নন্দীগ্রাম, পূর্ব মেদিনীপুর : জমি আন্দোলনের নন্দীগ্রামে রাজনৈতিক ক্ষমতা ফিরে পাওয়ার আশায় ২০০৭ সালের ১০ নভেম্বর ‘সূর্যোদয়’ অভিযানের ডাক দিয়েছিল রাজ্যের তৎকালীন শাসক দল সিপিএম। সেদিনের রক্তাক্ত অভিযানে প্রাণ গিয়েছিল জমি আন্দোলনের একঝাঁক নেতা কর্মীর, বেশ কয়েকজন এখনও নিখোঁজ। সেই রক্তাক্ত সংগ্রামের বর্ষপূর্তিতে (Nandigram) প্রতিবছর এই দিনটিতে নন্দীগ্রামের করপল্লীতে আয়োজিত হয় শহীদ স্মরণ অনুষ্ঠান। কিন্তু ২০২১ এর নির্বাচনের আগে শুভেন্দু অধিকারী তৃণমূল ছেড়ে বিজেপিতে যাওয়ার পরেই বদল ঘটেছে রাজ্যের রাজনৈতিক সমীকরণের। আর তার পর থেকেই করপল্লীর এই শহীদ বেদী ঘিরে উত্তেজনার পারদ ক্রমেই ঊর্ধ্বমুখী।
পরিস্থিতি সামাল দিতে এবার আগে থেকেই তৎপর স্থানীয় পুলিশ প্রশাসন। করপল্লীর শহীদ বেদীতে কে আগে অনুষ্ঠান করবেন তা নিয়ে দুই যুযুধান গোষ্ঠী তৃণমূল ও বিজেপি নেতাদের নিয়ে বৈঠক হয়। সেই বৈঠকে প্রথম সভা করার অনুমোদন চায় বিজেপি। সেই মতোই শনিবার সকাল ৮টায় করপল্লীর শহীদ বেদীতে স্মরণ সভা আয়োজন করেছে গেরুয়া শিবির। বেলা ৯টা নাগাদ এই সভায় যোগ দেবেন শুভেন্দু অধিকারী। সাড়ে ৯টায় বিজেপির অনুষ্ঠান শেষ করার কথা রয়েছে বলে জানা গেছে।
অন্যদিকে তৃণমূলের তরফে বেলা ১০টা থেকে করপল্লীতে অনুষ্ঠান আয়োজিত হবে। যেখানে তৃণমূল মুখপাত্র কুনাল ঘোষ, সাংসদ দোলা সেন, মন্ত্রী পূর্ণেন্দু চ্যাটার্জি, জেলার দুই মন্ত্রী অখিল গিরি, বিপ্লব রায়চৌধুরী, প্রাক্তন মন্ত্রী সৌমেন মহাপাত্র সহ নন্দীগ্রামের তৃণমূল নেতৃত্বরা উপস্থিত থাকবেন বলে তৃণমূল সূত্রে জানানো হয়েছে। নন্দীগ্রাম ১ ব্লক তৃণমূলের সভাপতি বাপ্পাদিত্য গর্গ জানিয়েছেন, “সকালে করপল্লীর অনুষ্ঠানের পর বিকেল ৩টায় হাজরাকাটায় সভা রয়েছে। তৃণমূল নেতৃত্বদের পাশাপাশি নন্দীগ্রাম জমি আন্দোলনের সমস্ত নেতারাই এই অনুষ্ঠানে সামিল হচ্ছেন” বলে দাবী জানিয়েছেন তিনি।
নন্দীগ্রামের বিজেপি নেতা মেঘনাদ পাল জানান, “এর আগে প্রতিবার তৃণমূল প্রথমে শহীদ স্মরণ করে। এবার আমাদের দাবী ছিল, আমরাই প্রথমে অনুষ্ঠান করব। গত ৭ নভেম্বর প্রশাসনিক বৈঠকে আমরা সেই দাবী জানাই। এরপর দু পক্ষের সম্মতিতে আমরা সকালে প্রথমে অনুষ্ঠান আয়োজন করছি। এখানে শুভেন্দু অধিকারী ছাড়াও স্থানীয় বিজেপি নেতৃত্ব এবং জমি আন্দোলনের সঙ্গে যুক্ত নেতা কর্মী ও সাধারণ মানুষ উপস্থিত থাকবেন”।
প্রসঙ্গতঃ গত বছর ১০ নভেম্বর করপল্লীর শহীদ স্মরণ অনুষ্ঠানকে ঘিরে ব্যাপক উত্তেজনা ছড়িয়েছিল। শহীদ বেদীতে তৃণমূলের মাল্যদানের পর সেখানে শ্রদ্ধা জানাতে এসে বেদীকে গঙ্গাজল দিয়ে ধুইয়ে শুদ্ধ করা হল বলে দাবী করেন শুভেন্দু। সেই সঙ্গে ওইদিন রাতের অন্ধকারে করপল্লীতে থাকা তৃণমূলের অস্থায়ী মঞ্চে অজ্ঞাত ব্যক্তিরা আগুন ধরিয়ে দেন বলে অভিযোগ ওঠে। সেই ঘটনার প্রতিবাদে অন্যান্য তৃণমূলের নেতা মন্ত্রীদের সামনেই রাষ্ট্রপতি দ্রৌপদি মুরমুকে কটুক্তির অভিযোগ ওঠে মন্ত্রী অখিল গিরির বিরুদ্ধে। যে ঘটনা গোটা দেশজুড়েই আলোড়ন ফেলে দিয়েছিল। সামনের লোকসভা নির্বাচনের প্রাক্কালে দাঁড়িয়ে নন্দীগ্রামের এই ১০ নভেম্বর মঞ্চ ঘিরে তাই উত্তেজনার পারদ চড়ছে ব্যাপক হারে। এদিনের অনুষ্ঠান ঘিরে আবারও কোনও ঘটনা সামনে আশে কিনা সেদিকেই নজর থাকছে সবার।