দিঘা : ঘূর্ণিঝড় ‘দানা’ আছড়ে পড়বে দিঘার পার্শ্ববর্তী উড়িষ্যার উপকুলে। যার প্রভাবে উত্তাল হয়ে উঠতে পারে দিঘার সমূদ্র। বাদ যাবে না নদীগুলিও। তাই আগাম সতর্কতা হিসেবে বুধবার বেলার দিকে দিঘার সৈকত থেকে পর্যটকদের সরিয়ে দেওয়া হয়েছে। সেই সঙ্গে (Digha) সৈকতে যাওয়ার রাস্তাগুলিকে বাঁশের ব্যারিকেড দিয়ে ঘিরে ফেলা হয়েছে। এছাড়াও প্রশাসনের কড়াকড়িতে দিঘার হোটেল থেকে পর্যটকদের দ্রুত বাড়ি ফিরিয়ে দেওয়া শুরু হয়েছে। বুধবার রাত্রি থেকে শুক্রবার পর্যন্ত এই নির্দেশ বলবৎ থাকছে বলে প্রাথমিক ভাবে জানা গেছে।
এদিকে রাজ্য সরকারের নির্দেশে বুধবার দুপুরের পর থেকেই ধাপে ধাপে জলপরিবহন ব্যবস্থা বন্ধ করে দেওয়া হচ্ছে। এর ফলে পূর্ব মেদিনীপুরের হলদিয়া থেকে নন্দীগ্রাম, হলদিয়া থেকে নয়াচর ফেরী সার্ভিস বন্ধ হচ্ছে। এছাড়াও কুকড়াহাড়ি থেকে রায়চক ও ডায়মন্ড হারবার, গেঁওখালি থেকে নুরপুর, গাদিয়াড়া, মহিষাদলের অমৃতবেড়িয়া ও তমলুক থেকে মায়াচর, রসুলপুর ফেরী সার্ভিসও এই সময়কালে বন্ধ রাখা হচ্ছে। ইতিমধ্যে এই বিষয়ে হলদিয়ার টাউনশীপ ঘাটে লাগাতার মাইক প্রচার চালিয়ে যাত্রীদের সতর্ক করে জানিয়ে দেওয়া হচ্ছে তাঁরা যেন কোনও ভাবেই নদীঘাটে না আসেন। তবে পূর্ব মেদিনীপুরের জল পরিবহন বৃহস্পতি ও শুক্রবার এই দু’দিন বন্ধ থাকছে বলে খবর।
বুধবার দিঘার পরিস্থিতি পর্যালোচনায় এলাকায় ঘুরে বেড়িয়েছেন জেলা শাসক পূর্ণেন্দু কুমার মাজী। সেই সঙ্গে স্থানীয় ব্লক ও মহকুমা আধিকারীকরাও দিঘায় হাজির। এছাড়াও দিঘায় রয়েছেন পুলিশের উচ্চপদস্থ আধিকারীকরা। গোটা এলাকাকে নিশ্ছিদ্র নিরাপত্তায় মুড়ে ফেলার লক্ষ্যে পুলিশ ও প্রশাসনে চূড়ান্ত তৎপরতা চলছে।
আবহাওয়া দফতরের পূর্বাভাস মতোই বুধবার বেলা বাড়ার সঙ্গে সঙ্গে বদলাতে শুরু করেছে দিঘা সহ পূর্ব মেদিনীপুরের আবহাওয়ার পরিস্থিতি। দুপুরের পরে আচমকা কালো মেঘে মুখ ঢেকেছে দিঘার আকাশ। সঙ্গে বইছে দমকা হাওয়া। অন্যূদিকে জেলা সদর তমলুক, মহিষাদল, হলদিয়াতে শুরু হয়েছে বিক্ষিপ্ত বৃষ্টি। এই মুহুর্তে দিঘায় আসা পর্যটকদের সুষ্ঠুভাবে বাড়ি ফিরিয়ে দেওয়াই মূল লক্ষ্য বলে জেলা প্রশাসন সূত্রে জানানো হয়েছে। দ্রুত সমূদ্র তীরবর্তী এলাকা খালি করতে জোরদার তৎপরতা চলছে বলে জেলা প্রশাসন সূত্রে জানানো হয়েছে।
জেলা শাসক জানান, “সারা বছরই দিঘায় ঘোরা যায়। তবে এই মুহূর্তে ঝড়ের আশংকায় সতর্কতামূলক ব্যবস্থা হিসেবেই পর্যটকদের বাড়ি ফিরে যেতে অনুরোধ করা হচ্ছে। ঝড়ের জেরে আবহাওয়াও অত্যন্ত খারাপ থাকার আশংকা রয়েছে। তাই সবদিক বিবেচনা করেই পর্যটকদের বাড়ি ফিরে যেতে বলা হয়েছে। সপ্তাহ শেষে পরিস্থিতি স্বাভাবিক হলেই আবারও দিঘা সবার জন্য খুলে দেওয়া হবে”।
জেলা শাসক আরও জানান, “ইতিমধ্যে সমস্ত হোটেল খালি করে পর্যটকদের বাড়ি ফিরে যাওয়ার অনুরোধ করা হয়েছে। সপ্তাহান্তে শনিবার থেকে আবহাওয়ার উন্নতি হলে পুনরায় দিঘায় পর্যটকরা আসতে পারবেন” বলে জানিয়েছেন তিনি। জেলা শাসক জানান, “এখানে নিরাপত্তার বিষয়টি সব থেকে গুরুত্বপূর্ণ। কোনও উৎসাহী পর্যটক এই বিপজ্জনক অবস্থায় সমূদ্রে নামতে গিয়ে যাতে বিপদ ডেকে না আনেন সেই কারনেই সৈকতে যাওয়ার সমস্ত রাস্তা বাঁশের ব্যারিকেড দিয়ে ঘিরে ফেলা হয়েছে” বলে জানিয়েছেন তিনি। জেলা শাসক আরও জানান, “ইতিমধ্যে সমূদ্র তীরবর্তী গ্রামগুলি থেকে বাসিন্দাদের সরিয়ে ফেলার জন্য প্রায় ছয়’শ স্কুল তৈরি রাখা হয়েছে। দ্রুত এলাকাবাসীদের সরিয়ে ফেলার প্রক্রিয়া শুরু করা হবে” বলে জানিয়েছেন তিনি।