কাঁথি, পূর্ব মেদিনীপুর : আসন্ন লোকসভা নির্বাচনে বহু চর্চিত কাঁথি কেন্দ্রে বিজেপি প্রার্থী হচ্ছেন শিশির অধিকারীর কনিষ্ঠপুত্র সৌমেন্দু অধিকারী। কাঁথি কেন্দ্র থেকে টানা ৩বার তৃণমূলের টিকিটে জয়ী হয়েছেন শিশির অধিকারী। এবার সেই কেন্দ্রেই (Soumendu Adhikary) বাবার দেখানো পথে লড়াইয়ে নামছেন সৌমেন্দু।
শনিবার দিল্লীতে বিজেপির সদর দফতর থেকে প্রথমদফায় দেশজুড়ে যে প্রার্থী তালিকা প্রকাশিত হয়েছে সেখানেই সৌমেন্দুর নাম কাঁথি কেন্দ্রের জন্য ঘোষণা করা হয়েছে। গত বিধানসভার নিরিখে এগিয়ে থাকা এই লোকসভা কেন্দ্রে বিজেপি প্রার্থী হিসেবে সৌমেন্দু বাবার মতো জয়ের ধারা অব্যাহত রাখতে পারেন কিনা সেদিকেই নজর থাকছে সবার।
২০০৯ সালে কাঁথি লোকসভা কেন্দ্র থেকে প্রথমবার তৃণমূলের টিকিটে সাংসদ নির্বাচিত হন শিশির অধিকারী। এরপর ২০১৪ এবং ২০১৯ লোকসভা নির্বাচনেও এই কেন্দ্রে শিশির জয়ী হন। শেষবার ২০১৯ সালে শিশির অধিকারী তাঁর নিকটতম প্রতিদ্বন্দ্বী বিজেপির ডাঃ দেবাশিষ সামন্তের থেকে প্রায় ১ লক্ষ ১১ হাজার ৬৬৮টি ভোটের ব্যবধানে জয়ী হন। সেবার শিশির অধিকারী পেয়েছিলেন ৭ লক্ষ ১১ হাজার ৮৭২টি ভোট এবং বিজেপি প্রার্থী পেয়েছিলেন ৬ লক্ষ ২ শত ৪টি ভোট। বাম ও কংগ্রেসের মিলিত ভোট ১ লক্ষের গন্ডি ছুঁতে পারেনি।
তবে ২০২১এর বিধানসভা নির্বাচনের প্রাক্কালে নাটকীয় ভাবে পট পরিবর্তন ঘটে পূর্ব মেদিনীপুরের রাজনৈতিক চিত্রের। শুভেন্দু অধিকারী তৃণমূল ছেড়ে বিজেপিতে যোগ দেওয়ার পর থেকেই জেলা জুড়ে বিজেপির দাপট কয়েকগুন বৃদ্ধি পায়। যার ফল স্বরূপ কাঁথি লোকসভা কেন্দ্রের অন্তর্গত ৭টি বিধানসভা কেন্দ্রের মধ্যে ৪টিতে জয় ছিনিয়ে নেয় বিজেপি এবং তৃণমূলের ঝুলিতে আসে ৩টি বিধানসভা এলাকা।
খেজুরি, ভগবানপুর, উত্তর কাঁথি ও দক্ষিণ কাঁথি কেন্দ্র বিজেপির দখলে আসে। অন্যদিকে চন্ডিপুর, এগরা ও পটাশপুর কেন্দ্রে তৃণমূল জয়ী হয়। তবে এই মুহূর্তে সৌমেন্দুর কাছে মস্তবড় চ্যালেঞ্জ হল বিজেপি শিবিরে থেকে বাবার মতো জয়ের ধারা তিনি ধরে রাখতে পারবেন কিনা।
বিজেপির অন্দরের খবর, গত কয়েকদিন ধরেই কাঁথি কেন্দ্রে বিজেপির প্রার্থী হিসেবে একাধিক নাম ঘুরে বেড়াচ্ছিল। যার মধ্যে জেলা স্তরের কয়েকজন নেতা এবং বিজেপির কয়েকজন বিধায়কও তালিকায় ছিলেন। তবে তাঁদের সবাইকে সরিয়ে রেখে তৃণমূল ছেড়ে আসা সৌমেন্দু অধিকারীকে কাঁথি কেন্দ্র থেকে লড়াইয়ের সুযোগ দিয়েছে বিজেপির কেন্দ্রীয় নেতৃত্ব। রার্থী হিসেবে নাম ঘোষণার পরেই সৌমেন্দুকে ঘিরে জেলা পার্টি অফিসে উৎসবের আমেজ শুরু হয়ে যায়। তাঁকে মিষ্টিমুখ করান দলীয় নেতৃত্বরা।
সৌমেন্দু অধিকারীর প্রথম প্রতিক্রিয়া, “আমি কার্যকর্তা হিসেবে দায়িত্ব সামলাচ্ছি। তবে এতবড় দায়িত্ব পাব জানতাম না। দলের কেন্দ্রীয় নেতৃত্বরা আমার নাম ঘোষণা করেছেন। দলীয় স্তরে আমরা এমন কোনও জল্পনা শুনিনি। আমি খবর পেয়েই দলীয় পার্টি অফিসে চলে এসেছি। বাড়িতে বাবাকে ফোন করে জানাতে পারিনি”। তাঁর মতে, “আমরা প্রধানমন্ত্রী মোদিজীর হাত শক্ত করতে বদ্ধপরিকর। সেই কারনে পূর্ব মেদিনীপুরের কাঁথি ও তমলুক লোকসভা কেন্দ্রে লড়াইয়ের জন্য প্রস্তুত রয়েছি। এরজন্য কন্টাই লোকসভার ৭টি বিধানসভা কেন্দ্রেই ভালো ফল করতে পারব আশা রাখছি”। সৌমেন্দুর আশা, “এবার বিজেপি থেকে যিনিই প্রার্থী হন না কেন বাবা তাঁর জন্য প্রচার করতে যাবেন বলেছিলেন। আমি প্রার্থী হয়েছি। তাই বাবার পূর্ণ সমর্থন পাব”।