প্রার্থী প্রাক্তন বিচারপতি অভিজিৎ গাঙ্গুলি। তাঁর বিপরীতে লড়াই করছেন তৃণমূলের দেবাংশু ভট্টাচার্য, সিপিএমের সায়ন ব্যানার্জী, এসইউসিআইয়ের (Tamluk) নারায়ণ নায়েক। এঁরা সকলেই মনোনয়ন জমা করেছেন আগেই। বৃহত্তর রাজনৈতিক দলের শেষ প্রার্থী হিসেবে অভিজিতের মনোনয়ন আজ। সেই সঙ্গে শেষ মুহূর্তের প্রচারে জমে উঠল তমলুকের দিল্লী বাড়ির লড়াই। এই হেভিওয়েট তমলুক কেন্দ্রের লড়াইয়ে কে কতটা এগিয়ে তা নিয়েই শুরু হয়েছে চুলচেরা বিশ্লেষণ।
তৃণমূলের চ্যালেঞ্জ যেখানে পুরানো আসন দখলে রাখা সেখানে বিজেপির কাছে তমলুক কেন্দ্র রীতিমতো প্রেস্টিজ ফাইট। কারণ এই কেন্দ্রের প্রার্থী প্রাক্তন বিচারপতি অভিজিৎ গাঙ্গুলি হলেও লড়াইটা আসলে শুভেন্দু অধিকারীর অস্তিত্ব প্রমাণের ময়দান হয়ে উঠেছে। নিজের হোম গ্রাউন্ডে বিরোধী দলনেতার প্রভাব কতটা তা এই লড়াই থেকেই স্পষ্ট হয়ে যাবে। তবে অংকের হিসেবে তমলুক কেন্দ্রের জয় পরাজয়ের পেছনে কাজ করছে একাধিক গুরুত্বপূর্ণ সমীকরণ, যা এই কেন্দ্রের লড়াইকে আরও রোমাঞ্চকর বানিয়ে তুলেছে।
তমলুকের ভোট বাক্সে মস্তবড় ফ্যাক্টর হল মহিলা ভোটার। প্রায় ৯ লক্ষ মহিলা ভোটার রয়েছে এই কেন্দ্রে, যা মোট ভোটারের প্রায় অর্ধেক। এদের অধিকাংশই আবার লক্ষ্মীরভান্ডারের উপভোক্তা। এই সমস্ত মহিলাদের বিজেপি মুখি করে তোলা একটি মস্তবড় চ্যালেঞ্জ বিজেপির কাছে। এদের মন জয় করতে সন্দেশখালির মহিলাদের ওপর অত্যাচারের ঘটনাকে হাজির করা হচ্ছে, সেই সঙ্গে রাজ্যের ক্ষমতায় এলে আরও বেশী পরিমানে লক্ষ্মীর ভান্ডারের টাকা দেওয়া হবে বলে প্রতিশ্রুতি দেওয়া হচ্ছে। তবে তা ভোট বাক্সে কতটা কার্যকরী হবে সেই প্রশ্ন ঘুরছে বিজেপির অন্দরেই।
এছাড়াও রয়েছে বিপুল পরিমানে ইয়াং ভোটার। ১৮ থেকে ১৯ বছরের প্রায় ৫৭ হাজার ইয়াং ভোটার রয়েছে তমলুক কেন্দ্রে। এদের মন জয় করতে কোনও কসুর করেনি শাসক দল তৃণমূল কংগ্রেস। দ্বাদশ শ্রেণীতে ট্যাব, কন্যাশ্রী, যুবশ্রী, সবুজসাথীর মতো প্রকল্পের সুবিধাভোগী এই ভোটারেরা। অন্যদিকে চাকরীতে দুর্নীতি ইস্যুকে সামনে রেখে এই ইয়াং ভোটারদের মন পেতে মরিয়া বিজেপিও। তৃণমূল সরকারের আমলে পড়াশোনা করে কোনও সরকারী চাকরী পাওয়া যায় না বলেও প্রচারে ধার বাড়াচ্ছে বিজেপি। এই হিসেবে তমলুক কেন্দ্রের লড়াইটা বেশ হাড্ডাহাড্ডি হতে চলেছে বলেই রাজনৈতিক বিশ্লেষকদের মত।
আরও একটি সমীকরণ এবারের তমলুক কেন্দ্রে বড় ফ্যাক্টর হতে চলেছে। এবার তমলুক কেন্দ্রে তৃণমূল দেবাংশু ভট্টাচার্য বয়সে নবীন। দলীয় ভোটারের পাশাপাশি নতুন প্রজন্মের কাছে তাঁর জনপ্রিয়তা যথেষ্ট। দেবাংশুর গায়ে এখনও দুর্নীতির ছোঁয়া লাগেনি। তাই দেবাংশু তাঁর হাত ধরে তৃণমূলের ভোট বাড়ার সম্ভাবনা রয়েছে বিস্তর। অন্যদিকে সিপিএম প্রার্থী সায়ন ব্যানার্জীও তরুণ আইনজীবি হিসেবে জনপ্রিয়। তাঁর হাত ধরে বামেরাও এবার প্রতিযোগিতার দৌড়ে সামিল হয়েছে।
এদিকে প্রাক্তন বিচারপতি অভিজিৎ গঙ্গোপাধ্যায়ের দুর্নীতির বিরুদ্ধে লড়াই সর্বজনবিদিত। সেই হিসেবে তাঁর জনপ্রিয়তাকে কাজে লাগিয়ে বিজেপির ভোট বাক্স আরও বাড়তে পারে বলেই গেরুয়া শিবিরের দাবী। সবদিক দিয়ে এবার তমলুক কেন্দ্রের লড়াই যথেষ্ট নজরকাড়া হতে চলেছে বলেই রাজনৈতিক মহলের মত।