নিউজবাংলা ডেস্ক : লোকসভা নির্বাচনের আগেই খেজুরিতে বড়সড় ধাক্কা খেল তৃণমূল শিবির। দলবদলু পঞ্চায়েত সমিতির সভাপতি আচমকা তৃণমূল ছেড়ে বিজেপিতে ফিরে যাওয়ায় শাসকদলের হাতছাড়া হয়ে গেল খেজুরি-২ সমিতি। এর আগে সমিতির বোর্ড গঠনের মুহূর্তে তৃণমূলে যোগ দিয়ে সভাপতি পদে বসেছিলেন বিজেপির টিকিটে জয়ী উদয়শংকর মাইতি। এই নিয়ে (Khejuri Agitation) গত এক বছরে একাধিকবার উদয়শংকরের ওপর হামলার অভিযোগ উঠেছিল বিজেপির বিরুদ্ধে। সেই উদয়শংকরই লোকসভা নির্বাচনের মুখে শুক্রবার পুনরায় দল বদলে নিজের পুরানো শিবিরে ফিরে গেলেন বলে খবর। এর জেরে খেজুরি ২ পঞ্চায়েত সমিতি তৃণমূলের হাতছাড়া হল বলে রাজনৈতিক মহলের দাবী।
সেই সঙ্গে এই ঘটনার পরেই ব্যাপক উত্তেজনা ছড়ায় এলাকায়। বিজেপির দাবী, শুক্রবার রাতেই খেজুরির হলুদ বাড়িতে বিজেপির পঞ্চায়েত প্রধানের বাড়িতে ব্যাপক বোমাবাজি, হামলা, অগ্নিসংযোগের ঘটনা ঘটেছে। পঞ্চায়েত সমিতির সভাপতির দল বদলের জেরে ক্ষমতা হারিয়েই এবার পঞ্চায়েত প্রধানের বাড়িতে তৃণমূলের দুষ্কৃতীরা হামলা চালিয়েছে বলে দাবী করেছে বিজেপি। যদিও তৃণমূলের তরফে এই হামলার ঘটনায় বিজেপির গোষ্ঠী কোন্দলকেই দায়ী করা হয়েছে।
সূত্রের খবর, শুক্রবার সন্ধ্যায় খেজুরির হলুদবাড়িতে বিজেপির একটি সভায় গিয়ে আনুষ্ঠানিক ভাবে তৃণমূল ছেড়ে বিজেপিতে যোগ দেন উদয়শংকর। মঞ্চে দাঁড়িয়ে প্রধানমন্ত্রী সহ শুভেন্দু অধিকারীর নামে জয়ধ্বনি দিয়ে পুনরায় ঘর ওয়াপসি করেন উদয়। এর এরফলে খেজুরি ২ পঞ্চায়েত সমিতিতে তৃণমূল কোনঠাসা হয়ে গেল বলে খবর। এবার এই পঞ্চায়েত সমিতিটি পুরো দস্তুর বিজেপির হাতে চলে গেল বলেই দাবী করেছে গেরুয়া শিবির। লোকসভা নির্বাচনের মুখে দাড়িয়ে এই ঘটনা বিজেপি শিবিরকে অতিরিক্ত অক্সিজেন জোগাবে বলেই দাবী করেছেন বিজেপি নেতৃত্বরা।
দল বদলের পর উদয়ের দাবী, “আমি দীর্ঘদিনের বিজেপি কর্মী। তবে পঞ্চায়েতের সময় দলের সঙ্গে মনোমালিন্যের জেরে আমি তৃণমূলে চলে গিয়েছিলাম। এবার আমি নিজের ঘরে ফিরতে পেরে ভীষণ আনন্দিত হয়েছি। খুব শীগগিরই আমি শুভেন্দু অধিকারীর হাত ধরে আনুষ্ঠানিক ভাবে বিজেপিতে যোগদান করব। আমার গোটা জীবনে আর কখনও আমি বিজেপি ছেড়ে যাব না এই কথা দিচ্ছি”।
