ময়না : গত সোমবার গভীর রাতে পূর্ব মেদিনীপুরের ময়নার রায়চক গ্রামে বাড়ির মধ্যে রহস্যজনক ভাবে মৃত্যু হয় তুষারকান্তি বেরা (৫৫) নামের এক ব্যক্তির। এই ঘটনায় স্ত্রী মধ্য চল্লিশের গৃহবধূ তনুশ্রী সহ তাঁর প্রেমিক শ্যামল বেরাকে গ্রেফতার করেছে ময়না থানার পুলিশ। পুলিশি জেরায় নির্বিকার চিত্তে নিজের কুকীর্তির কথা তুলে ধরেছেন তনুশ্রী যা শুনলে শিউরে উঠবেন (Moyna Crime) সকলেই। রাতভর একা হাতে কতটা নৃশংসতার সঙ্গে স্বামীকে পরপারে পাঠিয়েছেন ওই গৃহবধূ সেই ঘটনা হার মানাবে যে কোনও ক্রাইম থ্রিলারকেও।
জেরায় তনুশ্রী জানিয়েছে, সোমবার গভীর রাতে ঘুমন্ত অবস্থায় একা হাতেই স্বামীকে নৃশংস ভাবে খুন করেছে সে। ঘটনার বিবরণ দিতে গিয়ে তনুশ্রী জানান, “সোমবার রাতে রান্না শেষ করে স্বামী, ছেলে সহ বাড়িতে আসা প্রেমিক শ্যামলের ছেলেকে খাওয়ার জন্য বসতে বলি। এরপর রান্নাঘরে এসে একটি বাটিতে জল নিয়ে কোমরে গুঁজে রাখা পাঁচটি ঘুমের ওষুধ জলে গুলে ডালের সঙ্গে মিশিয়ে দিই। এরপর সেই ডাল দিয়েই সবাইকে খেতে দিই”। তারপর…
তনুশ্রী জানায়, “সবাই ঘুমিয়ে যাওয়ার পর আমি আস্তে আস্তে গিয়ে স্বামীর খাটের মশারি তুলে ভেতরে যাই। সেই সময় অঘোরে ঘুমাচ্ছিল স্বামী। প্রথমে তাঁর হাত দুটোকে ছাতির ওপর চেপে ধরি। তারপর পাশে থাকা একটি বালিশ নিয়ে স্বামীর মুখের ওপর চেপে ধরি। স্বামী তখন ছটফট করতে করতে হাত পা ছুঁড়ছিল। এরই মাঝে হঠাৎ করে স্বামী বিছানা থেকে গড়িয়ে নীচে পড়ে যায়”। এরপর…
তনুশ্রী বলতে থাকে, “আমিও একলাফে বিছানা থেকে লাফিয়ে নীচে নেমে পড়ি। সটান উঠে বসি স্বামীর ছাতির ওপর। ডানহাতে বালিশ চেপে ধরি ওর মুখের ওপর। আর বাম হাতে গায়ের সব শক্তি দিয়ে চেপে ধরি স্বামীর অন্ডকোষ। ঘুমের ওষুধ খাওয়ায় স্বামী নিজেকে প্রতিহত করতে পারেনি। কিছু সময় ছটফট করে অবশেষে শান্ত হয়ে যায় সে। ওর মৃত্যু নিশ্চিত করতে নাকে হাত দিয়ে দেখি। তারপর সব শেষ হয়ে গেলে আমি আস্তে আস্তে ওই ঘর থেকে পাশের ঘরে চলে যাই”।
সেদিনের ঘটনার বিবরণ দিতে গিয়ে তনুশ্রীর ছেলে জানান, “সেদিন মা ডাল ও আলু সেদ্ধ ভাত বানিয়েছিল। আমি বলাতে সেই ডালে পেঁয়াজ মেশায় মা। এরপর আমাদের খেতে দিলে প্রথমে বাবা ডাল মুখে দিয়ে বলে কেমন তেতো ভাব লাগছে রে। তখন আমিও আমার বাটির ডাল মুখে দিয়ে দেখলাম সত্যিকারের তেতো। তবে এরপরেও আমরা সবাই ওই ডাল দিয়েই ভাত খেয়ে নিলাম”। এরপর….
ছেলেটি বলে চলে, “রাত্রি তখন প্রায় সাড়ে ৯টা হবে, আমরা যখন খেতে বসি। বাবা, আমি আর শ্যামল কাকুর ছেলে একসঙ্গে খেতে বসেছিলাম। মা’কে জিজ্ঞাসা করলাম তুমি খাবে না? মা বলল না আজ আমি খাব না। এরপর আমরা সবাই খেয়ে উঠে যাই। ওই সময় দিদি ফোন করেছিল, আমি কথা বলতে বলতে ঘুমিয়ে পড়ি। তখন রাত্রি প্রায় সাড়ে ১০টা বাজে। তারপর কি হয়েছে আর কিছু জানি না”।
মৃত তুষারকান্তির মা জানান, “আমার ছেলেটাকে ওরা মেরে দিল, দেখলেই বোঝা যাচ্ছে। আমি তো ছিলাম নি বাড়িতে। কতবড় মেয়ে আছে, ছেলে আছে। তারপরেও এমনটা করল। বউমা আবার আমার পায়ে ধরে কাঁদতে কাঁদতে বলে, মা আমি মেরে ফেলেছি ওকে। কুমিরের কান্না। ওকে শাস্তি পেতেই হবে”।
ময়না থানা ইতিমধ্যেই ঘাতক তনুশ্রীকে সঙ্গে নিয়ে বাড়িতে গিয়ে ঘটনার পুনর্নির্মাণ করিয়েছে। পুলিশের সামনে তনুশ্রী তাঁর কুকীর্তির পুরো ঘটনাই পুঙ্খানুপুঙ্খ নাটক করে দেখিয়েছে। একটি বড় টেডি বেয়ারকে স্বামী সাজিয়ে কিভাবে খুন করা হয়েছে সবটাই দেখিয়েছে সে। আর এই দুষ্কর্মের নেপথ্যে থেকে গৃহবধূকে ঘুমের ওষুধ জোগান দেওয়া এবং ষড়যন্ত্রে সব রকম সহযোগিতা করেছে তাঁর প্রেমিক। এই গৃহবধূ ও তাঁর প্রেমিকের যাতে কঠিন শাস্তি হয় সেই আবেদনই জানিয়েছে মৃতের পরিবার থেকে শুরু করে এলাকাবাসীরা।