নিউজবাংলা ডেস্ক : দেশজুড়ে প্রথমদফার নির্বাচনের মধ্যেই ভোটগ্রহণ চলছে এই রাজ্যের তিন লোকসভা কেন্দ্রে। এই কেন্দ্রগুলি হল আলিপুরদুয়ার (তফসিলি জনজাতি অধ্যুষিত), জলপাইগুড়ি (তফসিলি জাতি অধ্যুষিত) এবং কোচবিহার (তফসিলি জাতি অধ্যুষিত) কেন্দ্রে। আর ভোট গ্রহণ শুরু হওয়ার থেকেই একের পর এক অশান্তির (Loksabha Election 2024) খবর আসছে উত্তরবঙ্গ থেকে। কোথাও পার্টি অফিসে হামলা হয়েছে, কোথাও আবার বুথের এজেন্টকে মেরে বের করে দেওয়া হয়েছে। বোমাবাজির ঘটনাও ঘটেছে দু’এক জায়গায়। এই ঘটনায় তৃণমূল ও বিজেপি দু’পক্ষেরই একাধিক ব্যক্তি আহত হয়েছেন বলে অভিযোগ।
সূত্রের খবর, দিনহাটায় তৃণমূল নেতা ভোট দিতে গিয়ে হামলায় আক্রান্ত হয়েছেন বলে অভিযোগ উঠেছে। কোচবিহারের ভেটাগুড়িতে তৃণমূলের ব্লক সভাপতির ওপর হামলা হয়েছে বলে অভিযোগ। এই ঘটনায় তৃণমূল নেতা অনন্ত বর্মণ গুরুতরর জখম হয়েছেন। খবর পেয়ে এলাকায় ছুটে যান উদয়ন গুহ। প্রথমে তিনি থানায় যান। সেখান থেকে আহত অনন্ত বর্মণকে দেখতে হাসপাতালে ছুটে যান উদয়ন।
অন্যদিকে বিজেপির দাবী, কোচবিহার দক্ষিণ বিধানসভা কেন্দ্রের চান্দামারিতে বৃহস্পতিবার রাতে তৃণমূলের বাহিনী দ্বারা ‘আক্রান্ত’ হন বিজেপি নেতা লব সরকার। এমনই দাবি বিজেপি শিবিরের। অভিযোগ, মারধর করে তাঁর মাথা ফাটিয়ে দেওয়া হয়। পাশাপাশি ছিনতাই করে নেওয়া হয় তাঁর বাইক-সহ টাকাপয়সা। আহত অবস্থায় ওই বিজেপি কর্মী কোচবিহারের এক বেসরকারি হাসপাতালে চিকিৎসাধীন। তৃণমূলের দাবি, শুক্রবার সকালের সংঘর্ষে তাদেরও এক কর্মী আহত হয়েছেন। তৃণমূলের অভিযোগ, সকাল থেকেই তাদের বুথ এজেন্টদের বসতে বাধা দেয় বিজেপি। বাধা দিতে গেলে নাকি মারধর করে বিজেপির গুন্ডারা। এছাড়াও দিনহাটায় বিজেপি নেতার বাড়ির সামনে তাজা বোমা পড়ে থাকতে দেখা গিয়েছে। এই নিয়ে কমিশনে নালিশ জানিয়েছে বিজেপি।
কোচবিহারে বিজেপির জেলা সম্পাদক অজয় রায়ের অভিযোগ, “উদয়ন গুহ এলাকায় উত্তেজনা ছড়াতে গিয়েছেন। এই এলাকার মানুষ প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদীকেই ভালো বাসেন। তাই তৃণমূল যতই চেষ্টা করুক, এলাকার মানুষদের কিছুতেই দমাতে পারবেন না”। পাল্টা উদয়ন গুহ’র দাবী, “একের পর জায়গায় তৃণমূল হামলার শিকার হচ্ছে। বিজেপি যে ভাবে সন্ত্রাস ছড়িয়ে ভোট নিতে চাইছে তার বিরুদ্ধে মানুষ রুখে দাঁড়াচ্ছে” বলেই জানিয়েছেন তিনি।
জলপাইগুড়ি জেলার ডাবগ্রাম ফুলবাড়ি বিধানসভা কেন্দ্রের সিপাইপাড়া এলাকায় পুড়ল বিজেপির বুথ অফিস। অভিযোগ, কেউ বা কারা রাতে বিজেপির বুথ অফিসে আগুন লাগিয়ে দেয়। দলীয় পতাকা থেকে ব্যানার সব পুড়ে ছাই। এলাকার বুথ সভাপতি তথা বিজেপি কর্মী গৌতম রায় বলেন, “রাত ৯টার পর ঘটনা ঘটেছে। আমরা রাত পর্যন্ত সব কাজকর্ম শেষ করে বাড়ি যাই৷ তার পরই এই খবর পাই। ভোরবেলা এসে দেখি এই অবস্থা। কিন্তু আগে কোনও দিন এই ধরনের ঘটনা ঘটেনি। কাউকে দেখিনি। তাই কারও বিরুদ্ধে অভিযোগ করতে পারছি না। গোটা ঘটনা প্রশাসন-সহ এলাকার বিজেপি বিধায়ক শিখা চট্টোপাধ্যায়কে জানিয়েছি।”
তৃণমূলের অভিযোগ, বিজেপি আশ্রিত গুন্ডারা বৃহস্পতিবার রাতে তুফানগঞ্জ-২ ব্লকের বারোকোডালি-১ গ্রাম পঞ্চায়েতের হরিরহাট এলাকায় তাদের অস্থায়ী নির্বাচনী দলীয় দফতরে আগুন ধরিয়ে দেয়। বারোকোডালি-১ আইএনটিটিইউসি-র সভাপতি অনিল বর্মণ এই প্রসঙ্গে বলেন, “জনগণ যে হেতু বিজেপিকে প্রত্যাখ্যান করেছে, তারা এখন মানুষের অধিকারই কেড়ে নেওয়ার চেষ্টা করছে।”
এদিকে মাথাভাঙায় ২২৬/২২৭ নং বুথ বুথে তৃণমূলের এজেন্টকে বের করে দেওয়া হয়েছে বলে অভিযোগ উঠেছে। আতংকে তৃণমূলের সমর্থকরা ভোট দিতে যেতে পারেননি। ভয়ে বুথ মুখো হচ্ছেন না কেউই। পরে তৃণমূলের ব্লক সভাপতি উদ্যোগ নিয়ে ভোটারদের বুথে নিয়ে যায়। খবর পেয়ে বিশাল পুলিশ বাহিনী বুথের সামনে এসে ভোটারদের নিশ্চিন্তে ভোট দেওয়ার জন্য আশ্বস্ত করেন।
ইতিমধ্যে রাজ্যপাল সি ভি আনন্দ বোসের উদ্যোগে রাজভবনে পিস রুম খোলা হয়েছে। যেখানে একের পর এক অভিযোগ আসছে উত্তরবঙ্গ থেকে। রাজ্যপাল সংবাদমাধ্যমে জানান, “আমি সমস্ত বিষয়ে নজর রাখছি। একের পর জায়গা থেকে অভিযোগ আসছে। আমরা সেই অভিযোগের বিষয়ে পুলিশকে অবগত করাচ্ছি। এই বিষয়ে উপযুক্ত ব্যবস্থা নিতে বলা হচ্ছে পুলিশকে”।