নিউজবাংলা ডেস্ক : অনেক ঢাক ঢোল পিটিয়ে রাজভবনে দেখানো হল শ্লীলতাহানির ঘটনার দিনের সিসিটিভি ফুটেজ। সর্ব সাকুল্যে ১০০ জনকে ভিডিও দেখায় ছাড়পত্র দেওয়ার কথা জানিয়েছিল রাজভবন। তবে বৃহস্পতিবার মেরেকেটে তার অর্ধেকেরও কম লোকেদের সামনে রাজভবনের সিসিটিভি ফুটেজ চালানো হল। রাজভবনের বাইরের (WB Governor) নর্থ গেটের সামনের ভিডিও ছাড়া আর কোনও জায়গায় সিসিটিভির ফুটেজ প্রকাশ করা হয় নি এদিন।
এই ফুটেজে দু’বার নির্যাতিতা মহিলাকে দেখা গেল, একবার তিনি পুলিশ কিয়স্কে গেলেন এবং সেখান থেকে বেরিয়ে পাশের কিয়স্কে দীর্ঘক্ষণ রইলেন। এই ভিডিও ফুটেজে কোথাও সেদিনের ঘটনাস্থলের কোনও মুহূর্ত উদ্ঘাটন হয়নি বলেই প্রত্যক্ষদর্শীদের মত। তবে ভিডিওটি ইতিমধ্যেই নতুন এক বিতর্কের জন্ম দিয়েছে বলে খবর।
নির্যাতিতা মহিলার অভিযোগ, সিসিটিভি ফুটেজ প্রদর্শনের মাধ্যমে তাঁর ছবি সবার সামনে উন্মুক্ত করে দিয়েছে রাজভবন। আদালতের স্পষ্ট নির্দেশে যেখানে বলা হয়েছে, অত্যাচারিত মহিলার কোনও ছবি, নাম বা পরিচিত প্রকাশ করা যায় না। তারপরেও রাজভবন থেকে অবলীলায় অত্যাচারিত মহিলার মুখ প্রদর্শিত করা হয়েছে।
এই নিয়ে তিনি পুনরায় পুলিশের দ্বারস্থ্য হওয়ার ভাবনা চিন্তা করছেন বলে আনন্দবাজার অনলাইন সূত্রে খবর। সেই সঙ্গে নির্যাতিতা মহিলার আক্ষেপ, তাঁর সঙ্গে যে অত্যাচারের ঘটনা ঘটেছে তার সুবিচার তিনি পাচ্ছেন না। প্রোটোকলের গেরোয় কিভাবে এই ঘটনার বিচার হবে তা ভেবেই কুল পাচ্ছেন না নির্যাতিতা।
প্রসঙ্গতঃ গত ২রা মে বিকেল নাগাদ রাজভবনে কর্মরত এক অস্থায়ী মহিলা কর্মী সেখানকারই পুলিশ কিয়স্কে ছুটে গিয়ে রাজ্যপালের বিরুদ্ধে নজির বিহীন অভিযোগ তোলেন। মহিলাকে দু’বার শ্লিলতাহানী করা হয়েছে বলে অভিযোগ জানান মহিলা। এরপরেই হেয়ারস্ট্রিট থানার পুলিশ এসে মহিলাকে থানায় নিয়ে যায় এবং তাঁর অভিযোগের ভিত্তিতে ঘটনার তদন্ত শুরু করে পুলিশ।
তবে ঘটনার তদন্ত শুরু হতেই রাজভবনে পুলিশের প্রবেশে নিষেধাজ্ঞা জারি করেন রাজ্যপাল। সেদিনের ঘটনার সিসিটিভি ফুটেজ চাওয়া হলে পুলিশকে তা দিতে নিষেধ করেন রাজ্যপাল। পরিবর্তে জনতার দরবারে ‘সচ কা সামনা’ করার কথা ঘোষণা করেন রাজ্যপাল সিভি আনন্দ বোস।
