নিউজবাংলা ডেস্ক : এতদিন কেন্দ্রের থেকে সরাসরি আর্থিক সুবিধে পেতে হলে (যার পোশাকি নাম ডিবিটি “Direct Benefit Transfer”) উপভোক্তার ব্যাঙ্ক অ্যাকাউন্টের সঙ্গে আধার সংযোগ বাধ্যতামূলক ছিল। তবে রাজ্যের প্রকল্পের ক্ষেত্রে এতদিন সেই কড়াকড়ি ছিল না। এবার লক্ষ্মীর ভান্ডারের টাকা পেতে হলে ব্যাঙ্কে আধার সংযোগ বাধ্যতামূলক বলেই রাজ্য সরকার নির্দেশিকা দিয়ে জানিয়ে দিয়েছে। তবে এই ঘোষণায় বহু মানুষকে যথেষ্ট বিড়ম্বনায় পড়তে হবে বলেই সংশ্লিষ্ট মহলের মত।
ব্যাঙ্কে আধার কার্ড সংযুক্তির ক্ষেত্রে অধিকাংশ সময়ই চূড়ান্ত অনীহা দেখায় ব্যাঙ্ক কর্মীরা। এই নিয়ে তিক্ত অভিজ্ঞতা রয়েছে বহু মানুষেরই। অধিকাংশ ব্যাঙ্কে প্রয়োজনীয় কর্মীদের অভাব, মাত্রাতিরিক্ত গ্রাহকের ভীড়ে আধার সংযুক্তির কাজে প্রায়শই সমস্যা দেখা দেয়। এরজন্য দুয়ারে সরকার ক্যাম্পে ব্যাঙ্ক আধার সংযুক্তির ফর্ম বিনামূল্যে দেওয়া হলেও ব্যঙ্ক কর্তৃপক্ষ সেগুলি দ্রুততার সঙ্গে লিংক না করলে সমস্যা দেখা দিতে পারে।
এরই পাশাপাশি আবার রাজ্যের অধিকাংশ আধার কার্ড ১০ বছরের পুরানো হওয়ায় সেগুলি বাতিলের দোরগোড়ায় এসে পৌঁছেছে। ব্যাঙ্কে আধার লিংক করার পাশাপাশি তাই আধার কার্ডগুলির ডকুমেন্ট আপডেট করে নেওয়াও বাধ্যতামূলক। আধার পোর্টালের দেওয়া সময়সীমা অনুযায়ী আগামী ১৪ জুন ২০২৩ সালের মধ্যে আধার ডকুমেন্ট আপডেট করা যাবে বিনামূল্যে। তারপর কি ঘটবে তা কহতব্য নয়। এরই পাশাপাশি রয়েছে আধার প্যান সংযুক্তির কাজ। আপনাকে সবকিছু ঠিকঠাক রাখতে হলে বেশ কিছু গুরুত্বপূর্ণ বিষয় এখনই বুঝে নিতে হবে।
রাজ্যের তথ্য অনুযায়ী এতদিন পর্যন্ত রাজ্যে লক্ষ্মীর ভান্ডারের গ্রাহক সংখ্যা প্রায় ১ কোটি ৮৭ লক্ষ ৬৩ হাজার মহিলা। এবার দুয়ারে সরকারের মাধ্যমে সেই সংখ্যা আরও বিপুল সংখ্যক বৃদ্ধি পেতে চলেছে বলেই খবর। এই বিপুল সংখ্যক লক্ষ্মীর ভান্ডার প্রাপকের মধ্যে অনেকেরই ব্যাঙ্ক আধার লিংক থাকলেও বহু মানুষেরই তা নেই। এই গুরুত্বপূর্ণ সমস্যার মধ্যে দাঁড়িয়ে আপনার করণীয়গুলি কি কি তা একবার ভালো করে বুঝে নিন।
ডিবিটি আসলে কি?
