নন্দীগ্রাম, পূর্ব মেদিনীপুর : নন্দীগ্রামের মহম্মদপুর পঞ্চায়েতে বিজেপির সমর্থনে প্রধান হলেন তৃণমূল নেতা শেখ সুপিয়ানের জামাই শেখ হাবিবুল। দলের পক্ষ থেকে শানওয়াজ আলি খানের নাম প্রধান হিসেবে পাঠানো হয়েছিল। কিন্তু, সুপিয়ানের জামাই তথা বিদায়ী পঞ্চায়েত প্রধান হাবিবুল ও তাঁর ঘনিষ্ঠরা দলের নির্দেশ চ্যালেঞ্জ করেন (Nandigram Battle)। শুরু হয় ভোটাভুটি। তৃণমূলের ১২সদস্যের পাশাপাশি বিজেপির ছ’জন সদস্যও ভোটে অংশ নেন।
হাবিবুল ১২-৬ ব্যবধানে জয়ী হন। দলের ছ’জন সদস্য এবং বিজেপির ছ’জন জয়ী সদস্য হাবিবুলকে সমর্থন করেন। চমকের এখানেই শেষ নয়। উপপ্রধান পদে তৃণমূলের প্যানেলে থাকা সুপর্ণা পণ্ডার বিরুদ্ধে বিজেপির জয়ী সবিতা মাইতির নাম প্রস্তাব করা হয়। শেখ সুপিয়ানের দুই মেয়ে সহ দলের তিনজন বিজেপির প্রস্তাবিত উপপ্রধানকে সমর্থন করেন বলে তৃণমূলের দাবি। গোটা ঘটনায় নন্দীগ্রাম জুড়ে হইচই শুরু গিয়েছে। উপপ্রধান পদে দুই প্রার্থী ন’টি করে ভোট পান। এরপর লটারিতে তৃণমূলের সুপর্ণাদেবী জয়ী হন।
প্রসঙ্গতঃ এবারের পঞ্চায়েত নির্বাচনে নন্দীগ্রামে একচেটিয়া ভাবে সুফিয়ান সহ পুরানো তৃণমূল নেতাদের ক্ষমতা ছেঁটে ফেলেছিল তৃণমূল নেতৃত্বরা। জেলা পরিষদের প্রার্থী হিসেবে শেষ মুহূর্তে সুফিয়ানের নাম ঘোষণার পরেও তা বাতিল করে দেওয়া হয়। তারই মাঝে সুফিয়ানের দুই মেয়ে ও জামাই দলের নেতৃত্বের সঙ্গে রীতিমতো লড়াই করে মহম্মদপুর গ্রাম পঞ্চায়েতের টিকিট হাসিল করেন। তবে সুফিয়ানের ঘনিষ্ট হিসেবে পরিচিত তৃণমূল নেতাদের অধিকাংশকেই এবার টিকিট দেওয়া হয়নি।
পঞ্চায়েত নির্বাচনে সুফিয়ানের দুই মেয়ে ও জামাই জয়ী হলেও এবার প্রধান পদটি সুপিয়ানের আত্মীয়দের পরিবর্তে অন্যজনকে করার সিদ্ধান্ত হয়েছিল। সেইমতো শানওয়াজের নামে সিলমোহর দিয়েছিল দল। কিন্তু, চ্যালেঞ্জ করে এবং বিজেপির সমর্থন নিয়ে হাবিবুল প্রধান হলেন। এদিন সুপিয়ান ও তাঁর জামাইকে বার বার ফোন করা হলেও ফোন ধরেননি।
তৃণমূলের তমলুক সাংগঠনিক জেলার সভাপতি সৌমেন মহাপাত্র বলেন, “সুপিয়ান সাহেবের জামাই বিজেপির সমর্থন নিয়ে প্রধান হয়েছেন। এরকম আরও কিছু জায়গায় ঘটেছে। আমরা দলের রাজ্য নেতৃত্বকে সবটা জানাব”। মহম্মদপুর গ্রাম পঞ্চায়েতে মোট আসন সংখ্যা ১৮টি। পঞ্চায়েত ভোটে তৃণমূল ১২টি ও বিজেপি ছ’টি আসনে জয়ী হয়। অনায়াসে তৃণমূলের বোর্ড গঠন হওয়ার কথা। কিন্তু, দলের সিদ্ধান্ত মেনে নিতে পারেননি সুপিয়ান শিবির।
বোর্ড গঠনে অংশ নেওয়া তৃণমূলের জয়ী সদস্য তথা দলের ব্লক কমিটির সদস্য আব্দুস সামাদ বলেন, এভাবে দলের সিদ্ধান্তের বাইরে গিয়ে বিজেপির সমর্থনে বোর্ড গড়ার কথা আমরা স্বপ্নেও ভাবতে পারিনি। দলের ১২জন সদস্য। তারমধ্যে সুপিয়ানের জামাই ও দুই মেয়ে রয়েছে। ওই তিনজন সহ দলের মোট ছ’জন এবং বিজেপির ছ’জন হাবিবুলকে সমর্থন করে প্রধান করল। বিজেপির উপপ্রধান পদপ্রার্থীকে সুপিয়ান সাহেবের দুই মেয়ে সমর্থন করেছেন। আমরা ভোটাভুটি কক্ষের মধ্যে এসব দেখে অবাক হয়ে গিয়েছি। বিজেপির জেলা সাধারণ সম্পাদক মেঘনাদ পাল বলেন, “আমাদের সমর্থন নিয়ে মহম্মদপুরে পঞ্চায়েত প্রধান হয়েছে”।
তৃণমূলের ব্লক কমিটির নেতা তথা বিদায়ী বিদ্যুৎ কর্মাধ্যক্ষ শেখ আহমদুল্লা বলেন, “আমাদের সংখ্যাগরিষ্ঠতা ছিল। তারপরও দলের সিদ্ধান্তকে চ্যালেঞ্জ করে বিজেপির সমর্থন নিয়ে শেখ হাবিবুল প্রধান হলেন। এরফলে দলের কর্মীদের কাছে ভুল বার্তা যাবে। আমরা গোটা বিষয়টি ব্লক নেতৃত্বকে জানিয়েছি। আশা করি, ব্লক নেতৃত্ব এনিয়ে উপযুক্ত পদক্ষেপ নেবে”৷