বৃহস্পতিবার অনেক ঢাক ঢোল পিটিয়ে সেই দিনের ঘটনার সিসিটিভি ফুটেজ প্রকাশ করে রাজভবন। কিন্তু সেখানে কোথাও মহিলার তোলা শ্লিলতাহানীর ঘটনাকে খন্ডন করার মতো মুহূর্তের সিসিটিভি ফুটেজ প্রকাশ করা হয়নি। পরিবর্তে সবার চোখের সামনে থাকা রাজভবনের নর্থ গেটের সামনের ফুটেজ তুলে ধরা হয়েছে রাজভবনের তরফ থেকে।
এই ঘটনা নিয়ে ইতিমধ্যেই ময়দানে নেমে পড়েছে তৃণমূল। মন্ত্রী শশী পাঁজা, চন্দ্রিমা ভট্টাচার্য প্রমূখদের মতে, এই সিসিটিভি ফুটেজ থেকে কিছুই তো প্রকাশ পেল না। ‘সচ কা সামনা’র নাম করে যা কিছু প্রদর্শিত হল তা নিতান্তই প্রহসন ছাড়া আর কিছু নয়।
রাজভবনের তরফে যে ফুটেজ দেখানো হয়েছে, সেখানে নর্থ গেটের সামনের দু’টি ক্যামেরার রেকর্ডিং রয়েছে। মোট তিনটি ধাপে ২ মে বিকেলের ফুটেজ দেখিয়েছেন রাজভবন কর্তৃপক্ষ। প্রথম ফুটেজের সময় বিকেল ৫টা ৩১ মিনিট থেকে ৫টা ৪২ মিনিট পর্যন্ত। দ্বিতীয় ফুটেজের সময় ৫টা ৩২ মিনিট থেকে ৬টা ৩২ মিনিট পর্যন্ত। তৃতীয় ফুটেজটি চলেছে সন্ধ্যা ৬টা ৩২ মিনিট থেকে ৬টা ৪১ মিনিট পর্যন্ত।
১ ঘণ্টা ১৯ মিনিটের এই ফুটেজে রাজ্যপালের বিরুদ্ধে অভিযোগকারিণী মহিলাকে দেখা গিয়েছে। একই সময়ের একই দৃশ্য দেখানো হয়েছে দু’টি ক্যামেরা থেকে। বিকেল ৫টা ৩২ মিনিট নাগাদ মেন গেট ক্যামেরায় সামনের দিক থেকে ওই মহিলাকে রাজভবনের দিক থেকে হন্তদন্ত হয়ে বেরিয়ে পুলিশ আউটপোস্টের দিকে আসতে দেখা যায়।
এর পর নর্থ গেট ক্যামেরায় পিছন দিক থেকে তাঁকে আউটপোস্টের দিকে যেতে দেখা যায়। ওই একই ক্যামেরায় বিকেল ৫টা ৪০ মিনিট নাগাদ কয়েক জন পুলিশের সঙ্গে আউটপোস্ট থেকে বেরিয়ে মহিলাকে পাশের ঘরে যেতে দেখা গিয়েছে। যত ক্ষণ ভিডিয়ো চলেছে, তিনি সেখান থেকে আর বেরোননি। অর্থাৎ, এর পরের ফুটেজ আর দেখানো হয়নি।
যদিও ওই মহিলা তাঁর অভিযোগপত্রে জানিয়েছিলেন, রাজভবনের কনফারেন্স রুমে তাঁর সঙ্গে অশালীন আচরণ করা হয়েছে। রাজভবনের ভিতরের কোনও অংশের সিসিটিভি ফুটেজ দেখানো হয়নি। দেখা যায়নি রাজ্যপালকেও। লালবাজার জানায়, কোনও ব্যক্তিবিশেষের বিরুদ্ধে নয়, একটি ঘটনার অভিযোগের অনুসন্ধান করছে পুলিশ। সেই স্বার্থে চেয়ে পাঠানো হয় রাজভবনের সিসিটিভি ফুটেজ। এখনও পুলিশ তা পায়নি। এর মাঝেই রাজভবন জানায়, তারা সে দিনের ফুটেজ জনসাধারণকে দেখাবে। কেবল মমতা এবং তাঁর পুলিশ ফুটেজ দেখতে পারবেন না।
নিয়মিত খবরে থাকতে ফলো করুন |