নিউজবাংলা ডেস্ক : কাঁথি শহরে গ্রিন সিটি মিশনে দুর্নীতির তদন্তে নেমে বিরোধী দলনেতা শুভেন্দু অধিকারীর বড়’দা কৃষ্ণেন্দু অধিকারীকে অযথা হেনস্থার অভিযোগে বড়সড় জরিমানার মুখে পড়লেন এক পুলিশ আধিকারীক। বুধবার কলকাতা হাইকোর্টে (Kolkata High Court) এই সংক্রান্ত মামলায় বিচারপতি অভিজিৎ গঙ্গোপাধ্যায় এগরার এসডিপিও’কে ৫ লক্ষ টাকা জরিমানার নির্দেশ দিয়েছেন। এই টাকা তাঁকে নিজের পকেট থেকে মেটাতে হবে বলে সংবাদ সংস্থা সূত্রে খবর। এবং আগামী ৪ সপ্তাহের মধ্যে সেই টাকা জমা না হলে প্রয়োজনে রুল জারি করা হবে বলেও হুঁশিয়ারি দিয়েছেন বিচারপতি।
সেই সঙ্গে এই মামলায় কৃষ্ণেন্দুকে আর কোনও নোটিশ পাঠানো যাবে না বলেও বিচারপতি নির্দেশ দিয়েছেন। আগের ইস্যু করা নোটিস খারিজ করা হল। এই প্রসঙ্গে বিচারপতি গঙ্গোপাধ্যায় বলেন, যদি পুলিশ কোনও পদক্ষেপ করে, তার বিরুদ্ধে আমি পদক্ষেপ করব।
এ দিন এই মামলার শুনানির সময় বিচারপতি গঙ্গোপাধ্যায়ের তীব্র ভর্ৎসনার মুখে পড়তে হয় পুলিশ-প্রশাসনকে। নির্দেশে বিচারপতি আরও উল্লেখ করেন, একজন সাক্ষীকে এভাবে হয়রানি ছাড়া আর কিছুই নয় । পুলিশ কোনও নাগরিককে হয়রানির জন্য তৈরি হয়নি। বিচারপতি গঙ্গোপাধ্যায়ের প্রশ্ন, সাক্ষী হিসেবে ডেকে কীভাবে ইনকাম ট্যাক্স রিটার্ন চাইতে পারেন?
উল্লেখ্য, পল্লব দত্ত নামে এক ব্যাক্তি পূর্ব মেদিনীপুরে দীঘা-মেচেদা রোডের দু’ধারে যে এলইডি আলো দেওয়া হয়েছে, তা নিয়ে আর্থিক দুর্নীতির অভিযোগ করেন । কাঁথি পৌরসভা এলাকায় 2016-2017 আর্থিক বছরে ওই আলোর ব্যবস্থা করা হয়। ২ থেকে ৩ কোটি টাকা খরচ করে ওই আলো রাস্তার দু’পাশে দেওয়া হয়। কিন্তু সেগুলো কোনও পরিচর্যা করা হচ্ছে না। তাই কাঁথি পৌরসভার তৎকালীন চেয়ারম্যানের বিরুদ্ধে দুর্নীতির অভিযোগ মামলা দায়ের করেন পল্লব দত্ত নামে ওই ব্যাক্তি। সেই সময় কাঁথি পৌরসভার চেয়ারম্যান ছিলেন শুভেন্দু অধিকারীর ছোট ভাই সৌমেন্দু অধিকারী।
এ দিন আদালতে শুভেন্দু-সৌমেন্দুদের বড়দা কৃষ্ণেন্দু অধিকারীর তরফে আইনজীবী ছিলেন রাজদীপ মজুমদার। তিনি আদালতে ব্যঙ্গের সুরে বলেন, ‘‘অভিযোগকারী মর্নিংওয়াকে গিয়ে দেখেন এবং মেচেদা বাইপাস থেকে দিঘা বাইপাসের আলোর সমস্যা নিয়ে একটি অভিযোগ জানান । সেই দিনই কাঁথি থানায় বিরোধী দলনেতার ভাইয়ের (সৌমেন্দু অধিকারী) নামে এফআইআর দায়ের হয়ে গেল। সেই মামলাতেই 160 নোটিস ইস্যু করে ডেকে পাঠানো হয়েছে কৃষ্ণেন্দু অধিকারীকে।”
