ময়না, পূর্ব মেদিনীপুর : ময়নার মৃত বিজেপি নেতা বিজয়কৃষ্ণ ভুঁইয়ার পরিবারের সুরক্ষার দায়িত্বভার নিল কেন্দ্রীয় বাহিনীর জওয়ানেরা। বুধবার সন্ধ্যে নাগাদ কেন্দ্রীয় বাহিনীর দল বিজয়কৃষ্ণর বাড়িতে (Moyna) এসে পৌছায়। বিজয়ের মৃত্যুর ৯ দিনের মাথায় কেন্দ্রীয় বাহিনী ময়নায় এসে পৌঁছল বলে পরিবারের দাবী।
তবে দেরীতে এলেও কেন্দ্রীয় বাহিনীর আগমণে মৃত বিজয়ের পরিবার যথেষ্টই খুশী। যদিও যে পুলিশের বিরুদ্ধে বিজয়ের মৃত্যুর সময় নিষ্ক্রীয়তার অভিযোগ উঠেছিল, সেই রাজ্য পুলিশ দিয়ে ঘটনার তদন্ত চালিয়ে যাওয়া কিছুতেই মেনে নিতে পারছেন না মৃতের পরিবারের লোকজন। বিজয়ের ছেলে রনজিৎ জানিয়েছেন, “তদন্তভার যতক্ষণ পর্যন্ত না কেন্দ্রীয় এজেন্সীর হাতে যাচ্ছে ততক্ষণ আমাদের লড়াই চলবে। যারা এই ঘটনায় জড়িত তাঁদের প্রত্যেকের কঠিন শাস্তি চাই” দাবী করেছেন তিনি।
গত ১লা মে সোমবার বিকেল ৫টা নাগাদ নিজের বাড়ির কাছেই দুষ্কৃতীদের হামলার নিহত হন ময়নার বাকচা পঞ্চায়েতের গোড়ামহল গ্রামের বিজেপির বুথ সভাপতি বিজয়কৃষ্ণ ভুঁইয়ার। ঘটনার সময় সেখানেই ছিলেন বিজয়ের স্ত্রী লক্ষ্মী ও ছেলে রনজিৎ। দুষ্কৃতীদের হামলায় তাঁরাও জখম হন। এরপর তাঁদের চোখের সামনে থেকেই বিজয়কে টেনে হিঁচড়ে নিয়ে যায় দুষ্কৃতীরা। স্থানীয়রা ঘটনার প্রতিবাদ জানাতে গেলে বোমা মেরে এলাকা সন্ত্রস্ত করে দুষ্কৃতিরা পালিয়ে যায়।
তবে মৃত বিজয়ের স্ত্রী ও ছেলের অভিযোগ, ঘটনাস্থল থেকে সামান্য দূরেই পুলিশ ফাঁড়িতে সাহায্য চাইতে গেলেও তাঁদের উলটে ধমক দিয়ে তাড়িয়ে দেওয়া হয়। পরে জানা যায়, পুলিশ মৃতদেহ উদ্ধার করে গোপনে দেহটিকে ঘুরপথে তমলুক জেলা সদর হাসপাতালে নিয়ে চলে যায়। পরে পরিবারের অমতে দেহ ময়না তদন্ত করে দেওয়া হয়। যদিও ঘটনার পরের দিনই বিজয়ের পরিবার হাইকোর্টে গেলে দেহ কলকাতার কমান্ড হাসপাতালে পুনরায় ময়না তদন্তের নির্দেশ দেওয়া হয়। সেই সঙ্গে মৃতের পরিবারকে কেন্দ্রীয় বাহিনী দিয়ে সুরক্ষার নির্দেশও দেওয়া হয়। তবে গত সোমবার এই মামলার রায়ে হাইকোর্ট রাজ্য পুলিশের তদন্তের ওপরেই আস্থা রাখে।
ঘটনার পর বেশ কিছুদিন কেটে গেলেও ময়নায় কেন্দ্রীয় বাহিনীর দেখা মেলেনি। এই নিয়ে বিস্তর গুঞ্জন শুরু হয় বিজেপির অন্দরেও। অবশেষে বুধবার দুপুর নাগাদ কেন্দ্রীয় বাহিনীর দুই আধিকারীক বিজয়কৃষ্ণর বাড়িতে আসে। জওয়ানরা কোথায় থাকবেন, কিভাবে মৃতের পরিবারকে সুরক্ষা দেওয়া হবে সেই নিয়ে বিস্তারিত তথ্য সংগ্রহ করেন তাঁরা। এরপর সন্ধ্যের অন্ধকারে ময়নায় পৌছান কেন্দ্রীয় বাহিনীর জওয়ানরা।
মৃত বিজয়ের মেয়ে টুম্পা ভুঁইয়া পতি জানান, “বাবার মৃত্যুর ৯ দিন পর আজ কেন্দ্রীয় বাহিনীর জওয়ান আমাদের সুরক্ষায় এসেছেন, এর জন্য তাঁদের অসংখ্য ধন্যবাদ জানাচ্ছি। রাজ্য পুলিশের ওপর আমাদের কোনও আস্থা নেই। এই তদন্ত শুরু হওয়ার পর মাত্র কয়েকজন ধরা পড়েছে। আরও অনেক দুষ্কৃতী এখনও বাইরে ঘুরে বেড়াচ্ছে। এরা ধরা না পড়া পর্যন্ত আমরা আতংকে রয়েছি। আজ কেন্দ্রীয় বাহিনী আসায় আমরা সাহস পাচ্ছি। এবার দুষ্কৃতীদের বিরুদ্ধে আমরা লড়াই চালিয়ে যেতে পারব”।
তবে এদিন কেন্দ্রীয় বাহিনীর জওয়ানরা কিছুই জানাতে চাননি। যদিও সূত্রের খবর, দুই আধিকারীকের নেতৃত্বে এই জওয়ানরা বিজয়কৃষ্ণর পরিবারের সুরক্ষায় মোতায়েন থাকবেন। পরবর্তী নির্দেশিকা না আসা পর্যন্ত জওয়ানরা এখানে থাকবেন বলে জানা গেছে। তবে সুরক্ষা ব্যবস্থার গোপনীয়তার জন্যই কতজন জওয়ান এদিন মৃতের বাড়িতে এসেছেন সেই বিষয়ে আধাসেনা আধিকারীকরা মন্তব্য করতে অস্বীকার করেছেন।