নন্দীগ্রাম, পূর্ব মেদিনীপুর : আবারও কি দিনের আলো দেখতে চলেছে নন্দীগ্রাম থেকে দেশপ্রাণ রেল প্রকল্প। বুধবার দক্ষিণ পূর্ব রেলের একঝাঁক আধিকারীক নন্দীগ্রাম পরিদর্শনে আসার পরেই এই প্রকল্প নিয়ে নতুন করে স্বপ্ন দেখতে শুরু করেছেন এলাকাবাসীরা (Nandigram Railway Project )। তবে প্রকল্পটি দীর্ঘদিন ঠান্ডাঘরে চলে যাওয়ার পর বাজেট বেড়ে গিয়েছে বেশ কয়েকগুন। সেই সঙ্গে চাকরী না পাওয়া জমিদাতাদের দীর্ঘ আইনী লড়াই, রাজনৈতিক দড়ি টানাটানির মধ্যে পড়ে থাকা প্রকল্পটির সাফল্য নিয়ে একরাশ প্রশ্নচিহ্ন ঘুরে বেড়াচ্ছে এলাকাবাসীদের মনে। সব কিছুকে ছাপিয়ে নন্দীগ্রামের রেল প্রকল্প সফল ভাবে চালু হলে তা ঐতিহাসিক ঘটনা হিসেবেই উল্লেখিত হবে সন্দেহ নাই।
২০০৭ সালে জমি আন্দোলনে গোটা বিশ্বজুড়ে পরিচিত পেয়েছিল নন্দীগ্রাম। পরবর্তী কালে কেন্দ্রের এই নন্দীগ্রামকে রেল মানচিত্র জুড়ে দেওয়ার স্বপ্ন দেখেন মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়। জমি হারাদের চাকরীর প্রতিশ্রুতি দিয়ে নন্দীগ্রাম থেকে দেশপ্রাণ ১৮.৫কিমি রেল পথের কাজ শুরু হয়। ধাপে ধাপে জমিহারারা চাকরী পেতে শুরু করেন। তবে মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় ইউপিএ ২ সরকার ছেড়ে সরে আসার পরেই প্রকল্পটি থমকে যায়। জমিহারাদের একাংশ এখনও চাকরীর আশায় আইনী লড়াই চালিয়ে যাচ্ছেন।
পরবর্তী কালে বিজেপি কেন্দ্রের ক্ষমতায় আসার পর নন্দীগ্রাম রেল প্রকল্পটিকে ফ্রিজ করে দেয়। জেলিংহামে রেলের যন্ত্রাংশ তৈরির কারখানার প্রকল্পটিও বাতিল হয়ে যায়। এরপর দীর্ঘ প্রায় ১০ বছর ধরে ঠান্ডা ঘরে থাকার পর আবারও নন্দীগ্রাম থেকে দেশপ্রাণ রেল প্রকল্প চালু করতে উদ্যোগী হল রেলমন্ত্রক। বুধবার রেলের দক্ষিণ পূর্ব শাখার জেনারেল ম্যানেজার সহ একঝাঁক আধিকারীক নন্দীগ্রাম পরিদর্শনে আসেন। প্রস্তাবিত নন্দীগ্রাম স্টেশন এলাকা ঘুরে দেখার পর প্রকল্পটিকে পুনরায় শুরু করার প্রতিশ্রুতিও দেন।
রেলের দক্ষিণ পূর্ব শাখার জেনারেল ম্যানেজার অনিল কুমার মিশ্রা জানান, “কিছু সময়ের জন্য প্রকল্পটি ফ্রিজ করে দেওয়া হয়েছিল, এখন নতুন করে এই প্রোজেক্ট নিয়ে কাজ শুরু হয়েছে। যত দ্রুত সম্ভব প্রকল্পটিকে শেষ করার লক্ষ নিয়ে আমরা কাজ শুরু করছি”। তিনি আরও বলেন, “কিছু জায়গায় অধিগৃহীত জমিগুলিকে নতুন করে চিহ্নিত করতে হবে। তারপর যেখানে জল নেই সেখানে কাজ শুরু হবে”।
