নিউজবাংলা ডেস্ক : বাবার সম্পত্তির ভাগ চেয়েছিল ছোট ভাই। সেই অপরাধেই ভাইকে বেমালুম গায়েব করে দিল দাদা ও বৌদি। তবে শেষ রক্ষা হয় নি। ঘটনার ১০ দিন পরেই প্রকাশ্যে এল দাদা বৌদির ঘৃণ্য ষড়যন্ত্রের কাহিনী। অবশেষে মঙ্গলবার বেলার দিকে মাটি খুঁড়ে উদ্ধার করা হল গুম হয়ে যাওয়া ভাইয়ের মৃতদেহ। চাঞ্চল্যকর ঘটনাটি ঘটেছে পূর্ব মেদিনীপুরের কাঁথি থানার মহিষাগোট গ্রাম পঞ্চায়েতের রতনপুর গ্রামে।
মৃত যুবকের নাম মিঠুন সাঁতরা। এদিন (Crime Report) তাঁদের বাড়ির পাশের পুকুরের পাড় থেকে মিঠুনের নিথর দেহ উদ্ধার করেছে কাঁথি থানার পুলিশ। দেহটিকে ময়না তদন্তে পাঠানোর পাশাপাশি ঘাতক দাদা নারায়ণ সাঁতরা ও বৌদি সোমা সাঁতরাকে গ্রেফতার করেছে পুলিশ। কিভাবে এই খুনের ঘটনা তা জানতে পুলিশ তদন্ত শুরু করেছে।
স্থানীয় সূত্রে জানা গেছে, গত প্রায় ১০ দিন ধরে নিখোঁজ ছিল মিঠুন। সে কোথায় গিয়েছে জানতে চাইলে মিঠুনের দাদা, বৌদি সহ পরিবারের সদস্যরা জানিয়েছিল ছেলেটি ভিন রাজ্যে কাজে গিয়েছে। কিন্তু প্রতিবেশীদের মনের সন্দেহ দূর হয়নি। কাওকে কিছু না জানিয়ে কেন সে আচমকা উধাও হয়ে গেল তা নিয়ে কানাঘুষো চলছিল পাড়ায়। সোমবার রাতে প্রতিবেশীরা গোপন সূত্রে জানতে পারে মিঠুনের দাদা শ্রাদ্ধশান্তির জন্য এক পুরোহিতের সঙ্গে যোগাযোগ করেছে। এরপরেই প্রতিবেশীদের সন্দেহ আরও গাঢ় হয়।
স্থানীয় প্রতিবেশী শিবকুমার সাঁতরা জানান, “মিঠুন বাড়ি ফেরার পর প্রতিদিনই গ্রামে ঘুরে বেড়াত। কিন্তু দিন দশেক তাঁকে দেখতে না পেয়ে আমাদের সন্দেহ হয়। বারেবারে মিঠুনের বাড়িতে এই নিয়ে আমরা জিজ্ঞাসা করলে তার দাদা, বৌদি, বাবা সকলেই জানায় ছেলেটি আবার বাইরে চলে গেছে। কিন্তু কাউকে না বলে কেন বাইরে চলে গেল তা নিয়েই আমাদের সন্দেহ দানা বাঁধে। এরপর সোমবার এক পুরোহিত জানায় মিঠুনের দাদা কোনও একজনের শ্রাদ্ধ শান্তির জন্য তাঁকে ভাড়া করতে চেয়েছে। এরপরেই মঙ্গলবার সকালে দলবেঁধে মিঠুনের বাড়িতে এসে তার দাদাকে চেপে ধরি। চাপে পড়ে নারায়ণ ভাইকে খুনের কথা স্বীকার করে”।
মঙ্গলবার সকালে গ্রামবাসীরা মিঠুনের দাদাকে চাপ দিতেই প্রকাশ পেয়ে যায় আসল ঘটনা। নারায়ণ জানায় ভাইকে মেরে মাটি চাপা দিয়েছে সে। এরপরেই গ্রামবাসীরা দেহ উদ্ধারের পাশাপাশি অভিযুক্তদের গ্রেফতারের দাবীতে সরব হয়। খবর পেয়ে কাঁথি থানার বিশাল পুলিশ বাহিনী ঘটনাস্থলে ছুটে আসে। ম্যাজিস্ট্রেটের উপস্থিতিতে বাড়ির পাশের পুকুর পাড় থেকে মিঠুনের মৃত দেহ উদ্ধার করে ময়না তদন্তে পাঠিয়েছে পুলিশ। সেই সঙ্গে মিঠুনের দাদা ও বৌদিকে গ্রেফতার করা হয়েছে বলে কাঁথি থানা সূত্রে জানানো হয়েছে।
কিভাবে ভাইকে গায়েব করে দিয়েছিল দাদা-বৌদি, দেখুন বিস্তারিত :
কাঁথি মহকুমা পুলিশ আধিকারীক দিবাকর দাস জানান, “প্রায় ১০ দিন আগেই আমরা গোপন সূত্রে ওই যুবকের রহস্যময় নিখোঁজের বিষয়ে জানতে পারি। এরপরেই গোপনে এলাকায় খোঁজ খবর চালানো হচ্ছিল। মঙ্গলবার সকালে গ্রামবাসীদের সূত্রে খবর পেয়ে মৃতদেহ উদ্ধারের জন্য এসেছি। অভিযুক্ত দাদাকে জিজ্ঞাসাবাদ করে ম্যাজিস্ট্রেটের উপস্থিতিতে দেহটিকে উদ্ধার করা হয়েছে। এই মৃতের দাদা ও বৌদিকে গ্রেফতার করে জিজ্ঞাসাবাদ করা হচ্ছে। কি কারনে খুন, এই ঘটনায় আর কারা জড়িত তা জানতে তদন্ত শুরু হয়েছে”।