মহিষাদল : দু’দিকে মাথা তুলে দাঁড়িয়ে থাকা পাম গাছের সারি, টলটলে ঝিলের পাড় ধরে আলোছায়ায় ভরা রাস্তা ধরে কয়েক কদম এগিয়েই ছায়া সুনিবিড় আম্রকুঞ্জ। সারি বেঁধে দাঁড়িয়ে থাকা সুপ্রাচীন আমবাগানের মুকুলের ডগায় বিচ্ছুরিত হচ্ছে মহিষাদল রাজবাড়ির ঐতিহ্যের ঝলমলে ইতিকথা। আর তারই মাঝে লক্ষাধিক মানুষ গা ভাসিয়ে দেবেন রঙের উৎসবে। বাতাসে উড়বে রঙ-বে রঙের আবির, বাদ্যির তালে তালে দুলে উঠবে থিকথিকে ভিড়।
শহরের কোলাহল ছাড়িয়ে প্রকৃতির মাঝে দোলের এক অনন্য অনুভুতি নিয়ে আবারও ফিরছে মহিষাদল বসন্ত উৎসব (Mahishadal Basanta Utsav)। মঙ্গলবার সকাল থেকে মহিষাদল প্রেস কর্নার হাজির হচ্ছে তাদের ১৪ তম বসন্ত উৎসবের ডালি নিয়ে। শহুরে কোলাহল ছাড়িয়ে যেখানে কয়েকটা মুহূর্ত কাটিয়ে ফেলার মধ্যে দিয়ে খানিকটা হাল্কা হয়ে উঠতে পারবেন আপনিও।
প্রাকৃতিক সৌন্দর্যের পাশাপাশি ঐতিহাসিক শহর হিসেবে রাজ্যে যথেষ্ট জনপ্রিয় পূর্ব মেদিনীপুরের মহিষাদল শহর। গোটা বছর রাজ্যের বিভিন্ন প্রান্ত থেকে মানুষ ছুটে আসেন মহিষাদলের সৌন্দর্যে গা ভাসিয়ে দেওয়ার জন্য।
কলকাতা ও শহরতলির বহু মানুষ এক মুঠো তাজা হাওয়ার নেশায় প্রায়শই ছুটে আসেন মহিষাদল রাজবাড়িতে। সেই রাজবাড়ির আম্রকুঞ্জে এক অনন্য আঙ্গিকে পথ চলা শুরু করে বসন্ত উৎসব। রবিঠাকুরের প্রাণের প্রিয় শান্তিকিনেতনের পর প্রকৃতির অপার সৌন্দর্যের মাঝে মন রাঙিয়ে দেওয়া এমন বসন্ত উৎসব মহিষাদল ছাড়া রাজ্যের আর কোথাও দেখা মেলা ভার।
মহিষাদলের বসন্ত উৎসবের সব থেকে বড় বৈশিষ্ট হল এখানকার পরিবেশ। সেই সঙ্গে অনন্যতা রয়েছে রঙের উৎসবেও। ক্ষতিকর জল রঙের পরিবর্তে পরিবেশ বান্ধব ভেষজ আবির নিয়ে ইচ্ছে মতো সেজে উঠতে পারেন আপনিও। মন ভালো করে দেওয়া এমন পরিবেশে হাজার হাজার মানুষ একে অপরকে রাঙিয়ে দেন ইচ্ছে মতো। সকাল থেকে শুরু হওয়া সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠানের মঞ্চ ভোরে ওঠে নাচে গানে কবিতায়।
কোমর দুলিয়ে নাচ, সঙ্গে ফটোস্যুট, খাওয়াদাওয়ার ঢালাও বন্দোবস্ত, উদ্দাম আবির রঙে গা ভাসিয়ে বেরিয়ে ক্ষণিক বিরতিতে দেখে নিন রাজবাড়ির ঐতিহাসিক নিদর্শন। ফুলবাগ প্যালেস, রাজবাড়ির মিউজিয়াম, গোপালজীউ মন্দির দর্শন করে চলে যেতে পারেন গেওখালীর ত্রিবেনী সঙ্গম নদীতীরে।
যেখানে এক জায়গায় মিশেছে গঙ্গা, রূপনারায়ণ ও হুগলী নদী। মনোরম ভ্রমণ সেরে দিনের শেষে ফিরে যেতে পারেন নিজের ঠিকানায়। সড়কপথে অথবা ট্রেন যাত্রা করে মাত্র কয়েক ঘন্টায় পৌঁছে যেতে পারেন আপনার গন্তব্যে।