দীপক প্রধান, হলদিয়া : দিনভর টানটান উত্তেজনার মাঝেই অবশেষে হলদিয়া আদালত থেকে শর্তসাপেক্ষে জামিনে মুক্ত হল ৪ হেভিওয়েট তৃণমূল নেতা। বুধবার শেষ মুহূর্তে পুলিশ এই মামলায় ৩০৭ ধারা যোগ করায় আদালতে ব্যাপক চাঞ্চল্য ছড়িয়ে পড়ে। তবে অভিযুক্তদের পক্ষের আইনজীবিদের সওয়াল জবাবের পর বেশ কিছু শর্তের বিনিময়ে এই নেতাদের হলদিয়া মহকুমা আদালত জামিয়ে মুক্তি দিয়েছে।
আদালত থেকে বেরিয়ে গোটা ঘটনা নিয়ে তৃণমূল নেতা সঞ্জয় ব্যানার্জীর সাফাই, “আমি কোভিডে আক্রান্ত হয়েছিলাম এই মাসের ১ তারিখে। সদ্য সুস্থ হয়ে গতকালই হলদিয়ায় এসেছিলাম। তবে দল যা ভালো বুঝেছে করেছে। এই বিষয়ে আর কোনও মন্তব্য করব না”।
তবে অভিযুক্তদের পক্ষের আইনজীবি বিমল কুমার মাজী জানান, “পুলিশ অভিযুক্তদের বিরুদ্ধে ৩২৩, ৪২৭, ৩০৭, ৫০৬, ১২০বি, ৩৪ আইপিসি ধারায় অভিযোগ এনেছিল। তবে মামলাকারী কারখানা কর্তৃপক্ষের অভিযোগে কোথাও মারামারি, রক্তপাত বা মারপিটের মতো কোনও বিষয় ছিল না। তাই আদালত আসামী পক্ষের আইনজীবিদের বক্তব্যে মান্যতা দিয়ে ৩০৭ ধারাকে মান্যতা না দিয়েই ৪ জনকে জামিনে মুক্তি দিয়েছেন। তবে তাঁদের শর্ত দেওয়া হয়েছে, কারখানা চত্বরে যাওয়া যাবে না। সপ্তাহে ১ দিন মামলার সংশ্লিষ্ট পুলিশ আধিকারীকের কাছে হাজিরা দিতে হবে”।
এদিন রাজ্যের শ্রমমন্ত্রী মলয় ঘটক জানান, “তমলুক সাংগঠনিক জেলার INTTUC’র সভাপতি তাপস কুমার মাইতি ও স্পেশাল অবজারভার সঞ্জয় ব্যানার্জীকে তাঁদের পদ থেকে সরিয়ে দেওয়া হল। সেই সঙ্গে দল থেকেও বহিষ্কার করা হল এই দুই শ্রমিক নেতাকে। এরই পাশাপাশি শিল্পাঞ্চলের স্পেশাল অবজারভার পোষ্টটিও অবলুপ্তি করে দেওয়া হল। পরিবর্তে এবার থেকে তমলুক সাংগঠনিক জেলার INTTUC সভাপতি হিসেবে শিবনাথ সরকারকে নিযুক্ত করা হল”।
প্রসঙ্গতঃ শিবনাথ সরকার দীর্ঘদিন যাবৎ শিল্পাঞ্চল এলাকায় শ্রমিক নেতা হিসেবে জনপ্রিয়। দায়িত্ব পেয়ে শিবনাথ জানান, “দলের নির্দেশ মেনে আমি যথাসাধ্য চেষ্টা করব কারখানাগুলোকে সচল রেখে শ্রমিকদের স্বার্থ রক্ষা করার। দলের ওপরতলার গাইডলাইন মেনেই কাজ হবে” দাবী শিবনাথের।
এদিন কারখানার প্রতিনিধিদের সঙ্গে বৈঠকের পর INTTUC’র রাজ্য সভাপতি ঋতব্রত মুখোপাধ্যায় জানান, “গত ৪ঠা অক্টোবর বিভিন্ন কারখানাকে নিজস্ব লেটারহেডে চিঠি পাঠিয়েছিলেন সঞ্জয় ব্যানার্জী। তাপস মাইতিও নিয়োগের জন্য সুপারিশ করেছিলেন নিজের লেটারহেডে। এই দুইজনকে শোকজ করা হলেও কোনও জবাব মেলেনি।
হেল্পলাইন নম্বর ৬২৯২২৬২৪৬৩ তে একাধিক অভিযোগ আসে দুই নেতার বিরুদ্ধে। সমস্ত কারখানা কর্তৃপক্ষের তরফেও অভিযোগ প্রকাশ্যে এসেছে। মুখ্যমন্ত্রী চান শিল্প ও শ্রমিক বান্ধব পরিবেশ রাখতে হবে। কারখানাকে অচল করে কোনও আন্দোলনকে INTTUC সমর্থন করেনা”।
ঋতব্রত জানান, “যারা গ্রেফতার হয়েছে তাঁদের কোন ধারায় ধরা হয়েছে তা প্রশাসন বলতে পারবে। তবে দুই নেতার বিরুদ্ধে লাগাতার অনৈতিক অভিযোগ উঠেছিল। আগামী দিনে শ্রমিকদের বেতন কাঠামোর চুক্তি নিয়ে দ্রুত ব্যবস্থা নেওয়া হবে। নিয়োগে প্রাধান্য দিতে হবে স্থানীয়দের। আগামী দিনে চুক্তিভিতিক বা অসংগঠিত ক্ষেত্রে শ্রমিক নিয়োগের জন্য নির্দিষ্ট মাপকাঠি ঘোষণা করা হবে” বলেও জানিয়েছেন তিনি। এছাড়াও “কাজ বন্ধ না রেখে সর্বদা আলোচনার মাধ্যমে সমস্যা মিটিয়ে নেওয়ার জন্য মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় নির্দেশ দিয়েছেন” বলেও জানিয়েছেন তিনি।