সরকারের দেওয়া আর্থিক মূল্য সরাসরি উপভোক্তার ব্যাঙ্ক অ্যাকাউন্টে পাঠানোর পদ্ধতি হল ডিবিটি। কেন্দ্র সরকার এলপিজি’র ভর্তুকি দিতে এই পদ্ধতিটি ব্যবহার করে। রাজ্য সরকারও এতদিন উপভোক্তার কাছে সরাসরি বিভিন্ন প্রকল্পের টাকা পাঠালেও এক্ষেত্রে কিছু জায়গায় স্বচ্ছতার অভাব পরিলক্ষিত হচ্ছিল বলে অভিযোগ। তাই কেন্দ্রের পথে হেঁটেই ডিবিটি (লক্ষ্মীর ভান্ডারের টাকা) ব্যাঙ্ক অ্যাকাউন্টে পাঠানোর ক্ষেত্রে আধার ব্যাঙ্ক অ্যাকাউন্ট সংযুক্তির পথে হাঁটল। এর ফলে কোনও উপভোক্তা প্রশাসনের চোখে ধুলো দিয়ে একাধিক ব্যাঙ্ক অ্যাকাউন্টের মাধ্যমে টাকা হাতানোর চেষ্টা করলে তা ব্যর্থ হবে বলেই মনে করা হচ্ছে।
আধার ব্যাঙ্ক অ্যাকাউন্ট সংযুক্তির সম্পর্কে কিছু গুরুত্বপূর্ণ তথ্য-
ব্যাঙ্ক অ্যাকাউন্টের সঙ্গে আধার সংযুক্তির ক্ষেত্রে প্রয়োজনে ভীড় এড়াতে মূল ব্রাঞ্চের পাশাপাশি মিনি ব্রাঞ্চগুলিতেও যোগাযোগ করতে পারেন। যেখানে ফিঙ্গারপ্রিন্টের মাধ্যমে আধার সংযুক্তি করা যাবে। আধার সংযোগের সময় ডিবিটি সিস্টেমটিকে অবশ্যই অ্যাকটিভ করার জন্য ব্যাঙ্কের প্রতিনিধিকে অনুরোধ করবেন।
যাদের একই ব্যাঙ্কে একাধিক অ্যাকাউন্ট রয়েছে তারা একটি অ্যাকাউন্ট রেখে বাকীগুলো বন্ধ করে দিন। যারা এতদিন লক্ষ্মীর ভান্ডারের জন্য জয়েন্ট অ্যাকাউন্ট ব্যবহার করেছেন তাঁদের জন্যও আধার সংযুক্তিতে সমস্যা হতে পারে। যদি জয়েন্ট অ্যাকাউন্ট রাখা বাধ্যতামূলক হয়, সেক্ষেত্রে প্রথম উপভোক্তা হিসেবে যেন লক্ষ্মীর ভান্ডার প্রাপকের নাম ওপরে থাকে তা নিশ্চিত করে নেবেন।
আর যদি ব্যাঙ্ক কর্মীরা আপনাদের সঙ্গে সহযোগিতা না করেন তাহলে বিকল্প ব্যবস্থা রেখেছে ভারতীয় ডাক বিভাগ। আপনারা চাইলে খুব কম টাকা জমা রেখেই ইন্ডিয়ান পোষ্ট পেমেন্ট ব্যাঙ্কে অ্যাকাউন্ট খুলে নিন। এখানে ডিবিটি সংযোগ করেই অ্যাকাউন্ট খোলা হচ্ছে বলেই সূত্রের খবর। কেন্দ্রের নির্দেশে ইন্ডিয়ান পোস্ট পেমেন্ট ব্যাঙ্কে আধার সংযোগে ডিবিটি সিস্টেমযুক্ত অ্যাকাউন্ট খোলা খুবই সহজ ও দ্রুততার সঙ্গে হচ্ছে বলে জানা গেছে।
এক্ষেত্রে আপনার আধার কার্ডের ডকুমেট আপডেট করে নেওয়ায় আবশ্যিক। সেক্ষেত্রে আপনার করণীয়-
আপনার আধার কার্ডের সঙ্গে ফটো আইডি ও ঠিকানার প্রমাণপত্র নতুন করে সংযোগ করতে হবে।
এরজন্য অবশ্যই প্রথমে আধারের সঙ্গে মোবাইল নম্বর যোগ করতে হবে। ১টি মোবাইল নম্বরে ৩জনের আধার সংযোগ করা যায়। যাদের আগে থেকেই আধার ফোন নম্বর যুক্ত রয়েছে তাঁদের আর নতুন করে সংযোগ করার প্রয়োজন নেই।
নিকটবর্তী তথ্যমিত্র কেন্দ্র বা আধার সেবা কেন্দ্র অথবা বিশ্বস্ত কাফেতে গিয়ে ঠিকানা ও ফটো আইডি প্রমাণপত্র হিসেবে রেশনকার্ড, প্যান, ভোটারকার্ডের মতো ডকুমেন্ট নিয়ে গিয়ে আধারের ডকুমেন্ট আপডেট করে নিন। সঙ্গে অবশ্যই ফোনটি রাখতে হবে। যে ওটিপি দিলে তবেই আধার কার্ডের প্রোফাইলটি আপডেট করা যাবে।
এছাড়াও বাড়িতে বসেও নিজে থেকেই আধার ডকুমেন্ট সংযোগ করে নিতে পারেন। বিস্তারিত নীচের দেওয়া লিংকে ক্লিক করে দেখে নিন।
এবার আসি প্যান ও আধার কার্ড সংযোগের কাজটিও কিন্তু আপনাকে অবশ্যই সেরে নিতে হবে। না হলে প্যান কার্ডের অভাবে পরবর্তীকালে ব্যাঙ্ক অ্যাকাউন্ট নিয়ে সমস্যা দেখা দিতে পারে। করণীয় কি-
আপনি আপনার আধার কার্ড ও প্যান কার্ড সঙ্গে আধারে যুক্ত ফোনটি নিয়ে নিকটবর্তী তথ্যমিত্র কেন্দ্রগুলিতে যান। প্রতিটি সংযোগের জন্য এখন ১ হাজার টাকা লাগবে। যারা প্যানকার্ড এখনও তৈরি করেননি তাঁরাও প্রয়োজনে নতুন কার্ড বানিয়ে ফেলুন।
প্যান ও আধার কার্ড ব্যাঙ্ক অ্যাকাউন্টের সঙ্গে যুক্ত করে নিন। যাতে করে আগামীদিনে আপনার সরকারী সাহায্য পেতে কোনও সমস্যা না হয়।