নিউজবাংলা ডেস্ক : অবৈধ নিয়োগের অভিযোগে এক ধাক্কায় রাজ্যের ৩৬ হাজার প্রশিক্ষণ হীন প্রাথমিক শিক্ষকের নিয়োগ বাতিলের নির্দেশ দিলেন কলকাতা হাইকোর্টের (Kolkata High Court) বিচারপতি অভিজিৎ গাঙ্গুলি। শুক্রবার এই রায় প্রকাশ্যে আসার পর রীতিমতো আলোড়ন পড়ে গিয়েছে গোটা রাজ্য জুড়ে। আনন্দবাজার অনলাইনে প্রকাশিত রিপোর্ট অনুযায়ী বিচারপতি নির্দেশ দিয়ে জানিয়েছেন, সদ্য খালি হয়ে যাওয়া এই শুন্যপদে আগামী ৩ মাসের মধ্যে প্রশিক্ষিতদের নিয়োগ করতে হবে। সেই সঙ্গে বরখাস্ত শিক্ষকদের আগামী ৪ মাস পার্শ্ব শিক্ষকের বেতনে স্কুলে কাজ চালিয়ে যাওয়ার নির্দেশও দিয়েছেন তিনি।
কিন্তু ঠিক কোন কারনে এমন নির্দেশ?
প্রসঙ্গতঃ নিয়োগ থেকে বঞ্চিত প্রিয়াঙ্কা নস্কর সহ ১৪০ জন অপ্রশিক্ষিত প্রার্থী হাইকোর্টে মামলা দায়ের করে অভিযোগ জানান, তাঁদের থেকে কম নম্বর পাওয়া প্রশিক্ষিতরা বহাল তবিয়তে চাকরীর সুপারিশপত্র পেয়ে কাজে যোগ দিয়েছেনন। সম্প্রতি হাইকোর্টের নির্দেশে নম্বর বিভাজনের তালিকা প্রকাশ্যে আসার পরেই এই বিষয়টি সামনে আসে। এই নিয়ে মামলা হতেই ক্ষুব্ধ বিচারপতি অভিজিৎ গঙ্গোপাধ্যায় ‘ঢাকি সমেত বিসর্জন দিয়ে দেব’ বলে মন্তব্য করেন।
এদিন বিচারপতি সেই মামলার রেশ ধরেই ৩৬ হাজার প্রাথমিক শিক্ষকের নিয়োগ বাতিলের নির্দেশ জারি করেন। মামলাকারীর আইনজীবি তরূনজ্যোতি তিওয়ারির বক্তব্য, ৩০ হাজার এমন প্রার্থী নিয়োগ পেয়েছেন যাদের নম্বর মামলাকারীদের থেকে কম। এই নিয়ে একাধিকবার শুনানি হয়। প্রাথমিকের এই নিয়োগের ইন্টারভিউয়ে ব্যাপক দুর্নীতি হয়েছে বলে অভিযোগ ওঠে। অবশেষে আজ বিচারপতি গঙ্গোপাধ্যায় এক ধাক্কায় রাঝের্য ৩৬ হাজার প্রাথমিক শিক্ষকের চাকরী বাতিলের যুগান্তকারী রায় দিয়েছেন।
আইনজীবির মতে, মামলাকারীদের থেকে কম নম্বর প্রাপ্ত অনেককে চাকরি দেওয়া হয়েছে। তাঁর অভিযোগ, ২০১৬ সালের নিয়োগ প্রক্রিয়ায় প্যানেলে ৮২৪ জনের নাম ছিল। মামলাকারীরা ইন্টারভিউ না দিয়েই তাঁদের থেকে বেশি নম্বর পেয়েছিলেন। তার পর ১৩৯ জনের একটি তালিকা তৈরি করা হয়, চাকরি যাঁরা পেয়েছেন, তাঁদের থেকেও এই ১৩৯ জনের নম্বর বেশি ছিল।
বিচারপতির নির্দেশ, আগামী ৩ মাসের মধ্যে নতুন করে প্রশিক্ষিতদের নিয়োগ করতে হবে। এবং যারা এই মুহূর্তে কাজ হারাচ্ছেন তাঁদের মধ্যে যারা ইতিমধ্যে প্রশিক্ষণ নিয়েছেন তাঁরাও এই নতুন নিয়োগে সামিল হতে পারবেন। তবে একলপ্তে এত বিপুল পরিমাণে প্রাথমিক শিক্ষকের চাকরী চলে যাওয়ার ঘটনায় শোরগোল পড়ে গিয়েছে সর্বত্র। এর আগেও রাজ্যে নিয়োগ দুর্নীতির অভিযোগে বহু শিক্ষকের চাকরী বাতিল হয়েছিল। এরপরেই চাকরী হারা প্রার্থীরা সুপ্রিম কোর্টের দ্বারস্থ্য হলে সেখানে হাইকোর্টের চাকরী বাতিলের নির্দেশে স্থগিতাদেশ দেওয়া হয়েছে। নতুন করে কাজ হারানো এই ৩৬ হাজার প্রাথমিক শিক্ষকও আগামী দিনে হাইকোর্টের এই নির্দেশকে চ্যালেঞ্জ করে সুপ্রিম কোর্টে যান কিনা সেদিকেই নজর থাকবে সবার।