ময়না : আদালতের হস্তক্ষেপে অবশেষে রাজনৈতিক সংঘর্ষে উত্তপ্ত ময়নায় জনসভা করার অনুমতি পেয়েছে বিজেপি। আজ শনিবার শুভেন্দু অধিকারীর (Suvendu Adhikari) নেতৃত্বে বাকচার জনসভায় বিপুল জমায়েতের লক্ষ্যে বিজেপির অন্দরে সাজো সাজো রব। এই সভা থেকেই ময়না বিধানসভা এলাকায় ত্রিস্তর পঞ্চায়েতে একচেটিয়া জয়ের বার্তা দেবেন শুভেন্দু। বিজেপির দাবী, শাসকদল তৃণমূল ময়নাকে কব্জা করার যতই চেষ্টা চালাবে ততই তাঁদের পায়ের তলার মাটি আলগা হবে।
গত বিধানসভা নির্বাচনের আগে থেকেই প্রচারে শিরোনামে উঠে আসে ময়নার বাকচা। ক্রমাগত রাজনৈতিক সংঘর্ষ, বিপুল পরিমানে বোমা গুলির দাপটে বারে বারে কেঁপে উঠেছে গোটা এলাকা। বিধানসভা নির্বাচনে ময়নায় বিজেপি প্রার্থীর জয়ের পেছনে এই বাকচার ভূমিকা অপরিসীম। মাঝে মধ্যেই এই এলাকায় কখনও বোমা বিস্ফোরণ, কখনও শয়ে শয়ে বোমা উদ্ধারের ঘটনা সামনে আসে। দিন কয়েক আগেই আবারও নতুন করে রাজনৈতিক সংঘর্ষের জেরে প্রচারের আলোয় উঠে এসেছে বাকচা। বিজেপির সভায় তৃণমূলের হামলার অভিযোগে উত্তেজনা ছড়ায়।
তারপরেই নিজেদের শক্তিকেন্দ্রে সভা করার কথা ঘোষণা করেন বিরোধী দলনেতা শুভেন্দু অধিকারী। কিন্তু রাজনৈতিক উত্তেজনা প্রবন এলাকায় সভার অনুমতি দেয়নি পুলিশ। এরপরেই কলকাতা হাইকোর্টের দ্বারস্থ্য হয় শুভেন্দু। ময়নায় সভা করার অনুমতি চেয়ে আদালতে মামলা করেন বিজেপি নেতৃত্বরা। বিজেপির তরফে আবেদনে জানানো হয়, ময়নার ইসমালিচক ফুটবল গ্রাউন্ডে সভা করতে চায় তাঁরা। কিন্তু রাজ্যের তরফে আপত্তি জানিয়ে বলা হয়, ওই মাঠে ১০ হাজারের বেশী লোকের জায়গা হবে না। তাই অতিরিক্ত ভীড় না হলে সভা করায় রাজ্য কোনও বাধা দেবে না।
দুই পক্ষ্যের বক্তব্য শোনার পর রাজশেখর মান্থার বেঞ্চ সভার অনুমোদন দেওয়ার পাশাপাশি কিছু গাইডলাইনও দেয়। যেখানে বলা হয়েছে, শব্দ বিধি মানার পাশাপাশি অতিরিক্ত ভীড় যেন না হয় সেদিকেও নজর দিতে হবে। পুলিশকেও উপযুক্ত সুরক্ষাবিধির বন্দোবস্ত করতে নির্দেশ দেয় আদালত। আদালতের নির্দেশ পেয়েই পূর্ণ উদ্যমে শনিবারের সভার জন্য ঝাঁপিয়েছে বিজেপি নেতৃত্বরা।
বিজেপির তমলুক সাংগঠনিক জেলার সহ সভাপতি আশিস মন্ডলের দাবী, “বিজেপি কোথাও সভা করতে গেলেই তার অনুমোদন দেওয়া হয় না। এর বিরুদ্ধে আমাদের হাইকোর্টে যেতে হচ্ছে। কিন্তু আদালতের নির্দেশে শেষ পর্যন্ত রাজ্য প্রশাসন পিছু হঠতে বাধ্য হয়েছে”। তাঁর দাবী, “পুলিশকে কাজে লাগিয়ে বিজেপিকে রোখার চেষ্টা হচ্ছে সর্বত্র। আসন্ন পঞ্চায়েত নির্বাচনে ময়না বিধানসভা দেখিয়ে দেবে কিভাবে মানুষের রায় নিয়ে ভোটে জেতা যায়”।
আশিসের দাবী, “বাকচায় পুলিশকে সঙ্গে নিয়ে বারে বারে হামলা চালাচ্ছে তৃণমূল। সেই সঙ্গে বিজেপি নেতাদের বেছে বেছে মিথ্যা মামলায় ফাঁসানোর চেষ্টা চালাচ্ছে। এরই বিরুদ্ধে লড়াইয়ের ডাক দিয়েছেন শুভেন্দু অধিকারী। আগামী ত্রিস্তর পঞ্চায়েত নির্বাচনে আমরা একক শক্তিতে সবকটি আসনে জয়লাভ করব”।
অন্যদিকে তৃণমূলের তরফে মহিষাদলের বিধায়ক তিলক কুমার চক্রবর্তীর দাবী, “ভারতীয় জনতা পার্টি ময়নাকে ক্রমাগত উত্তপ্ত করছে। ওরা যেখানে সভা করছে সেখানেই আগুন জ্বালিয়ে দিচ্ছে। ময়নার সাম্প্রতিক পরিস্থিতি দেখেই প্রশাসন সেখানে সভা করতে নিষেধ করেছিল”।
তাঁর দাবী, “বিজেপি ঝামেলা পাকিয়ে রাজ্যকে উপদ্রুত ঘোষণা করার দাবী জানাচ্ছে। ময়নাতেও সেই একই ছকে ক্রমাগত উত্তেজনা ছড়ানো হচ্ছে”। তবে এরই পাশাপাশি তিলকের মন্তব্য, “আমরা কেউ আইনের ঊর্ধ্বে নয়। আদালতের নির্দেশ সকলকে মাথা পেতে নিতে হবে। আদালতের নির্দেশে যা যা ব্যবস্থা করার প্রশাসন নিশ্চয়ই সেই মতো ব্যবস্থা নেবে বলেই আমরা আশাবাদী”।