প্রসঙ্গতঃ গত পঞ্চায়েত নির্বাচনে খেজুরি ২ পঞ্চায়েত সমিতির ১৫টি আসনের মধ্যে ৯টিতে বিজেপি ও ৬টিতে তৃণমূল জয়ী হয়। তবে বোর্ড গঠনের ঠিক আগের মুহূর্তে পঞ্চায়েত সমিতির ২ বিজেপি সদস্য তৃণমূলে যোগ দেয়। যার জেরে সমিতির সভাপতি ও সহ সভাপতি নির্বাচনে তৃণমূল জয়ী হয়। আর সভাপতি পদে বসেন দলবদলু বিজেপি সদস্য উদয়শংকর মাইতি। এখন উদয় বিজেপিতে ফিরে যাওয়ায় তৃণমূলের সংখ্যা দাঁড়াল ৭ আর বিজেপির হাতে গেল ৮টি আসন। এর জেরে পঞ্চায়েত সমিতির রাশ এবার বিজেপির হাতে থাকবে বলেই দাবী করেছে গেরুয়া শিবির।
এই বিষয়ে খেজুরি ২ ব্লক তৃণমূলের সভাপতি সমুদ্ভব দাস জানান, “কয়েকদিন ধরেই উদয়শংকরের সঙ্গে যোগাযোগ করতে পারছিলাম না। বিভিন্ন মাধ্যমে জানতে পারলাম উদয় বিজেপিতে যোগ দিয়েছেন। ওনাকে এরজন্য ধন্যবাদ জানাই। তবে এই ঘটনায় খেজুরির বিজেপি দুর্বল হয়ে গেল ভাবার কোনও কারণ নেই। আমরা খেজুরিতে ভালো অবস্থায় আছি। আসন্ন লোকসভা নির্বাচনে আমরা খেজুরি থেকে ভালো লিড পাব আশা করছি। সেই সঙ্গে তিনি জানান, “এই মুহূর্তে অংকের হিসেবে পঞ্চায়েত সমিতি বিজেপির হাতে চলে গেল। তবে সহ সভাপতির পদটি তৃণমূলের হাতেই থাকছে”।
তবে দলবদলের ঘটনার পর থেকেই নতুন করে উত্তেজনা ছড়িয়ে পড়েছে খেজুরির হলুদবাড়ি অঞ্চলে। শুক্রবার রাতে খেজুরির হলুদ বাড়ি গ্রাম পঞ্চায়েতের প্রধান নিতাই মন্ডলের বাড়িতে ব্যাপক বোমাবাজি করা হয়। সেই সঙ্গে পুড়িয়ে দেওয়া হয় তাঁর মোটরবাইকটিও। কে বা কারা এই কাণ্ড ঘটিয়েছে তা স্পষ্ট ভাবে জানাতে পারেনি পরিবারের লোকজন। তিনিই এই দল বদলের পেছনে মূল ভূমিকায় ছিলেন বলে খবর। খবর পেয়ে রাতেই খেজুরি থানার পুলিশ ঘটনাস্থলে ছুটে আসে। এলাকায় থাকা সিসিটিভি ফুটেজ খতিয়ে দেখে দুষ্কৃতীদের সনাক্ত করার চেষ্টা চালাচ্ছে খেজুরি থানার পুলিশ। এই ঘটনাকে কেন্দ্র করে ব্যাপক উত্তেজনো ছড়িয়েছে এলাকায়। পুলিশ সূত্রে খবর, এই ঘটনার পর সারারাত নিতাই মন্ডলের বাড়িতে পুলিশ প্রহরা দেওয়া হয়েছে। শনিবার সকাল থেকেও দফায় দফায় উত্তেজনা ছড়িয়েছে এলাকায়। গোটা ঘটনার তদন্ত শুরু করেছে খেজুরি থানার পুলিশ।
নিতাই মন্ডলের ছেলে সত্যজিৎ জানান, “গতকাল রাত্রি ১টা নাগাদ আচমকাই আমার বাড়ির ছাদে উঠে একটা বোমা মারা হয়। বাড়ির পাশে আরও একটি বোমা মারা হয়। তারপরেই দেখতে পাই আমার বাইকটিতে আগুন ধরিয়ে দিচ্ছে দুষ্কৃতীরা। আমি ফোন করে সবাইকে ডাকাডাকি করি। খবর পেয়ে খেজুরি থানার পুলিশ ঘটনাস্থলে এসে রাতে দুটি তাজা বোমা উদ্ধার করে নিয়ে যায়। আজ সকালে বাড়ির ছাদে আরও দুটি বোমা উদ্ধার হয়েছে। এই ঘটনায় আমরা ভীষণ আতংকিত হয়ে রয়েছি” বলে জানিয়েছেন তিনি।