হলদিয়া : বেতন কাঠামো ঘিরে অসন্তোষ দীর্ঘদিনের। প্রায় ১১মাস পেরিয়ে গেলেও পুনঃনবীকরণ হয়নি চুক্তি। এমন পরিস্থিতিতে সোমবার সন্ধ্যে থেকে উৎপাদন বন্ধ রেখে একটানা আন্দোলনে নামল হলদিয়ার জনপ্রিয় ভোজ্যতেল প্রস্তুতকারী সংস্থা ইমামী এগ্রোটেক লিমিটেডের হাজার দেড়েক কর্মীরা।
তাঁদের দাবী, বেতন কাঠামো না মেনে কর্মীদের বিভিন্ন সুযোগ সুবিধা থেকে বঞ্চিত করা হচ্ছে। তারই প্রতিবাদে আন্দোলনে নেমেছেন কর্মীরা। এর জেরে মঙ্গলবারও থমথমে (Haldia Industry Agitation) গোটা এলাকা। পরিস্থিতি সামাল দিতে কারখানায় মোতায়েন হয়েছে পুলিশ বাহিনী। সমস্যার সমাধান না হওয়া পর্যন্ত বিক্ষোভরত কর্মীদের কারখানায় ঢুকতে নিষেধ করা হয়েছে বলেই আন্দোলনকারীদের দাবী।
সূত্রের খবর, সোমবার বিকেল থেকে কারখানার ভেতরেই বিক্ষোভ শুরু করেন কর্মীরা। এর জেরে ব্যাপক চাঞ্চল্য ছড়ায় কারখানা চত্বরে। শ্রমিকরা রাতভর কাজ বন্ধ রেখে বিক্ষোভ দেখাতে থাকেন। খবর পেয়ে বিশাল পরিমানে পুলিশ বাহিনী ঘটনাস্থলে আসে। তবে কারখানা কর্তৃপক্ষ ও কর্মীরা নিজেদের দাবীতে অনড় থাকায় জট অব্যাহত। পরিস্থিতি সামাল দিতে শ্রমিকদের কারখানা থেকে বের করে দেওয়া হয়। সমস্যা না মেটা পর্যন্ত তাঁদের কারখানার গেটে ভীড় জমাতে নিষেধ করা হয়েছে।
কারখানার শ্রমিক নেতা সামাদ আলী জানান, “গত প্রায় ১১মাস ধরে চুক্তি হচ্ছে না। আলাপ আলোচনার মাধ্যমে শ্রমিকদের ন্যূনতম বেসিক ৩৫৫ টাকা হিসেবে রেখে পিএফ, ইএসআই কেটে ইনহ্যান্ড বেতন ১৪ হাজার ৫৭৫টাকা ধার্য হয়েছিল। কিন্তু দেখা গেল বেসিক ২৪২টাকা করে ইনহ্যান্ড বেতন এক রেখে শ্রমিকদের বেতন দেওয়া হয়েছে। এর ফলে পিএফ, ইএসআই, গ্র্যাচুইটি, বোনাস সবকিছু থেকেই শ্রমিকরা চূড়ান্ত ভাবে বঞ্চিত হচ্ছে। বিষয়টি নিয়ে কারখানা কর্তৃপক্ষের সঙ্গে বারেবারে আলোচনা চালালেও তারা নিজেদের সিদ্ধান্তে অনড় রয়েছে”।
তিনি জানান, “শ্রমিকরা ন্যাহ্য দাবী জানালে পুলিশ দিয়ে আমাদের গেট থেকে বের করে দেওয়া হয়েছে। প্রশাসনের নির্দেশেই আমরা কাজে ঢুকতে পারছি না”। প্রশাসনের প্রতি তাঁর আর্জি, “দীর্ঘ আলাপ আলোচনার পর বেতন কাঠামো নিয়ে সম্মত হওয়ার পর এখন কারখানা কর্তৃপক্ষ নিজেদের মতো করে কাজ চালাচ্ছে। শ্রমিকদের শোষণ বন্ধ করতে প্রশাসনের হস্তক্ষেপ জরুরী” বলেই দাবী তাঁর।
এই ঘটনা প্রসঙ্গে ভারতীয় মজদুর সংঘের রাজ্য সহ সভাপতি প্রদীপ বিজলীর মতে, “শ্রমিক স্বার্থ না দেখেই শিল্পসংস্থাগুলিকে প্রশাসন তোষামোদ করছে। এর জেরে বছরের পর বছর শ্রমিকদের চুক্তি পুনঃনবীকরণ হচ্ছে না। শ্রমিকরা ন্যাহ্য দাবী আদায় করতে চাইলে তাঁদের গায়ের জোরে কম পয়সায় কাজ করতে বাধ্য করা হচ্ছে। এমনটা চলতে থাকলে তো কারখানা বন্ধ হয়ে যাবে”। যদিও এই বিষয়ে তৃণমূলের শ্রমিক নেতা থেকে প্রশাসনের আধিকারীকদের কোনও মন্তব্য পাওয়া যায়নি। উৎপাদন বন্ধের বিষয়ে কোনও কারখানা কর্তৃপক্ষের কোনও বক্তব্য পাওয়া যায়নি।