নন্দীগ্রাম : সরকারী প্রকল্পের টাকা অবলীলায় খেয়ে নিয়েছে পঞ্চায়েতের দায়িত্বে থাকা জনপ্রতিনিধিরা। সম্প্রতি আবাস যোজনায় লাগাম ছাড়া দুর্নীতি প্রকাশ্যে। এর প্রতিবাদে নন্দীগ্রাম (Nandigram) জুড়ে একের পর এক গ্রাম পঞ্চায়েতে গিয়ে বিক্ষোভ দেখাচ্ছে বিজেপি।
শুক্রবার নন্দীগ্রাম ২ ব্লকের আমদাবাদ ১ গ্রাম পঞ্চায়েতের বিরুদ্ধে এমনই একাধিক দুর্নীতির অভিযোগ তুলে গেটে তালা লাগিয়ে দেওয়ার চেষ্টা করে বিজেপি কর্মীরা। এই নিয়েই পুলিশের সঙ্গে ব্যাপক ধ্বস্তাধ্বস্তিতে জড়িয়ে পড়ে গেরুয়া শিবির। এই নিয়ে ব্যাপক উত্তেজনা ছড়ায় এলাকায়।
বিজেপির দাবী, পুলিশ দিয়ে আন্দোলন দমিয়ে দিতে চাইলে মানুষ এর জবাব দেবে। নন্দীগ্রামের দুই ব্লকের সমস্ত পঞ্চায়েতেই লাগামছাড়া দুর্নীতি হয়েছে। এর জবাব চাইছে সাধারণ মানুষ। প্রশাসন জবাব না দিলে প্রয়োজনে বিডিও অফিসের সামনে গিয়ে অবস্থান বিক্ষোভ করবে বিজেপি। যদিও তৃণমূলের দাবী, পঞ্চায়েতে ভোটে লড়াইয়ের লোক না পেয়েই এভাবে ঝামেলা পাকিয়ে নিজেদের অস্তিত্ব জানান দিচ্ছে বিজেপির লোকজন।
![](https://newzbangla.com/wp-content/uploads/2022/12/ndgm.jpg)
প্রসঙ্গতঃ গত পঞ্চায়েত নির্বাচনে নন্দীগ্রামের ২টি ব্লকের ১৭টি গ্রাম পঞ্চায়েতের একচেটিয়া ভাবে ক্ষমতায় এসেছিল তৃণমূল কংগ্রেস। সেই সময় দলের নেতৃত্বে ছিল শুভেন্দু অধিকারী। এখন সেই শুভেন্দুই আবার বিজেপি বিধায়ক এবং রাজ্যের বিরোধী দলনেতা। স্বাভাবিক ভাবেই এবার পঞ্চায়েত নির্বাচনে নন্দীগ্রামের এই ১৭টি গ্রাম পঞ্চায়েত দখল নেওয়াটাই বিজেপির প্রধান লক্ষ্য।
তারজন্যই ভোটের নির্ঘণ্ট ঘোষণা না হলেও একাধিক দুর্নীতি ইস্যুতে একের পর এক গ্রাম পঞ্চায়েতে গিয়ে বিক্ষোভ কর্মসূচী নিচ্ছে গেরুয়া শিবির। বৃহস্পতিবার বিরুলিয়া পঞ্চায়েতে তালা ঝুলিয়ে বিক্ষোভ দেখানোর পর আজ আমদাবাদ পঞ্চায়েতে তালা ঝোলানোর পরিকল্পনা ছিল গেরুয়া শিবিরের।
কিন্তু আজ আগাম বিক্ষোভের খবর পেয়েই বিশাল পুলিশ বাহিনী ঘিরে রাখে আমদাবাদ পঞ্চায়েত ভবন। বিজেপির নেতাকর্মীরা মিছিল করে পঞ্চায়েতে পৌঁছে গেটে তালা ঝোলাতে গেলে পুলিশের সঙ্গে তাঁদের ধ্বস্তাধ্বস্তি বেঁধে যায়। বেশ কিছু সময় এমন অচলাবস্থা চলতে থাকে। এর জেরে পরিস্থিতি যথেষ্ট উত্তপ্ত হয়ে ওঠে। বিজেপির তমলুক সাংগঠনিক জেলার সহ সভাপতি প্রলয় পালের দাবী, “এখানকার ১৭টি পঞ্চায়েতে গায়ের জোরে চেয়ার দখল করেছিল তৃণমূল। সমস্ত আসনে বিরোধী শূন্য করে ক্ষমতায় এসেছিল ওরা”।
প্রলয় জানান, “বিরোধী শূন্য হওয়ায় পঞ্চায়েত প্রধান সহ বহু নেতা কর্মী লাগামছাড়া দুর্নীতিতে যুক্ত। গাছ কেটে টাকা না দেওয়া, রাস্তা করার নামে টাকা তুলে নিয়েছে। নতুন সংযোজন আবাস যোজনায় দুর্নীতি। যার পাকা বাড়ি, আগে দু তিনবার পেয়েছে এমন লোকেদের নাম আবারও তালিকায় উঠেছে” বলে দাবী প্রলয়ের।
প্রলয় জানান, “পঞ্চায়েতের দুর্নীতি নিয়ে প্রমাণ সহ বিডিও অফিসে অভিযোগ জানিয়েছি। কিন্তু তারপরেও আবাস যোজনায় ভুয়ো লোকেদের ঘর পাইয়ে দেওয়া হয়েছে। এই কারনেই গতকাল বিরুলিয়ায় তালা ঝুলিয়ে দিয়েছিলাম, বিডিও’র জবাব চেয়েছিলাম দুর্নীতির বিষয়ে। কিন্তু সেখানে উনি আসেননি। আজ আমদাবাদ গ্রাম পঞ্চায়েতে তালা ঝুলিয়ে অবস্থান করেছি, সেখানেও বিডিও আসেননি। কিন্তু দুর্নীতির অভিযোগ পাওয়ার পরেও কেন উনি কোনও ব্যবস্থা নেননি এই দাবীতে আগামি দিনে বিডিও অফিসে গিয়েও আমরা অবস্থান বিক্ষোভ করব।
তবে বিজেপির এই বিক্ষোভকে বিশেষ আমল দিতে নারাজ তৃণমূল। তৃণমূল নেতা স্বদেশ দাসের পাল্টা দাবী, “নন্দীগ্রামের পঞ্চায়েতগুলির ক্ষমতা দখলে মরিয়া হয়ে উঠেছে শুভেন্দু অধিকারী। বহু বুথেই বিজেপির প্রার্থী খুঁজে পাবে না। সেখানে ভুয়ো অভিযোগ তুলে একের পর এক পঞ্চায়েত এলাকাকে অশান্ত করতে চাইছে বিজেপি। সবাই বুঝে গেছে এটা নিছকই ভোটের রনকৌশল। এভাবে অশান্তি পাকিয়ে একটিও পঞ্চায়েতে বিজেপি জিততে পারবে না” বলেই দাবী জানিয়েছেন স্বদেশ।