মহিষাদল : মহিষাদল ব্লক অফিসে দফায় দফায় বিভিন্ন সভা সমিতির জন্য চা-বিস্কুটের বিল হয়েছে প্রায় ১৩ হাজার ৬০০ টাকা। সেই টাকা বকেয়া টাকা কিছুতেই পাচ্ছেন না নন্দ মাইতি নামের এক ক্ষুদ্র ব্যবসায়ী। এবার ব্যবসায়ী বকেয়া টাকার জন্য নতুন করে তদ্বির শুরু করতেই ব্লক প্রশাসন (Purba Medinipur) পাল্টা চাপ তৈরির কৌশল নিয়েছে বলে অভিযোগ ওই ব্যবসায়ীর। ওই ব্যবসায়ীর কাছ থেকে তাঁর দোকানের জমির কাগজপত্র চেয়ে পাঠানো হয়েছে বলে দাবী উঠেছে। এই ঘটনাকে ঘিরে মহিষাদলে শুরু হয়েছে চরম রাজনৈতিক আকচা আকচি। তৃণমূলের গড় মহিষাদলে এমন ঘটনা হওয়ায় শাসক দলকে রীতিমতো বিঁধেছে বিজেপি নেতৃত্বরা।
ঘটনার সূত্রপাত মাস কয়েক আগে। ওই সময় মহিষাদল পঞ্চায়েত সমিতির অনুমোদিত ক্যান্টিন কর্মীর অসুস্থতার জন্য সেটি বেশ কয়েকমাস বন্ধ ছিল। সেই সময়ে পঞ্চায়েত সমিতির কিছুটা দূরে, হিজলি টাইডাল ক্যানেলের পাড়ে গড়ে ওঠা নন্দ মাইতির চা-দোকান থেকে চা, বিস্কুট, কফি, মশলামুড়ি প্রভৃতি সরবরাহ করা হত। সেখানেই বিল হয়েছে প্রায় ১৪ হাজার টাকা। বিলের এই কয়েক হাজার টাকা দীর্ঘদিন ধরে পাচ্ছেন না নন্দ মাইতি। এমনকি, বকেয়া বিল পেতে একাধিকবার ব্লক প্রশাসনের দ্বারস্থ হতে হয়েছে তাঁকে। যদিও অভিযোগ, সেই টাকা মেলেনি। আর এতগুলি টাকা না পেয়ে সমস্যায় পড়েছেন প্রৌঢ় এই চা-ওয়ালা।
নন্দ মাইতির অভিযোগ, “বকেয়া চাইতে গেলে তাঁর এই বিল নিয়ে সন্দেহ প্রকাশ করেছেন মহিষাদলের বিডিও। সেই সঙ্গে তাঁকে ধমক দিয়ে দোকানঘরের জায়গার কাগজ দেখতে চেয়েছেন ওই ব্লক আধিকারীক”। এমনই দাবী জি ২৪ ঘন্টা, নিউজ ১৮ বাংলা সহ একাধিক সংবাদ মাধ্যমের। গোটা ঘটনায় হতবাক দরিদ্র চা ব্যবসায়ী রীতিমতো ফাঁপরে পড়েছেন। হিজলী টাইডাল ক্যানেলের পাড়ে বহু বছর ধরেই কয়েক হাজার ব্যবসায়ীর মতোই তিনিও সরকারী জায়গায় দোকান চালাচ্ছেন। সেই দোকানের রোজগারেই চলে গোটা পরিবার। এখন চায়ের বকেয়া চাইতে গিয়ে দোকানটাই উঠে যাবে কিনা সেই আশংকাতেই ত্রস্ত নন্দ মাইতি।
যদিও বিষয়টি এমন নয় বলে দাবি মহিষাদলের বিডিও বরুনাশিস সরকারের। তিনি সংবাদ মাধ্যমে জানিয়েছেন, “আমি আসার আগেই এই ঘটনা ঘটেছে। ওই ব্যবসায়ী যে অভিযোগ করছেন, তা ভিত্তিহীন। উনি যে পরিমাণ টাকা বকেয়া বলছেন, আদতে তা ঠিক কিনা খতিয়ে দেখতে হবে। আর যেহেতু সরকারিভাবে, সরকারি জায়গায় যাঁরা রয়েছেন তাঁদের তথ্য সংগ্রহের কাজ শুরু হয়েছে, তাই ওঁকে দোকানের জায়গার কী কাগজ আছে, তা আনতে বলা হয়েছে। চায়ের বকেয়ার সঙ্গে এই কাগজ চেয়ে পাঠানোর কোনও সম্পর্ক নেই” বলেই ব্লক আধিকারীকের দাবী।
ইতিমধ্যেই বকেয়া টাকা পাওয়ার জন্য মহিষাদল পঞ্চায়েত সমিতির সভাপতি শিউলি দাসের কাছেও লিখিত আবেদন জানিয়েছেন নন্দ মাইতি। শিউলিদেবীর দাবি, “আবেদন পেয়েছি, বিডিওর সঙ্গে কথা বলে ব্যবস্থা নেওয়া হবে”। এদিকে এই ঘটনা সামনে আসায় কটাক্ষ করতে ছাড়েনি বিজেপি। বিজেপির রাজ্য কমিটির সদস্য প্রদীপ দাসের বক্তব্য, “এই সরকার নিজেকে গরীবের বন্ধু প্রমাণে মরিয়া। অথচ একজন চায়ের দোকানদারকে তাঁর প্রাপ্য টাকা না দিয়ে অমানবিকতার পরিচয় দিচ্ছে সেই সরকারের অধীন মহিষাদল ব্লক প্রশাসন”।