ভুপতিনগর, পূর্ব মেদিনীপুর : স্বামীর লাগাতার হামলা ও অত্যাচারে বাপের বাড়িতে আশ্রয় নিয়েছিল স্ত্রী। সেই স্ত্রীকে পুনরায় বাড়ি ফেরাতে চেয়ে অনুরোধ উপরোধে কাজ না হওয়ায় রাগের বশে স্ত্রীর ওপর গুলি চালিয়ে বসল এক যুবক। বৃহস্পতিবার রাতে চাঞ্চল্যকর ঘটনাটি ঘটেছে ভগবানপুর বিধানসভার ভুপতিনগর (Bhupatinagar) থানার পাঁউশী গ্রামে।
ঘটনার পরেই চম্পট দিয়েছে অভিযুক্ত দীপঙ্কর দলপতি। এদিকে গুরুতর জখম অবস্থায় স্ত্রী যমুনা দলপতিকে স্থানীয় মুগবেড়িয়া গ্রামীন হাসপাতালে চিকিৎসার জন্য নিয়ে যাওয়া হয়েছে। চিকিৎসকরা জানিয়েছেন, মহিলার হাতে গুলি ঢুকে রয়েছে। তবে এই মুহূর্তে তাঁর অবস্থা স্থিতিশীল। এই ঘটনায় অভিযুক্ত যুবকের বিরুদ্ধে এলাকার প্রভাবশালী রাজনৈতিক ছত্রছায়ার অভিযোগ উঠেছে। ঘটনার তদন্ত শুরু করেছে পুলিশ।
স্থানীয় সূত্রে জানা গেছে, একই এলাকার বাসিন্দা দীপঙ্কর দলপতির সঙ্গে বেশ কয়েকবছর আগেই বিয়ে হয়েছিল যমুনা মিদ্যার। কখনও ট্রলারে আবার কখনও ভিন রাজ্যে কাজ করত দীপঙ্কর। তবে বাড়ি ফিরে এলেই স্ত্রীর ওপর অকথ্য অত্যাচার চালাত সে। এই নিয়ে একাধিকবার সালিশিও বসে। তবে বেপরোয়া দীপঙ্করের অত্যাচার তাতে এতটুকুও কমেনি। বাধ্য হয়েই স্বামীর বাড়ি ছেড়ে বাপের বাড়িতে চলে আসে যমুনা।
এরপর স্ত্রীকে বাড়ি ফিরিয়ে নিয়ে যাওয়ার জন্য একাধিকবার শ্বশুরবাড়িতে হামলা চালায় দীপঙ্কর। কখনও ধারালো অস্ত্র নিয়ে স্ত্রীকে ভয় দেখায় কখনও বন্দুক নিয়ে প্রাণে মারার হুমকি চলতে থাকে। এরই মাঝে বৃহস্পতিবার রাতের দিকে শ্বশুরবাড়িতে এসে স্ত্রীকে বাইরে ডেকে আনে। এরপরেই স্ত্রীকে লক্ষ করে দীপঙ্কর দু’রাউন্ড গুলি চালায় বলে অভিযোগ। একটি গুলি লাগে বাম হাতে এবং অপরটি পা ছুঁয়ে বেরিয়ে গিয়েছে বলে দাবী।
জনবহুল এলাকায় এমন গুলিকান্ডের জেরে ব্যাপক চাঞ্চল্য ছড়িয়ে পড়ে পাঁউশিতে। স্থানীয়রা ছুটে এলে ঘটনাস্থল থেকে অন্ধকারে গা ঢাকা দেয় দীপঙ্কর। অভিযুক্ত যুবক এলাকায় একটি প্রভাবশালী রাজনৈতিক দলের মাশলম্যান হিসেবে পরিচিত। যমুনা জানান, “আমাকে প্রায়শই মারধর করত। অত্যাচারের ভয়ে বাপের বাড়িতে চলে আসি। এখানে এসে বারে বারে হুমকি দিত। এভাবে যে সত্যিই প্রাণে মেরে ফেলার চেষ্টা করবে বুঝতে পারিনি”।
মুগবেড়িয়া হাসপাতাল সূত্রে খবর, এক্সরে রিপোর্টে দেখা গেছে একটি গুলি যমুনার ডান হাতের কনুইয়ের কাছে ঢুকে রয়েছে। অস্ত্রোপচার করে সেটি বের করতে হবে। রক্তপাত বন্ধ করতে আঘাত স্থলটিকে ব্যান্ডেজ বেঁধে দেওয়া হয়েছে। এই মুহূর্তে তাঁর অবস্থা এখন স্থিতিশীল।
যমুনার বাবা সুধাংশু মিদ্যা জানান, “জামাই আমার মেয়েকে গুলি করে দিয়েছে। এর আগে মাথা ফাটিয়ে দিয়েছিল। মুখে ঘুষি মেরেছিল। ভয়ে মেয়ে বাপের বাড়িতে আশ্রয় নেয়। এখন বন্দুক এনে এলাকায় দাপিয়ে বেড়ায়। এলাকার রাজনৈতিক নেতার হাত মাথায় রয়েছে বলে দাবী করে হুমকি দেয়। আমরা পুলিশকে জানিয়েছি এই দুষ্কৃতীকে দ্রুত ধরার জন্য। জামাই ধরা না পড়া পর্যন্ত আমরা আতংকের মধ্যে রয়েছি। তবে ভুপতিনগর থানা সূত্রে খবর, ঘটনার খবর পেয়েই অভিযুক্তের সন্ধানে তল্লাশি শুরু হয়েছে। তবে এখনও পর্যন্ত লিখিত অভিযোগ দায়ের হয়নি। অভিযোগ দায়ের হলে উপযুক্ত ব্যবস্থা নেওয়া হবে।