মহিষাদল : আর মাত্র কয়েকটা দিন পরেই নতুন শ্রেণীতে ভর্তি। ইতিমধ্যেই বিভিন্ন স্কুলে সেই প্রক্রিয়া শুরু হয়েছে জোর কদমে। কিন্তু একাধিক স্কুলে ছাত্রছাত্রী ভর্তির নিয়মে অদ্ভুত সংরক্ষণ নীতির গেরোয় চরম বিপাকে অভিভাবকরা। সংরক্ষণের এক বিতর্কিত নির্দেশিকা জারি করার অভিযোগ উঠেছে পূর্ব মেদিনীপুরের মহিষাদল গয়েশ্বরী গার্লস হাইস্কুলের বিরুদ্ধে। যা এলাকার কন্যাশ্রীদের পঠনপাঠন চালিয়ে নিয়ে যাওয়ার পথে চরম অন্তরায় হয়ে দাঁড়িয়েছে।
১৯৪৫ সালে নির্মিত এই স্কুলটি মহিষাদল বিধানসভা এলাকার একমাত্র মহিলাদের স্কুল হিসেবে পরিচিত। মেয়েদের সুরক্ষার কথা ভেবে প্রতিবছর এই স্কুলে ভীড় জমান দূর দূরান্তের ছাত্রীদের পরিবারও। অথচ সেই স্কুলেই এবার ছাত্রী ভর্তিতে জারি করা বিজ্ঞপ্তি ঘিরে শুরু হয়েছে বিতর্ক।
স্কুলের ভর্তির বিজ্ঞপ্তিতে জানানো হয়েছে, কেবলমাত্র গড়কলপুর গ্রামের অধীনস্থ বিদ্যালয় অথবা গড়কমলপুর গ্রামের বাসিন্দারাই পঞ্চম শ্রেণীতে ভর্তির আবেদন করতে পারবে। কিন্তু একটি গ্রামের বাসিন্দাদের জন্য কিভাবে ওই সরকারী স্কুলের আসন সংরক্ষণ করা হয়েছে তা নিয়েই প্রশ্ন তুলেছেন এলাকাবাসীরা।
মহিষাদলের বাসিন্দা অভিভাবক তপন মন্ডলের মতে, “স্বাধীনতার আগে তৈরী এই স্কুল এলাকায় বিশেষ জনপ্রিয়। এমন স্কুলের প্রতি এলাকার মানুষের আবেগ জড়িয়ে রয়েছে। দূর দূরান্ত থেকে নিরাপত্তার কারনেও একমাত্র মহিলাদের স্কুলে মেয়েদের ভর্তি করতে মরিয়া এলাকাবাসীরা। সেখানে শুধুমাত্র গড়কমলপুরের বাসিন্দারাই কেন ভর্তির সুযোগ পাবে। এই স্কুল গড়কমলপুরের আর্থিক অনুদানে তৈরী নয়, অথবা পরিচালন কমিটি বা স্কুল কর্তৃপক্ষও এমন হটকারী সিদ্ধান্ত কিভাবে নিতে পারেন সেই নিয়েই প্রশ্ন তুলেছেন তিনি”।
আজ স্কুলে আবেদনপত্র তুলতে আসা সরবেড়িয়ার বাসিন্দা রত্না সামন্ত, তেরপেখ্যা গ্রামের তরুণ মাইতি, জগন্নাথপুর গ্রামের শ্যামল বর্মনরা এসেছিলেন ভর্তির ফর্ম সংগ্রহ করতে। কিন্তু স্কুলের এই অদ্ভুত নিয়মের গেরোয় হতাশ সকলেই।
রত্না যেমন জানালেন, “এলাকার একমাত্র গার্লস স্কুলে মেয়েকে ভর্তি করতে চেয়েছিলাম। আজ স্কুল থেকে ফিরিয়ে দেওয়া হল। স্কুল থেকে বলা হয়েছে ষষ্ঠ শ্রেণীতে ভর্তি নেবে। অথচ সমস্ত প্রাথমিক স্কুলে পঞ্চম শ্রেণী শুরু হয়নি। খোদ গার্লস স্কুল সংলগ্ন প্রাথমিক স্কুলেই পঞ্চম শ্রেণী চালু হয়নি। মেয়েকে নিয়ে এবার অথৈ জলে পড়েছি”।
ঘটনাটি স্বীকার করেই গয়েশ্বরী গার্লস হাইস্কুলের প্রধান শিক্ষিকার সঞ্চিতা গিরি বাগ’এর যুক্তি, “এই স্কুলে শিক্ষকের অভাব রয়েছে। পঞ্চম শ্রেণীতে তাই বেশী ছাত্রী ভর্তি নিতে পারব না। স্কুলের পরিচালন সমিতির বৈঠকে সিদ্ধান্তের পরেই কেবলমাত্র একটি গ্রামের ছাত্রীদের ভর্তি নিচ্ছি। স্কুলে শিক্ষিকার ঘাটতি না মিটলে পঞ্চম শ্রেণীতে ছাত্রী ভর্তি নিতে পারব না”।
যদিও জেলা পরিদর্শক (ডিআই, সেকেন্ডারী) শুভাশিস মিত্র’র দাবী, “কোনও স্কুলে ছাত্রছাত্রী ভর্তির ক্ষেত্রে সংরক্ষণের এমন নির্দেশ দেওয়ার বিধি নেই। এক্ষেত্রে নির্দেশ জারি করতে পারে কেবল শিক্ষা দফতর। কিন্তু রাজ্য শিক্ষা দফতরের এমন কোনও নির্দেশ না থাকলেও কেন স্কুল থেকে এমন নোটিশ জারি করা হয়েছে তা জানা নেই। বিষয়টি খোঁজ নিয়ে দেখব”।