NewzBangla, Haldia : ফেসবুকে আলাপ। তারপর জমিয়ে প্রেম। অবশেষে ১৬ বছরের এক নাবালিকা কন্যাকে ফুসলিয়ে সটান দিল্লীর পতিতাপল্লীতে বিক্রী করে দিয়েছিল একটি চক্র। শুক্রবার এই মামলার ৬ অভিযুক্তকে কঠোরতম সাজা শোনাল পূর্ব মেদিনীপুরের (Crime Report) হলদিয়ার পকসো আদালত। মামলার মূল অভিযুক্তকে আমৃত্যু কারাবাসের পাশাপাশি অপর এক অভিযুক্তের ২০ বছরের কারাদন্ডের সাজা ঘোষণা হয়েছে। এছাড়াও আরও ৪ অভিযুক্তকে ১২ বছরের সশ্রম কারাদন্ডের নির্দেশ দেওয়া হয়েছে।
এই মামলার সরকারী আইনজীবি দেবরঞ্জন ব্যানার্জী (স্পেশাল পিপি) জানিয়েছেন, “এই মামলায় আরও দুই অভিযুক্ত পলাতক। ধরা পড়লে তাদেরও কঠোরতম শাস্তির মুখে পড়তে হবে” বলে জানিয়েছেন তিনি। সেই সঙ্গে দেবাঞ্জনের মতে, “যে নৃশংসতায় একটি মেয়েকে বিক্রী করে দেওয়া হয়, নাবালিকাকে বিয়েতে বাধ্য করা হয় তা অত্যন্ত ঘৃণ্য অপরাধ। এই সামাজিক ব্যাধির বিরুদ্ধে সকলকেই রুখে দাঁড়াতে হবে”।
সূত্রের খবর, ২০১৭ সালে দক্ষিণ ২৪ পরগণার জয়নগরের বাসিন্দা সাহাজামাল মোল্লা নামের এক যুবক ফেসবুকে নিজেকে রাকেশ পরিচয় দিয়ে হলদিয়ার এক নাবালিকার সঙ্গে প্রেমের অভিনয় করে। এরপর বিয়ের প্রতিশ্রুতি দিয়ে ওই বছরের ২৫ অক্টোবর নাবালিকাকে বাড়ি থেকে নিয়ে পালায় অভিযুক্ত। হলদিয়া থেকে দিল্লী নিয়ে গিয়ে ওই নাবালিকাকে দেহ ব্যবসার কাজে বিক্রী করে দেওয়া হয়। ইতিমধ্যে মেয়েকে না পেয়ে ঘটনার পরের দিন হলদিয়া থানায় মামলা দায়ের করে নাবালিকার পরিবার (কেস নং ১০৯/২০১৭)।
এই ঘটনার তদন্তে নেমে নাবালিকার ফোন কলের সূত্র ধরে হলদিয়া থানার পুলিশ দিল্লী থেকে মেয়েটিকে উদ্ধার করে। সেই সঙ্গে এই ঘটনায় জড়িত মূল অভিযুক্ত সহ আরও একাধিক ব্যক্তিকে পাকড়াও করে পুলিশ। পরে এদের মধ্যে বেশ কয়েকজন জামিনে ছাড়াও পেয়ে যায়। একাধিক সাক্ষীর বয়ান ও বিভিন্ন তথ্য প্রমাণের ভিত্তিতে অবশেষে এই ঘটনায় ধৃতদের বিরুদ্ধে অভিযোগ প্রমাণিত হয়। শুক্রবার ধৃতদের বিরুদ্ধে সাজা ঘোষণা করেছেন হলদিয়ার পকসো আদালতের বিচারক।
মামলার সরকারী আইনজীবি দেবরঞ্জন ব্যানার্জী জানান, “এই মামলায় অভিযুক্তদের বিরুদ্ধে (u/s 363/366A/370/370A/372/373/376/109/120B IPC, Sec 4/6/17 POCSO, Sec 3/4/5/6 ITPA) ধারায় মামলা দায়ের হয়। মামলার মূল অভিযুক্ত সাহাজামাল মোল্লা ওরফে রাকেশ’কে আজীবন (আমৃত্যু) কারাবাসের সাজা শোনান হয়েছে। এছাড়াও আর এক অভিযুক্ত শালু সিং এর বিরুদ্ধে ২০ বছরের সাজা ঘোষণা হয়েছে”।
তিনি জানান, “এই ঘটনায় জড়িত বাকী চার অভিযুক্ত প্রভীন কুমার (ওরফে রিঙ্কু), মনীষা, মেরী এবং সেহেনওয়াজ বেগক (ওরফে ইন্দু)কে ১২ বছরের কারাবাসের সাজা শোনানো হয়েছে। সেই সঙ্গে পীড়িত নাবালিকাকে ৩ লক্ষ টাকা ক্ষতিপূরণেরও নির্দেশ দেওয়া হয়েছে”। তিনি জানান, “এই মামলার অপর দুই অভিযুক্ত মেরীর পুত্র রাজকিশোর এবং রাধা এখনও বেপত্তা। এরাও মামলার মূল অভিযুক্ত। ধরা পড়লে এদের কমপক্ষ্যে ১২ বছরের সাজা হবে”।