মিশ্রা জানান, “এবার নন্দীগ্রামের দিক থেকে দেশপ্রাণ অভিমুখে দ্রুত কাজ শুরু হয়ে যাবে। এবং যত শীঘ্র সম্ভব এই লাইনে ট্রেন চলাচল শুরু করার বিষয়ে আমরা যথাসাধ্য চেষ্টা চালাচ্ছি”। তিনি বলেন, “ইতিমধ্যে একটি এজেন্সিকে কাজের দায়িত্ব দেওয়া হয়েছে। আমরা দ্রুত কাজ শুরু করছি”। তবে জমি হারাদের একটা অংশের চাকরী দেওয়ার কাজ থমকে রয়েছে দীর্ঘদিন। সেই বিষয়ে মিশ্রা বলেন, “এই বিষয়ে রেল ভাবনাচিন্তা করছে”।
যদিও নন্দীগ্রাম রেল প্রকল্পে জমি হারা শুভজিৎ জানা বলেন, “ওনারা আজ প্রকল্প এলাকা দেখে চলে গেলেন। কেউ বলেননি আমাদের চাকরী দেওয়া হবে। জমি অধিগ্রহণের সময় আমাদের চাকরী দেওয়ার প্রতিশ্রুতি দেওয়া হলেও তা বাস্তবায়িত হয়নি। দীর্ঘ ১০ বছর ধরে আমরা অপেক্ষা করে রয়েছি এই প্রকল্পের জন্য। তবে যতদিন আমাদের চাকরী না হয় ততদিন প্রকল্পটি শুরু হবে কিনা জানি না। জমি হারা পরিবারগুলি চাকরীর দাবীতে দীর্ঘ আইনী লড়াই চালিয়ে যাচ্ছি। এখন লাইনের কাজ শুরু হলে আমাদের চাকরীও হবে বলেই আশা করছি”।
তবে প্রকল্পের কৃতিত্ব কার হাতে থাকবে তা নিয়ে ইতিমধ্যেই শুরু হয়ে গিয়েছে রাজনৈতিক দড়ি টানাটানি। এই রেল প্রকল্প সম্পর্কে বিজেপির তমলুক সাংগঠনিক জেলা কমিটির সদস্যঅভিজিৎ মাইতির মন্তব্য, “রেল তার নিজস্ব পদ্ধতিতে কাজ শুরু করবেন। আমরা আশাবাদী অতি শীঘ্রই নন্দীগ্রামের মানুষ রেলের পরিষেবা পাবে আশা করছি। মমতা ব্যানার্জীর ভুল পরিকল্পনার জন্য প্রকল্পটি প্রায় বন্ধ হতে বসেছিল। প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্রমোদীর ইচ্ছায় সেই প্রকল্প পুনরায় বাস্তবায়িত হতে চলেছে”।
পাল্টা রেলের এই উদ্যোগকে কেন্দ্রের ভোট কৌশল হিসেবেই দেখছেন নন্দীগ্রাম জমি আন্দোলনের নেতা সেক সুফিয়ান। সুফিয়ানের দাবী, “গত ১০ বছরে নন্দীগ্রাম রেল প্রকল্প ও জেলিংহাম প্রকল্পকে ঠান্ডা ঘরে পাঠিয়ে দিয়েছিল বিজেপির সরকার। এখন লোকসভা ভোট সামনে চলে আসায় হঠাৎ করে নন্দীগ্রামের কথা মনে পড়েছে”।
সুফিয়ানের দাবী, “এই রেল প্রকল্প মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের স্বপ্নের প্রকল্প ছিল। কিন্তু বিজেপি কেন্দ্রের সরকারে আসার পরেই এই প্রকল্পের জমি দাতাদের চাকরী দেওয়া বন্ধ করে দিয়েছে। এই নিয়ে ভুরি ভুরি মামলা চলছে। সে সবের নিষ্পত্তি না করেই হঠাৎ করে রেলের কাজ শুরু করার বার্তা দিচ্ছেন আধিকারীকরা”। তাঁর মতে, “এই প্রকল্প বাস্তবায়িত হলে তা মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়েরই সাফল্যের নজির গড়বে। বিজেপির কোনও ক্রেডিট নেই”।