হলদিয়া, পূর্ব মেদিনীপুর : ভোট পরবর্তী হিংসায় প্রাণ হারানো নন্দীগ্রামের চিল্লোগ্রামের বিজেপি কর্মী দেবব্রত মাইতিকে পিটিয়ে খুনের ঘটনার তদন্তে আচমকাই নয়া মোড় নিল শনিবার। সূত্রের খবর, এদিন হলদিয়ায় জিজ্ঞাসাবাদের জন্য ডেকে ১১ জনকে প্রথমে আটক করে কেন্দ্রীয় তদন্তকারী সংস্থা সিবিআই। এরপর তাঁদের গ্রেফতার করে হলদিয়া মহকুমা আদালতে হাজির করা হয়েছে। ধৃতদের মধ্যে একঝাঁক হেভিওয়েট তৃণমূলের নেতা কর্মী রয়েছে বলে জানা গেছে।
প্রাথমিক ভাবে জানা গেছে, ধৃতরা হল সেক সাহাউদ্দিন, সেক বাইতুল ইসলাম, সেক হাবিবুল, সেক মুক্তার রহমান, সেক মহিদুল ইসলাম, হায়াতুল ইসলাম সেক, সেক আতুল রহমান, সেক মুক্তাদের, সেক মুস্তাক রহমান, আব্দুল হাই সেক এবং সেক নাজিরুল ইসলাম।
এদের মধ্যে সেক সাহাউদ্দিন কেন্দেমারি গ্রাম পঞ্চায়েত প্রধানের স্বামী, সেক বাইতুল ইসলাম নন্দীগ্রাম গ্রাম পঞ্চায়েত প্রধানের স্বামী এবং সেক হাবিবুল মহম্মদপুর গ্রাম পঞ্চায়েত প্রধান। এদের মধ্যে সেক হাবিবুল নন্দীগ্রামে মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের নির্বাচনী এজেন্ট সেক সুফিয়ানের জামাই বলে জানা গেছে।
এই ঘটনা জানাজানি হতেই গোটা নন্দীগ্রাম জুড়ে ব্যাপক চাঞ্চল্য ছড়িয়েছে। বিজেপির দাবী, ভোটের ফল প্রকাশের পরের দিনই নন্দীগ্রামের কেন্দেমারী সহ বেশ কয়েকটি এলাকায় ব্যাপক তান্ডব চালায় একদল উন্মত্ত তৃণমূল কর্মী। নিজের বাড়িতে হামলা চলাকালীন তা প্রতিহত করতে গিয়েই গুরুতর জখম হন চিল্লোগ্রামের বাসিন্দা দেবব্রত মাইতি। পরে ১৩ মে কলকাতায় চিকিৎসারত অবস্থায় মৃত্যু হয় তার।
পরবর্তীকালে কলকাতা হাইকোর্টের নির্দেশে ভোট পরবর্তী হিংসার মামলার তদন্তে নামে কেন্দ্রীয় গোয়েন্দা সংস্থা সিবিআই। নন্দীগ্রামে হিংসার ঘটনার তদন্তে নেমে গত ৩০ আগষ্ট দেবব্রত খুনের ঘটনায় সিবিআই একটি মামলা দায়ের করে। দিন কয়েক আগে এই মামলায় হলদিয়া আদালতে চার্জশিট জমা দেয় সিবিআই। সেখানে কেবলমাত্র ৩ জনের নাম ছিল।
ইতিমধ্যে সেক সুফিয়ানকেও জেরা করেছে সিবিআই। শনিবার নতুন করে ১১ জনকে জিজ্ঞাসাবাদের জন্য হলদিয়ায় ডেকে পাঠানো হয়। তারপরেই তাঁদের গ্রেফতার করা হয়েছে। ইতিমধ্যে এই মামলায় আরও এক অভিযুক্ত জেল হেফাজতে রয়েছে। যদিও আরও ২ অভিযুক্ত এখন জামিনে মুক্ত রয়েছে বলে জানা গেছে।
সিবিআইয়ের এই পদক্ষেপ রাজনৈতিক উদ্দেশ্য প্রণোদিত বলে দাবী করেছেন আসামী পক্ষের আইনজীবি বিমল কুমার মাজী। তাঁর দাবী, “এই মামলায় ৩ জনকে পুলিশ গ্রেফতার করেছিল। এরপর সিবিআই ঘটনার তদন্তে নেমে ৫ অক্টোবর চার্জশিট জমা দেয় আদালতে। সেখানে পুলিশের হাতে গ্রেফতার ৩ জনের নামই উল্লেখ ছিল। চার্জশিটে কোথাও অন্য কারও জড়িত থাকার কথা বলা নেই” বলেই দাবী বিমলের।
তিনি আরও জানান, “এই ১১ জনকে এর আগেও ৩ বার ৪১এ তে নোটিশ করেছিল। তাঁরা প্রতিবার হাজির হয়েছে সিবিআইয়ের সামনে। এখন আচমকা গ্রেফতারের পেছনে রাজনৈতিক উদ্দেশ্যেই করা হয়েছে। এখন সিবিআই ধৃতদের ৫ দিনের রিমান্ডে নিতে চেয়েছে। আমরা আদালতের সামনে আমাদের বক্তব্য রেখেছি। এবার আদালত যা সিদ্ধান্ত নেওয়ার নেবে”।