শুভেন্দু অধিকারী বিজেপিতে যাওয়ার পর শান্তিকুঞ্জের (শুভেন্দু-শিশিরের বাড়ি) সঙ্গে তৃণমূলের দূরত্ব বাড়ে। বিজেপির অভিযোগ, তার পর থেকেই অধিকারীদের বিরুদ্ধে একাধিক দুর্নীতির মামলা করা হয়। তেমনই একটি অভিযোগ, এই ‘গ্রিন সিটি মিশন’ প্রকল্পের দুর্নীতি সংক্রান্ত তদন্ত। অভিযোগ উঠেছিল ‘গ্রিন সিটি’ প্রকল্পের আওতায় বিভিন্ন হাই মাস্ট বাতিস্তম্ভ, বাতিস্তম্ভের সৌন্দর্যায়ন এবং প্রকল্পের আওতায় অন্যান্য সৌন্দর্যায়নের কাজে আর্থিক দুর্নীতি হয়েছে। ওই ঘটনায় সরাসরি নবান্নের নির্দেশে জেলা প্রশাসনের তদারকিতে জেলাশাসকের নির্দেশে কমিটি গঠনও করা হয়।
সেই কমিটিতে ছিলেন পূর্ব মেদিনীপুর জেলার অতিরিক্ত জেলাশাসক, জেলার অতিরিক্ত পুলিশ সুপার, কাঁথির মহকুমাশাসক, মহকুমা পুলিশ আধিকারিক, কাঁথি থানার আইসি-সহ প্রশাসনিক কর্তা এবং কাঁথি পুরসভার চেয়ারম্যান। ইতিমধ্যে তদন্তের বেশির ভাগ নথি সংরক্ষণ করা হয়েছে।মামলার তদন্তের জন্য কাঁথির সাংসদ শিশির অধিকারীর বড় ছেলে কৃষ্ণেন্দু অধিকারী ও তমলুকের সাংসদ দিব্যেন্দু অধিকারীর স্ত্রী সুতপা অধিকারীকে ১৬০-এর নোটিস পাঠান কাঁথি থানার তদন্তকারী অফিসারেরা।
আইনজীবী রাজদীপ মজুমদার আরও বলেন, “পুলিশ-প্রশাসন কী জিজ্ঞাসা করতে চান, সেই প্রশ্ন দু’দিন আগে দিলে কৃষ্ণেন্দু অধিকারী পারবেন এবং তদন্তে সহযোগিতা করতে পারবেন। 160-এর নোটিশ দিয়ে মামলাকারীকে আইটি রিটার্নের (আয়কর দেওয়ার তথ্য) কাগজ যেতে বলা হয়েছে। এই মামলায় আইটি রিটার্নের কাগজ কী কারণে প্রয়োজন ?”
সব পক্ষের বক্তব্য শোনার পর বিচারপতি অভিজিৎ গঙ্গোপাধ্যায় রাজ্যের আইনজীবীর কাছে জানতে চান, পুলিশ যদি কোনও কিছুর তদন্তের জন্য কাউকে করে, তাহলে কি তাঁর কাছে ১০ বছরের আয়কর রিটার্ন সংক্রান্ত তথ্য চাইতে পারে ? পুলিশ অযথা হয়রানি করার জন্য তাঁকে তলব করেছে, একজন ভারতীয় নাগরিককে এই ভাবে পুলিশ হয়রানি করতে পারে না।
- তথ্যসূত্র – আনন্দবাজার অনলাইন, ইটিভি ভারত