নন্দীগ্রাম : নন্দীগ্রামের গোকুলনগরে শহীদ সভার মঞ্চ পোড়ানোর ঘটনায় রাজ্যের বিরোধী দলনেতা তথা নন্দীগ্রামের বিজেপি বিধায়ক শুভেন্দু অধিকারীকেই (Suvendu Adhikari) নিশানা করল ভূমি উচ্ছেদ প্রতিরোধ কমিটি। শনিবার শুভেন্দু সহ ২১ জনের নামে পুলিশের অভিযোগ দায়ের হয়েছে। সেই অভিযোগ পেয়ে শুভেন্দু ঘনিষ্ঠ নন্দীগ্রামের বিজেপি নেতা তমলুক সাংগঠনিক জেলার সাধারণ সম্পাদক মেঘনাদ পালের (Meghnath Paul) বাড়িতে হানা দেয় পুলিশ। তবে সার্চ ওয়ারেন্ট ছাড়া বাড়িতে তল্লাশি চালাতে যাওয়ায় পুলিশের ভূমিকা নিয়ে প্রশ্ন তোলেন মেঘনাদের পরিবার।
নন্দীগ্রাম থানার আইসি সুমন রায়চৌধুরীর নেতৃত্বে পুলিশ বাহিনী মেঘনাদের বাড়িতে গেলে সার্চ ওয়ারেন্ট ছাড়া কেন তাঁরা বাড়িতে তল্লাশি চালাতে চান সেই প্রশ্ন তোলে মেঘনাদের পরিবার। পুলিশ জানায়, সার্চ ওয়ারেন্ট না থাকলেও মেঘনাদের বিরুদ্ধে একটি এফআইআর হয়েছে। তারই তদন্তে মেঘনাদকে জিজ্ঞাসাবাদ করতে চায় তারা। যদিও মেঘনাদকে না পেয়ে পুলিশ ফিরে যায়।
প্রসঙ্গতঃ গত ১০ নভেম্বর নন্দীগ্রামের গোকুল নগরে করপল্লীতে আলাদা ভাবে শহীদ দিবস পালন করে তৃণমূল ও বিজেপি। রাতে তৃণমূলের শহীদ মঞ্চে আগুন ধরিয়ে দেয় অজ্ঞাত দুষ্কৃতীরা। এই ঘটনায় নন্দীগ্রামের ভূমি উচ্ছেদ প্রতিরোধ কমিটির গোকুলনগর অঞ্চল সভাপতি সীতারাম করণ থানায় লিখিত অভিযোগ দায়ের করেছেন। অভিযুক্তদের তালিকায় বিজেপির জেলা সাধারণ সম্পাদক মেঘনাদ পাল, অশোক করণ, স্বদেশ দাস অধিকারী, মণ্ডল সভাপতি শ্যামাপ্রসাদ মাইতি, সহ সভাপতি দেবাশিস দাসের নাম রয়েছে।
অভিযোগ পেয়ে শনিবার দুপুরের পর থেকেই নন্দীগ্রাম থানার পুলিস একাধিক টিমে ভাগ হয়ে অভিযুক্তদের খোঁজে তল্লাশিতে নামে। মঞ্চ পোড়ানোর ঘটনায় জড়িতদের ৭২ঘণ্টার মধ্যে গ্রেপ্তারের সময়সীমা বেঁধে দিয়েছে তৃণমূল। এনিয়ে পুলিসের উপর চাপ বাড়ছে। ডিএসপি(হেড কোয়ার্টার) মোহায়মেনুল হক বলেন, নন্দীগ্রাম থানায় মোট ২১জনের বিরুদ্ধে এফআইআর হয়েছে। অভিযুক্তদের খোঁজে তল্লাশি চলছে।
শহিদ স্মরণসভা মঞ্চ পোড়ানোর প্রতিবাদে তৃণমূল শুক্রবার আট ঘণ্টা নন্দীগ্রাম তেখালি সড়ক অবরোধ করে। রাজ্য নেতৃত্ব করপল্লিতে পৌঁছে ঘটনায় জড়িতদের গ্রেপ্তারের জন্য পুলিসকে ৭২ঘণ্টা সময়সীমা দিয়েছে। তা না হলে আরও বড় কর্মসূচি নেওয়া হবে বলে দলের পক্ষ থেকে জানিয়ে দেওয়া হয়েছে। শনিবার দুপুরের পর এফআইআরে নাম থাকা বেশ কয়েকজন মোবাইল বন্ধ করে দিয়েছেন। তাঁদের কয়েকজন গা-ঢাকা দিয়েছেন বলে জানা গিয়েছে।
নন্দীগ্রাম-১ ব্লক সভাপতি বাপ্পাদিত্য গর্গ বলেন, শহিদস্মরণ সভা মঞ্চ পোড়ানোয় অভিযুক্তদের গ্রেপ্তার করতে হবে। পঞ্চায়েত ভোটের আগে বিজেপি পরিকল্পিতভাবে নন্দীগ্রাম অশান্ত করতে চাইছে। খেজুরি, চণ্ডীপুর থেকে লোকজন এনে নন্দীগ্রামে শহিদস্মরণ কর্মসূচি নিয়েছে বিজেপি। নন্দীগ্রামে ওদের পায়ের তলার মাটি সরে গিয়েছে। তাই পরিকল্পিতভাবে সন্ত্রাসের ছক। পুলিস ওই ঘটনায় জড়িতদের গ্রেপ্তার না করলে আমরা রাস্তায় নেমে বৃহত্তর আন্দোলনে শামিল হব।
অন্যদিকে বিজেপি নেতা মেঘনাদ পাল বলেন, “এফআইআরে কার কার নাম রাখতে হবে সেটা রাজ্য নেতৃত্ব মাইক হাতে আগাম নেতাদের নির্দেশমতো জানিয়ে দিয়েছেন। রাজ্য এফআইআরে বিজেপির পদাধিকারীদের নাম রাখা হয়েছে। আমরা আদালতে এই বিষয়টি উল্লেখ করব। আসলে তৃণমূল পরিকল্পনা করেই নিজেদের মঞ্চে আগুন দিয়েছে। ১০নভেম্বর ওদের সভায় হাতে গোনা লোকজন ছিল৷ বিজেপির কর্মসূচিতে হাজার হাজার মানুষের উপস্থিতি হয়েছিল”।
-সংবাদ সূত্র – বর্তমান পত্রিকা