নন্দীগ্রাম : পঞ্চায়েত নির্বাচনের দিন ঘোষণা হয়েছে বৃহস্পতিবার। আর শুক্রবার সকালেই চমক দিলেন নন্দীগ্রামের বিজেপি নেতৃত্বরা। তৃণমূলকে টেক্কা দিয়ে রীতিমতো মিছিল হাঁকিয়ে নন্দীগ্রাম-১ ব্লকের বিডিও অফিসে গিয়ে মনোনয়ন জমা করলেন হরিপুর অঞ্চলের ১৪ জন বিজেপি প্রার্থীরা (WB Panchayet Electio 2023)। জেলা জুড়ে এটা একটা নজির বলেই দাবী বিজেপির জেলা নেতৃত্বের। ত্রিস্তর পঞ্চায়েতের বাকী পদগুলির জন্য সোমবারই মনোনয়ন জমা করা হবে বলে বিজেপি নেতৃত্বরা জানিয়েছেন। যদিও তৃণমূল এই বিষয়টিকে বিশেষ আমল দিতে নারাজ।
এদিন যখন প্রার্থী তালিকা তৈরি নিয়ে শাসক ও বিরোধী সব শিবিরেই যখন টানটান উত্তেজনার আবহ সেখানে শুভেন্দু অধিকারীর গড় হিসেবে পরিচিত নন্দীগ্রামের হরিপুর অঞ্চলের বিজেপি প্রার্থীরা অনেকটাই এগিয়ে। ভোট ঘোষণার অনেক আগেই গত ২৫ মার্চ শুভেন্দু অধিকারীর ঘনিষ্ঠ বিজেপির তমলুক সাংগঠনিক জেলার সাধারণ সম্পাদক মেঘনাদ পালের নেতৃত্বে এই হরিপুর অঞ্চলের ১৪ জনের প্রার্থী তালিকা ঘোষণা করে দেওয়া হয়। সেই নিয়ে বিস্তর শোরগোল পড়েছিল।
আজ সেই মেঘনাদ পালের নেতৃত্বেই হরিপুর অঞ্চলের ১৪ প্রার্থী নন্দীগ্রাম ১ বিডিও অফিসে গিয়ে নিজেদের মনোনয়ন পত্র জমা দিয়ে এলেন। বিশাল মিছিল করে তাঁরা নন্দীগ্রামের জানকীনাথ মন্দিরে পুজো দিয়ে তারপর বিডিও অফিস অভিমুখে এগিয়ে যান। তবে পুলিশের ব্যারিকেডের সামনে সামান্য উত্তেজনার পরিস্থিতি তৈরি হয় যখন এই দলবল সহযোগে মনোনয়নে হাজির হন মেঘনাদ ও তাঁর সঙ্গীরা। পরে পুলিশের নির্দেশ মতো প্রার্থীরাই কেবলমাত্র বিডিও অফিস চত্বরে যান।
তবে রাতারাতি ভোট ঘোষণা হয়ে যাওয়ার জেরে প্রার্থী তালিকা নিয়ে যথেষ্ট চাপে রয়েছে শাসক ও বিরোধী শিবির। এই আবহে হরিপুরের প্রার্থীরা আগাম মনোনয়ন জমা করায় বিজেপির অন্দরেও প্রশ্ন উঠতে শুরু করেছে। যদিও সমস্ত জল্পনায় জল ঢেলে বিজেপির তমলুক সাংগঠনিক জেলার সভাপতি তপন কুমার ব্যানার্জী স্পষ্ট করে দেন, জেলা কমিটির সঙ্গে আলোচনা করেই আজ হরিপুরের ১৪ প্রার্থী প্রথম মনোনয়ন জমা করেছেন। বাকী ত্রিস্তর পঞ্চায়েতের অধিকাংশ মনোনয়ন আগামী সোমবার থেকে জমা করা হবে। তবে জেলা বা রাজ্য কমিটি আলাদা করে কোনও প্রার্থী তালিকা ঘোষণা করবে না বলেও জানান তপন। তিনি জানান, “সমস্ত মন্ডলকে প্রার্থীর তালিকা জেলা কমিটিতে পাঠাতে নির্দেশ দেওয়া হয়েছে। সেই তালিকা অনুযায়ী মনোনয়ন জমা করার প্রক্রিয়া শুরু হবে”।
সিপিএমের তরফেও জানিয়ে দেওয়া হয়েছে, আজ কোনওরকম মনোনয়ন দেওয়া হচ্ছে না। সিপিএমের পূর্ব মেদিনীপুর জেলার সম্পাদক নিরঞ্জন সিহি জানান, “এখনই আমরা প্রার্থীদের পূর্ণাঙ্গ তালিকা প্রকাশ করিনি। রাতারাতি ভোট ঘোষণা হয়ে যাওয়ার পরেই সমস্ত বুথ স্তর থেকে প্রার্থী তালিকা জেলায় চেয়ে পাঠানো হয়েছে। আজ কোনও মনোনয়ন হচ্ছে না। আগামী সোমবার থেকে মনোনয়নের জন্য আমরা প্রস্তুতি নিচ্ছি”।
তবে বিজেপি শিবির প্রার্থী তালিকা নিয়ে কিছুটা এগিয়ে থাকলেও তৃণমূল শিবিরের প্রার্থী তালিকা নিয়ে এখনও কিছুটা জটিলতা রয়েছে বলে খবর। এই বিষয়ে তৃণমূলের তমলুক সাংগঠনিক জেলার সভাপতি সৌমেন মহাপাত্রের সঙ্গে যোগাযোগের চেষ্টা হলেও তাঁর ফোন সুইচঅফ রয়েছে।
নন্দীগ্রাম ১ ব্লক তৃণমূলের সভাপতি বাপ্পাদিত্য গর্গ জানান, “আমাদের দল অত্যন্ত শৃঙ্খলাপরায়ণ। তাই প্রার্থীতালিকা কোনও ভাবেই স্থানীয় স্তরে ঘোষণা হবে না। এই বিষয়ে রাজ্য নেতৃত্বই শেষ কথা বলবেন। রাজ্য থেকে দেওয়া প্রার্থী তালিকা অনুযায়ী মনোনয়ন জমা করা হবে”। সেই সঙ্গে নন্দীগ্রামের হরিপুর অঞ্চলের বিজেপির মনোনয়ন প্রসঙ্গে বাপ্পাদিত্য জানান, “হরিপুর অঞ্চলের বিজেপির বিতর্কিত নেতারাই আজ মনোনয়ন জমা করেছেন। দলের জেলা ও রাজ্যকে এড়িয়ে এই একটি কেন্দ্রে মার্চ মাসে প্রার্থী তালিকা ঘোষণা হয়েছিল। যারা এখনও দেওয়াল লিখতেই পারেনি। তাই ওরা আগে মনোনয়ন দিলেও তাতে তৃণমূলের কোনও মাথা ব্যাথা নেই”।