দিঘা : বঙ্গোপসাগরের তটে নতুন প্রজাতির ভাসমান সামূদ্রিক নেমাটোড শ্রেণীর প্রাণীর অস্তিত্ব আবিষ্কার করলেন একদল সমূদ্র বিজ্ঞানী। পশ্চিমবঙ্গের চম্পা নদীর মোহনা এলাকায় পারাসফারোলাইমাস বেঙ্গালেনসিস এসপি. নভ. (Parasphaerolaimus bengalensis sp. nov.) নামের মুক্ত প্রজাতির এই নতুন জীবটি আবিষ্কার করেছেন বিজ্ঞানীরা। সমূদ্র বিজ্ঞানের আন্তর্জাতিক জার্নাল ‘থ্যালাসাস’এ ইতিমধ্যেই এই আবিষ্কারের বিষয়টিকে স্বীকৃতি দিয়ে প্রতিবেদন প্রকাশিত হয়েছে।
জুওলজিক্যাল সার্ভে অফ ইন্ডিয়ার (জেডএসআই), সামুদ্রিক অ্যাকোয়ারিয়াম অ্যান্ড রিজিওনাল সেন্টার (জেডএসআই) এবং দীঘার বিজ্ঞানীদের নিরলস প্রচেষ্টায় (Wild Life) এই মুক্ত নেমাটোড প্রজাতির প্রাণীটির আবিষ্কার করেছেন। সমূদ্র বিজ্ঞানী ডঃ এস বালাকৃষ্ণান-এর নেতৃত্বে একটি গবেষণা দল এই আবিষ্কারটি সম্পন্ন করেছেন। এই দলের অন্য সদস্যরা হলেন চৈতি মান্না জেডএসআই (MARC, Digha), এবং তামিলনাড়ুর থিরুভাল্লুভার বিশ্ববিদ্যালয়ের অধীন সি. আবদুল হাকীম কলেজ (ওটিও) এর ডাঃ কাপুলি গণি মোহাম্মদ থামেমুল আনসারি।
এই আবিষ্কারের বিষয়ে ডঃ এস বালাকৃষ্ণান জানান, এটি ভারতীয় জল থেকে আবিষ্কৃত একটি শিকারী মুক্ত সামুদ্রিক নেমাটোড প্রজাতির প্রাণী, যার বিষয়ে প্রথমবার কোনও তথ্য প্রকাশ্যে এসেছে”। তিনি জানিয়েছেন, “গবেষকরা ২০২৪ সালের ১৪ আগস্ট তারিখে বঙ্গোপসাগরের সাথে চম্পা নদীর মিলনস্থল থেকে প্রায় ১০ সেমি গভীরতায় একটি হাত কোর ব্যবহার করে সংগৃহীত পলির নমুনা থেকে এই নেমাটোড প্রজাতির নতুন প্রাণিটিকে উদ্ধার করেছেন”।
তিনি জানান, “নতুন প্রজাতির প্রাণিটি মনহিস্টেরিডা বর্গের অন্তর্গত এবং স্বতন্ত্র দেহ বৈশিষ্ট্য ধারণ করে। এই প্রানীর বৈশিষ্ট্য হল পার্শ্বীয় অ্যালে সহ ডোরাকাটা কিউটিকল, সার্ভিকাল সেটের অসংখ্য অনুদৈর্ঘ্য সারি, গোলাকার দূরবর্তী প্রান্ত সহ বাঁকা স্পিকুল, বরং বড় ডোরসো-কডাল গুবারনাকুলাম অ্যাপোফাইসিস জোড়াযুক্ত অণ্ডকোষ এবং মনোপ্রোডেলফিক ডিম্বাশয় সহ স্ত্রী অণ্ডকোষের উপস্থিতি”।
বালাকৃষ্ণান জানান, “এই আবিষ্কার সামুদ্রিক জীবনের বিশাল ও বিস্তৃত বৈচিত্র্য সম্পর্কে আলোকপাত করে এবং সামুদ্রিক মৎস্যজীবী বৈচিত্র্য সম্পর্কে আমাদের ক্রমবর্ধমান উপলব্ধিকে বাড়িয়ে তোলে। যদিও সামুদ্রিক অবক্ষেপের মধ্যে মুক্ত-সামুদ্রিক নেমাটোডগুলি সর্বাধিক সংখ্যায় প্রভাবশালী প্রাণী, তবুও বিশ্বের অনেক অংশে নতুন এই প্রাণীর প্রজাতি নথিভুক্ত করা হচ্ছে” বলে জানিয়েছেন তিনি।
গত ২৭ মে মঙ্গলবার ‘থ্যালাসাসাস’ নামের আন্তর্জাতিক জার্নাল অব মেরিন সায়েন্সেস –এর অনলাইন সংস্করণে এই গুরুত্বপূর্ণ আবিষ্কারের বিষয়টিকে স্বীকৃতি দিয়ে প্রতিবেদন প্রকাশিত হয়েছে। গবেষণায় জানা যাচ্ছে যে, ম্যানগ্রোভ জলাভূমি দ্বারা বেষ্টিত এলাকার সমৃদ্ধ জীববৈচিত্র্যের বৈশিষ্ট্য হল এটি অত্যন্ত পুষ্টি সমৃদ্ধ আবাসস্থল যা বেন্থিক সম্প্রদায়ের উৎপাদনশীলতাকে উৎসাহিত করে।
বালাকৃষ্ণান ব্যাখ্যা দিয়ে বলেন, “নেমাটোডগুলি সাধারণত তাদের পরজীবী রূপের জন্য পরিচিত, তবে প্রায় সব ধরণের আবাসস্থলে পাওয়া মুক্ত-জীবিত রূপগুলিতে তাদের বৈচিত্র্য বিশাল। মুক্ত-জীবিত নেমাটোডগুলি সামুদ্রিক খাদ্য জালে একটি গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করে এবং এটি একটি গুরুত্বপূর্ণ পরিবেশগত নির্দেশক প্রজাতি, দূষণকারীর প্রতি সংবেদনশীল এবং তাদের জনসংখ্যা কাঠামো পরিবেশের স্বাস্থ্যকে প্রতিফলিত করতে পারে”। বালাকৃষ্ণান জানিয়েছেন, “গবেষণা দলটি সামুদ্রিক মিওফুনাল সম্প্রদায়কে বোঝার জন্য আরও গবেষণা এগিয়ে নিয়ে যেতে চায় এবং অন্যান্য অনাবিষ্কৃত প্রাণীর জন্য নিকটবর্তী অঞ্চলে অনুসন্ধান করার পরিকল্পনা করেছে” বলে জানিয়েছেন তিনি।