Homeদক্ষিণবঙ্গEgra Update : বিতর্ক এড়িয়ে ঝুলিতে শতাধিক পুরষ্কার, তিন দশকে ‘অনন্য বাজিকর’...

Egra Update : বিতর্ক এড়িয়ে ঝুলিতে শতাধিক পুরষ্কার, তিন দশকে ‘অনন্য বাজিকর’ হয়ে উঠেছিল এগরার ভানু !

spot_img
spot_imgspot_img
- Advertisement -

এগরা, পূর্ব মেদিনীপুর : আকাশ জুড়ে ছড়িয়ে পড়া রঙিন প্যারাডাইস, রঙবেরঙের তুবড়ি, গাছবোমা, ছুঁচো, রঙবাতি, হাওয়াইয়ের চোখ ধাঁধানো প্রদর্শনীতে বরাবরই কয়েক কদম এগিয়ে থাকত ভানু ওরফে কৃষ্ণপদ বাগ (Egra Update)। জেলা ছাড়িয়ে তাঁর সুখ্যাতি ছড়িয়ে পড়েছিল পড়শি রাজ্যেও। ভানু’র হাতের কেরামতি রীতিমতো ঈর্ষার কারণ ছিল অন্যদের কাছে। গত ৩ দশকে শতাধিক পুরষ্কার প্রাপ্তির দৌলতে এগরার ভানু হয়ে উঠেছিল এক ‘অনন্য বাজিকর’।

কিন্তু বাদ সাধল মঙ্গলবার দুপুরে ঘটে যাওয়া মর্মান্তিক ঘটনা। এদিন বেলা প্রায় সাড়ে ১২টা নাগাদ এগরা ১ ব্লকের সাহারা গ্রাম পঞ্চায়েতের খাদিকুল গ্রামে ভানু’র বাজি কারখানায় বিকট শব্দে বিস্ফোরণ ঘটে। যেখানে কাজ করতে গিয়ে প্রাণ হারালেন ৯ হতভাগ্য গ্রামবাসী, যার অধিকাংশই মহিলা। আর এই ঘটনার জেরেই জেলার গন্ডি ছাড়িয়ে আলোচনার কেন্দ্রে উঠে এসেছে ভানু’র নাম। কে এই ভানু, কিভাবেই বা তাঁর এমন বাড় বাড়ন্ত তা নিয়ে শুরু হয়েছে জোরদার জল্পনা।

স্থানীয় সূত্রে খবর, দীর্ঘ প্রায় ৩০ বছরেরও বেশী সময় ধরে বাজি তৈরিতে ওস্তাদ ভানু বাগ। তাঁর তৈরি বাজির চাহিদা ছিল বিপুল। ক্রমেই ভানু’র সুখ্যাতি ছড়িয়ে পড়েছিল দূর দূরান্তে। ক্রমেই ভানু হয়ে ওঠে এলাকার সম্ভ্রান্ত ব্যবসায়ী। রাজ্যে তৃণমূলের সরকার আসার পর ধীরে ধীরে শাসক দলে ভানুর ওঠাবসা শুরু হয়। তবে রাজনীতি নিয়ে সেভাবে মাথা ঘামাত না ভানু, পরিবর্তে ব্যবসাই ছিল তাঁর ধ্যান জ্ঞান। প্রথমে ভানু’র কারখানা ছিল তাঁর গ্রামের বাড়িতে। সেখানেও বেশ কয়েকবার দুর্ঘটনা ঘটে।

বছর পাঁচেক আগে গ্রামের বাড়ির কারখানায় বিস্ফোরণে মৃত্যু হয় ভানুর ভাই এবং তাঁর স্ত্রী’র। সেবার ঘটনার পর কিছুদিন গা ঢাকা দেয় ভানু। রাজনীতির ছত্রছায়ায় থাকার সুযোগে পুনরায় বাড়ি ফিরে এসে নয়া কলেবরে মাঠের মাঝে মাটি ভরাট করে নতুন বাজি কারখানা গড়ে তোলে সে। কারখানায় যাওয়ার জন্য তৈরি হয় প্রায় দেড়শ মিটার পাকা রাস্তা। এবার প্রায় ২৫ থেকে ৩০ জন কর্মী নিয়ে শুরু হয় কাজ। বাজি ও মশলা রাখতে কারখানার পাশেই তৈরি করা হয় গোপন কুঠুরি।

