মারিশদা, পূর্ব মেদিনীপুর : বিজেপির এক যুব নেতাকে মিথ্যে অভিযোগে গ্রেফতার করা হয়েছে এই অভিযোগ তুলে শনিবার রাত্রি প্রায় সাড়ে ১০টা নাগাদ মারিশদা থানায় গিয়ে পুলিশের সঙ্গে বিতন্ডায় জড়ালেন রাজ্যের বিরোধী দলনেতা শুভেন্দু অধিকারী। পুলিশকে তাঁর হুঁশিয়ারি, ধৃত নেতার স্ত্রীকে দিয়ে তিনি অপহরণের (Suvendu Adhikary) অভিযোগে মামলা দায়ের করবেন। প্রয়োজনে হাইকোর্টে রিট পিটিশান করবেন তিনি। মামলাটি তিনি অনেকদূর নিয়ে যাবেন বলে পুলিশকে রীতিমতো হুঁশিয়ারি দেন শুভেন্দু। এরপর পুলিশকে আযদালতে দেখে নেওয়ার হুঁশিয়ারি দিয়ে থানা চত্বর ছেড়ে যান তিনি।
সূত্রের খবর, খেজুরি থেকে শনিবার বিকেল ৪টে নাগাদ বিজেপির মন্ডল সভাপতি রবীন মান্না নামের এক যুব নেতাকে সাদা পোষাকে গ্রেফতার করে মারিশদা থানার পুলিশ। এরপর দীর্ঘক্ষণ তাঁর কোনও খোঁজ মেলেনি। এই ঘটনার খবর পেয়ে রাত্রি প্রায় সাড়ে ১০টা নাগাদ বাড়ি ফেরার পথে মারিশদা থানায় স্বপারষদ ঢুকে পড়েন শুভেন্দু অধিকারী। কর্তব্যরত ডিউটি অফিসারের কাছে এই যুব নেতার গ্রেফতারির অ্যারেস্ট মেমো দাবী করেন শুভেন্দু। এই নিয়ে পুলিশের সঙ্গে রীতিমতো বিতন্ডায় জড়াতে দেখা যায় শুভেন্দুকে। সেই সময় তাঁর সঙ্গে ছিলেন খেজুরির বিজেপি বিধায়ক শান্তনু প্রামাণিক সহ ধৃত বিজেপি নেতার পরিজন ও একঝাক বিজেপি সমর্থক। শুভেন্দু আসার খবরে মারিশদা থানার বাইরে ক্রমশঃ ভীড় জমাতে থাকেন বিজেপি কর্মী সমর্থকরা।
পুলিশকে তিনি রীতিমতো ধমকের সুরে সুপ্রিম কোর্টের একাধিক নির্দেশ ও আইনের বিভিন্ন ধারার উল্লেখ করে বিজেপি নেতার গ্রেফতারিকে বেআইনি আখ্যা দেন বিরোধী দলনেতা। তিনি সরাসরি পুলিশকে হুঁশিয়ারি দিয়ে জানান, “আপনি সুপ্রিম কোর্টের আইন অমান্য করে ক্রিমিনাল প্রসিডিওর ভায়োলেট করেছেন। আমি ওনার স্ত্রীকে দিয়ে এখনই কিডনাপের অভিযোগ দায়ের করব”। সেই সময়ই পেছন থেকে এক পুলিশ কর্মী কিছু বলতে গেলে তাঁকে থামিয়ে শুভেন্দুর মন্তব্য, “ডোন্ট ডিকটেট মি, ডিউটি অফিসার আমাকে বলুন। সিভিল ড্রেসে গিয়ে বাড়ির লোকের সই ছাড়া তুলে এনেছে। অ্যারেস্ট করেছে ৪টের সময়, এখন রাত্রি সাড়ে ১০টা বাজে। আমি অ্যারেস্ট মেমো চেয়েছি। সেটা দিতে সাড়ে ৬ ঘন্টা লাগে নাকি। ডিউটি অফিসার আর ওসি ইনচারজের বিরুদ্ধে মামলা করব”।
শুভেন্দুর মন্তব্য, “আমি রবিবার কাথি আদালতে কিডনাপের মামলা দায়ের করব ধৃত নেতার স্ত্রীকে দিয়ে। সোমবার হাইকোর্ট খুললে সেখানে আমি রিট পিটিশান দাখিল করব”। পুলিশ অফিসারদের প্রতি তাঁর হুঁশিয়ারি, “এই মামলাটি অনেক দূর যাবে”। এরপরেই শুভেন্দু থানার বাইরের বেঞ্চে বেশ কিছু সময় বসে থাকেন অ্যারেস্ট মেমো’র জন্য। তবে পুলিশের তরফে কোনও কাগজ না পেয়ে অবশেষে রাত্রি ১১টার আগেই তিনি মারিশদা থানা ছেড়ে চলে যান। যাওয়ার আগে পুলিশকে হুঁশিয়ারি দিয়ে যান, “আপনারা আইপিসি সিআরপিসি মানেন না। আপনাদের সঙ্গে তাহলে আদালতেই আমার দেখা হবে”। যদিও গোটা ঘটনায় পুলিশের তরফে কোনও মন্তব্য পাওয়া যায়নি।
পরে শুভেন্দু জানান, বাশগোড়াতে সভা ছিল। তার আগে বিকেল ৪টে নাগাদ সেখানকার মন্ডল কমিটির সম্পাদক যুব নেতা রবীন মান্নাকে গ্রেফতার করে পুলিশ। সুপ্রিম কোর্টের নির্দেশ মেনে দৃশ্যমানতা থাকতে হবে তা অমান্য করেছে। একেবারে সাদা পোষাকে তুলে নিয়ে গেল তাঁকে। দীর্ঘ ৫ ঘন্টা তাঁর কোনও খোঁজ মেলেনি। সব শেষে রাত্রি প্রায় ১০টা নাগাদ মারিশদা থানায় থাকা কয়েকজন বিজেপির শুভানুধ্যায়ী আমাকে ম্যাসেজ করে জানান, এই থানায় রবীন মান্নাকে রাখা হয়েছে। আমি থানায় ঢুকে যেতেই ডিউটি অফিসার থরথর করে কাঁপছেন। এদের বিরুদ্ধে আমরা অবশ্যই আদালতে যাব”।