মহিষাদল, পূর্ব মেদিনীপুর : বুধবার সকালে পূর্ব মেদিনীপুরের মহিষাদল থানার চাঁপি গ্রামে রহস্যজনক ভাবে মৃত্যু হয়েছে এক যুবকের। মৃত যুবকের নাম সেক আহমেদ (৩৪)। তাঁর দেহটি গ্রামেরই একটি বাড়ির পেছনে পড়ে ছিল বলে স্থানীয়রা জানিয়েছেন। খবর পেয়ে মহিষাদল থানার পুলিশ ঘটনাস্থলে গিয়ে মৃতদেহটিকে উদ্ধার করে নিয়ে আসে (Mahishadal)। মৃত যুবক স্থানীয় লক্ষ্যা ২ অঞ্চলে তৃণমূলের প্রাক্তন পঞ্চায়েত সদস্য, তাঁর স্ত্রীও সদ্য বিদায়ী পঞ্চায়েতের সদস্যা ছিলেন। তবে ঠিক কি কারনে ওই যুবকের মৃত্যু তা নিয়েই রহস্য দানা বেঁধেছে।
মহিষাদল থানার পুলিশ জানিয়েছে, মৃতদেহটিকে ময়না তদন্তে পাঠানোর পাশাপাশি ঘটনার তদন্তে নেমে মৃত যুবকের এক সঙ্গী সেক রবিকুলকে আটক করে আনা হয়েছে। তবে ঠিক কোন কারনে মৃত্যু তা ময়না তদন্তের রিপোর্ট হাতে পাওয়ার পরেই জানা যাবে বলে পুলিশ জানিয়েছেন। মৃতের পরিবারে তাঁর বাবা, মা, স্ত্রী ও ৩ সন্তান বর্তমান। ঘটনার খবর পেয়ে কান্নায় ভেঙে পড়েছে গোটা পরিবার। কিভাবে এমন ঘটনা তা নিয়ে তদন্তের দাবী জানিয়েছে গোটা পরিবার।
স্থানীয় সূত্রে জানা গেছে, বুধবার সকালে চাঁপি মধ্যপল্লী এলাকায় পুরানো রেশন দোকানের কাছে ওই যুবকের মোটর বাইকটি রাস্তার পাশে পড়ে থাকতে দেখেন স্থানীয়রা। সেই সঙ্গে বেশ খানিকটা দূরে একটি বাড়ির পেছনে তাঁকে মৃত অবস্থায় পড়ে থাকতে দেখা যায়। মৃত যুবকের মুখ থেকে গাঁজলা বেরিয়ে আসছিল। ঘটনাটি জানাজানি হতেই এলাকার মানুষ ঘটনাস্থলে ভীড় জমান। খবর পেয়ে পুলিশ মৃতদেহটি উদ্ধার করতে এলে ঘটনার তদন্তের দাবীতে ক্ষোভে ফেটে পড়েন এলাকাবাসীরা। এরপরেই মহিষাদল থানা থেকে পুলিশের একটি দল গিয়ে পরিস্থিতি সামাল দেয়। এবং মৃত দেহটিকে উদ্ধার করে নিয়ে আসে।
- কি ঘটেছিল, দেখুন ভিডিওটি
স্থানীয় বাসিন্দা বিজয় কুমার মন্ডল জানান, “যে বাড়ির পেছনে মৃত দেহটি উদ্ধার হয়েছে সেখানে আমার বৃদ্ধ বাবা ও মা থাকেন। আজ সকালে মা ও বাবা বাড়ির পেছনে গিয়ে ওই যুবককে পড়ে থাকতে দেখেন। খবর পেয়ে আমরা ছুটে আসি”। তিনি জানান, “ মৃত যুবকের বাইকটি রাস্তার পাশে অস্বাভাবিক ভাবে পড়ে ছিল। বাইকে রক্তের সামান্য ছিটেও লেগে ছিল। কিন্তু বাইকের থেকে কিভাবে অতটা দূরে আমার বাড়ির পেছনে ওই যুবক পৌছাল তা নিয়েই সন্দেহ ছড়াচ্ছে। কি ভাবে এই ঘটনা তার প্রকৃত তদন্তের দাবী জানাচ্ছি”।
পুলিশ সূত্রে জানা গেছে, ঘটনাস্থলে তদন্ত চালানোর সময় জানা যায় স্থানীয় যুবক সেক রবিবুল গতকাল রাত্রি প্রায় ১২টা পর্যন্ত আহমেদের সঙ্গে কাটিয়েছিল। কিন্তু তারপর কিভাবে এই মৃত্যু তা জানা নেই বলে রবিবুলের দাবী। এরপরেই পুলিশ রবিবুলকে আটক করে জিজ্ঞাসাবাদের জন্য থানায় নিয়ে আসে। মৃতের স্ত্রী মানোয়ারা বিবি জানান, “গতকাল বিকেল ৪টে নাগাদ বাড়ি থেকে নগদ প্রায় ৫০ হাজার টাকা নিয়ে বেরিয়েছিল আহমেদ। মহিষাদলের একটি দোকানে রাখা সোনার গহনা ছাড়ানোর উদ্দেশ্যে এই টাকা নিয়ে যায়। এরপর রাতে জানিয়েছিল দোকান থেকে গহনাগুলি বুধবার দেওয়া হবে। রাত্রি সাড়ে ১১টা পর্যন্ত ফোনে যোগাযোগ হলেও তারপর থেকে আহমেদের ফোন সুইচ অফ হয়ে যায়” বলে দাবী করেছেন স্ত্রী।
এদিন মৃতদেহ উদ্ধারের সময় আহমেদের পকেটে টাকা বা সোনার গহনা কিছুই ছিল না বলে খবর। স্থানীয়রা জানিয়েছেন, সম্প্রতি যুবকটি কিছুটা সঙ্গদোষেও পড়েছিল। তবে যেভাবে তাঁর মোটরবাইকটি রাস্তার পাশে পড়েছিল এবং আহমেদের মৃতদেহ অনেকটা দূরে একটি বাড়ির পেছনে উদ্ধার হল তা নিয়েই নানান সন্দেহ দানা বাঁধছে। মৃতের মুখে গাঁজলা দেখে পুলিশের প্রাথমিক অনুমান অতিরিক্ত নেশার কারনেও এমনটা হতে পারে। তবে ওই রাতে ঠিক কি ঘটেছিল এবং কিভাবেই বা যুবকের মৃত্যু হল তা তদন্ত করে দেখা হচ্ছে বলে মহিষাদল থানার পুলিশ জানিয়েছে।