হলদিয়া, পূর্ব মেদিনীপুর : গ্যাসের ভর্তুকি ডিপার্টমেন্ট-এর নাম করে একের পর গ্যাসের গ্রাহকদের টার্গেট করছে জালিয়াত চক্র। গ্রামে গঞ্জে এমনই অভিযোগ ঘিরে বাড়ছে রহস্য। বর্তমানে উজ্জ্বলা গ্যাস সিলিন্ডার প্রতি ৩০০ টাকা ভর্তুকি দিচ্ছে কেন্দ্রের সরকার। আর সেই টাকা পাইয়ে দেওয়ার নাম করেই গ্রামের সাধারণ মানুষদের ফাঁদে ফেলার জন্য সক্রিয় হয়ে উঠেছে জালিয়াত চক্রগুলি। এমনকি সাধারণ গ্যাসের গ্রাহকদেরও ফাঁদে ফেলার চেষ্টা চলছে অবিরত।
ইতিমধ্যে এই চক্রের ফাঁদে পা দিয়ে একাধিক গ্যাসের গ্রাহক টাকা খুইয়েছেন। তবে সেই টাকার পরিমান ১০ হাজার বা তারও কম হওয়ায় থানায় অভিযোগ জানাতে অনীহা রয়েছে গ্রাহকদের। তাছাড়া অত্যন্ত সাধারণ মানুষ এই প্রতারণা চক্রে পড়ছে বলেও থানা পুলিশ করতে চাইছেন না অধিকাংশ মানুষ। এক্ষেত্রে তাই সাধারণ মানুষের সচেতনতাই একমাত্র এই দুষ্ক্রিতী চক্রকে ঠেকাতে পারে বলে মনে করছেন প্রশাসনিক আধিকারীকরা।
এই চক্রের ফোন পেয়ে রীতিমতো আতংকিত মহিষাদলের সঞ্জীব চক্রবর্তী। তিনি সাধারণ গ্যাসের গ্রাহক হলেও টাকা পাওয়ার ফোন পেয়ে তিনি প্রথমে ঘাবড়ে গিয়েছিলেন। সঞ্জীব জানান, “আমাকে ফোন করে জানানো হয় ‘গ্যাসের ভর্তুকি ডিপার্টমেন্ট থেকে বলছি’। আমাকে ২০ হাজার টাকা পাইয়ে দেওয়ার কথা বলে ওরা। তৎক্ষণাৎ গ্যাস বিতরক সংস্থার সঙ্গে কথা বলেই সত্যতা জানতে পারি। এরপরেই আর ওটিপি দিতে রাজি হইনি”। সঞ্জীব জানিয়েছেন তাঁকে ফোন করা হয়েছিল ৯৬৭৯৮৭৮০২১ নম্বর থেকে। শনিবার একই কায়দায় মহিষাদলের বসানচকের আর এক গ্যাস গ্রাহক অষ্টমী মাইতির বাড়িতে ফোন করে দুষ্কৃতীরা ওটিপি হাতিয়ে নিয়েছে বলে খবর।
অত্যন্ত চতুর, ওই প্রতারকরা নিজেদের গ্যাস অফিসের কর্মী পরিচয় দিচ্ছে। গ্রাহকের বিশ্বাস আদায়ে নির্দিষ্ট করে গ্যাস বিতরক সংস্থার নামও জানানো হচ্ছে। কখনও আবার প্রতারকরা গ্রাহক আইডিও জানিয়ে দিচ্ছে। সব মিলিয়ে সাবসিডি বিভাগের নাম করে এমন ভুয়ো চক্র বহু মানুষকেই প্রতারণার ফাঁদে ফেলার চেষ্টা চালিয়ে যাচ্ছে অবিরত। এই মুহূর্তে সাধারণ গ্যাস গ্রাহকেরা সতর্ক না হলে তাঁদের বড়সড় ক্ষতির মুখে পড়তে হবে।
প্রতারণা চক্রের হাত থেকে রেহাই পাচ্ছেন না গ্যাস বিতরক সংস্থাগুলিও। গ্যাসের ডেলিভারী বয় বা বিতরক সংস্থার কাছে ফোন কলে ভুয়ো পুলিশ বা সেনাবাহিনী পরিচয়ে গ্যাস পাঠাতে হলা হচ্ছে। তারজন্য স্থানীয় জিপিএস লোকেশানও পাঠানো হচ্ছে। ওই প্রতারকদের গ্যাস দেওয়ার শর্তে রাজি হলেই ব্যাঙ্ক অ্যাকাউন্টের তথ্য চাওয়া হচ্ছে। এরপর কোনও ভাবে মোবাইলের ওটিপি হাতিয়ে নিলেই কেল্লা ফতে।
সম্প্রতি পুলিশ পরিচয়ে এমনই একটি ব্যাঙ্ক জালিয়াতির ঘটনা ঘটেছে পূর্ব মেদিনীপুরের তমলুকে। স্থানীয় পদুমবসানের আচার্যপাড়ার বাসিন্দা বেসরকারী সংস্থার কর্মীকে ভুয়ো মুম্বই পুলিশ পরিচয় দিয়ে ব্যাঙ্ক অ্যাকাউন্ট থেকে দফায় দফায় প্রায় ৩৩ লক্ষ টাকা হাতিয়ে নিয়েছে প্রতারকরা। এরমধ্যে রয়েছে ব্যাঙ্ক অ্যাকাউন্টে থাকা ফিক্সড ডিপোজিট ও সেভিংসে থাকা ১৩ লক্ষ ২২ হাজার ৭০০ টাকা এবং ২০ লক্ষ টাকার প্রিঅ্যাপ্রুভ লোন। ওই যুবকের অভিযোগের ভিত্তিতে ইতিমধ্যে তমলুকের সাইবার ক্রাইম থানা ঘটনার তদন্ত শুরু করেছে।