মাঝে বছর দু’ই আগে অবৈধ বাজি উদ্ধারে নেমে ভানু’র কারখানাতেও অভিযান চালিয়েছিল এগরা থানার পুলিশ। সেবার বিপুল নিষিদ্ধ বাজি এবং বাজি তৈরির মশলা উদ্ধার হয়। গ্রেফতার করা হয় ভানু’কে। তবে নিজের হাতযশে কিছুদিনের ব্যবধানেই জেল থেকে মুক্তি পেয়ে আবারও মারণ ব্যবসায় ঝাঁপিয়ে পড়ে ভানু। স্থানীয়রা জানিয়েছেন, ভানু এলাকার বিশেষ বর্ধিষ্ণু ব্যবসায়ী হিসেবে পরিচিত ছিল।

সেই সঙ্গে শাসক দলের হাত মাথার ওপরে থাকায় ভানুকে নিয়ে কেউ বিশেষ চর্চা করতে সাহস পেত না। তবে মঙ্গলবারের ভয়াবহ বিস্ফোরণের পর বদলে গিয়েছে এলাকার চেহারা। হাজার হাজার মানুষ ভানু’র এই জীবন নিয়ে খেলা’র বিরুদ্ধে সোচ্চার হয়েছেন। এতগুলো নিরীহ মানুষের প্রাণ গিয়েছে যার জন্য তাঁর কঠোর শাস্তির দাবীতে পথে নেমেছেন এলাকাবাসীরা।

স্থানীয়রা জানিয়েছেন, ভানুর এই কারখানায় প্রায় ৩০ থেকে ৩২ জন কাজ করলে দুর্ঘটনার সময় এখানে প্রায় ১৮ থেকে ২০ জন কাজ করছিল। যার মধ্যে বেশীরভাগই মহিলা কর্মী ছিল। আর যে সময় বিস্ফোরণ ঘটে সেই সময় ভানুও ঘটনাস্থলের আশেপাশেই ছিল বলে খবর। ঘটনার সময় পাশের রান্না ঘরে ভানু ছিল বলেই জানা গেছে। এই বিস্ফোরণের আগুনের ঝলকে তাঁর হাতে চোট লেগেছে বলে খবর। তবে বিস্ফোরণের পরেই ভানু তাঁর গোটা পরিবার নিয়ে রাস্তা ধরে ছুটে পালিয়েছে।

এগরার তৃণমূল বিধায়ক তরুণ মাইতি’র দাবী, “এগরা একটি শান্তিপূর্ণ জায়গা। সেখানে এমন ঘটনা অত্যন্ত হৃদয় বিদারক”। তরুণ জানান, “মুখ্যমন্ত্রী আগেই জানিয়েছেন গত ২০২২ এর ১৯ অক্টোবর ভানু গ্রেফতার হয়েছিল। পরে জামিনে ছাড়া পেয়ে পুনরায় বাজি কারখানা তৈরি করল”।

বিধায়কের দাবী, “রুজি রুটি’র নেশায় কিছু মানুষ অবৈধ বাজি তৈরিতে ঝুঁকে পড়েন। এই নিয়ে প্রায়শই ধরপাকড় হয়। মাঝে মধ্যেই দুর্ঘটনা ঘটে। এর জন্য পুলিশকে সক্রিয় ভাবে এর বিরুদ্ধে পদক্ষেপ নিতে বলেছি”। তরুণ জানান, “ওই ব্যক্তিকে কখনও আমি চিনি না। ব্যক্তিগত ভাবে আমার মিটিং মিছিলে দেখিনি। তিনি আগে সিপিএম করতেন শুনেছি। উনি কোনওদিন তৃনমূলে এসেছেন কিনা বা আমার নির্বাচনে ওনার কোনও ভূমিকা ছিল কিনা সেটা কোনওদিন আমি দেখিনি”।

- Advertisement -

নিয়মিত খবরে থাকতে আমাদের সোশ্যাল সাইটে যুক্ত হয়ে যান

RELATED ARTICLES

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here

- Advertisment -

Most Popular

Recent Comments