তমলুক, পূর্ব মেদিনীপুর : দিন কয়েক আগে পূর্ব মেদিনীপুরের কাঁথি পিকে কলেজ গ্রাউন্ডের জনসভায় এসে ‘এক ডাকে অভিষেক’ প্রকল্পের ঘোষণা করেছিলেন তৃণমূলের সর্বভারতীয় সভাপতি সাংসদ অভিষেক ব্যানার্জী। প্রকাশ্যে জানিয়েছিলেন নিজের ফোন নম্বর। সেই ফোন নম্বরেই তমলুকের শান্তিপুর ১ গ্রাম পঞ্চায়েতের প্রধান সেক সেলিম আলির বিরুদ্ধে ভুরি ভুরি অভিযোগ জানিয়েছিলেন এলাকাবাসীরা। তৃণমূলের অন্তরতদন্তে সেই অভিযোগের সারবত্তা মেলে। দলের তরফে পঞ্চায়েত প্রধানকে ইস্তফা দিতে নির্দেশ দেওয়া হয়। যা একডাকে অভিষেক প্রকল্পে প্রথম শাস্তি হিসেবেই দাবী তৃণমূলের।
বিষয়টি প্রকাশ্যে আসার সঙ্গে সঙ্গেই মঙ্গলবার রাতে তড়িঘড়ি নিজের পদ থেকে ইস্তফা দিলেন অভিযুক্ত পঞ্চায়েত প্রধান। ব্যক্তিগত সমস্যার কথা জানিয়ে শহীদ মাতঙ্গিনী ব্লকের সমষ্টি উন্নয়ন আধিকারীকের কাছে নিজের ইস্তফাপত্র পাঠিয়েছেন তৃণমূল নেতা। বিষয়টি নিয়ে ইতিমধ্যেই ব্যাপক শোরগোল শুরু হয়েছে জেলার রাজনৈতিক মহলে। বিষয়টি নিয়ে তৃণমূল নিজেদের স্বচ্ছ ভাবমূর্তি তুলে ধরার চেষ্টা চালালেও বিজেপি এটাকে নেহাতই পঞ্চায়েত ভোটের আগে আই ওয়াশ বলেই কটাক্ষ ছুঁড়ে দিয়েছে।
তৃণমূলের তরফে একটি প্রেস বিজ্ঞপ্তি দিয়ে জানানো হয়, ‘এক ডাকে অভিষেক’ কর্মসূচী ঘোষণার পর সেলিম আলির বিরুদ্ধে একাধিক অভিযোগ জমা হয়। তাঁর বিরুদ্ধে ষাটের বেশী বেনামী সম্পত্তির পাশাপাশি ঠিকাদারী করারও অভিযোগ ওঠে। সেই অভিযোগ পাওয়ার পরেই দলের তরফে অন্তরতদন্ত শুরু হয়। যেখানে সেলিম আলি’র বিরুদ্ধে সমস্ত অভিযোগ প্রমাণিত হয়েছে। এরপরেই সেলিম আলিকে পঞ্চায়েত প্রধানের পদ থেকে পদত্যাগ করার নির্দেশ দেওয়া হয়।
তবে তৃণমূলের এই অবস্থানকে কটাক্ষ করে বিজেপির তমলুক সাংগঠনিক জেলার সভাপতি তপন ব্যানার্জীর দাবী, ”শাসক দলই উত্তর দিতে পারবেন এতদিন তাঁরা কোথায় ছিলেন। ওই পঞ্চায়েত প্রধান হয়তো এখন তৃণমূলের হাতে তোলাবাজির টাকা তুলে দিতে পারছেন না বলেই তাঁকে সরিয়ে নতুন কাউকে দায়িত্বে আনা হবে। এটা সম্পূর্ণ লোক দেখানো। সারা জেলার প্রতিটি গ্রাম পঞ্চায়েতেই পাহাড় প্রমাণ দুর্নীতি হয়েছে। এখন ভোটের মুখে এসে কিছু প্রধান, পঞ্চায়েত সদস্যকে সরিয়ে মানুষের ক্ষোভ ধামা চাপা দিতে চাইছে তৃণমূল”।
তৃণমূলের দাবী, দলের সর্বভারতীয় সাধারণ সম্পাদক অভিষেক ব্যানার্জী বারেবারেই বলে এসেছেন কোনও রকম দুর্নীতিকে প্রশ্রয় দেওয়া হবে না। যারা দল করবেন তাঁরা কোনও ভাবেই ঠিকাদারি করতে পারবেন না। যারা এমনটা করবেন তাঁদের দলের পদ ছাড়তে হবে। শান্তিপুরের পঞ্চায়েত প্রধানের ক্ষেত্রেও একাধিক অভিযোগ প্রমাণিত হওয়ায় তাঁকে পদত্যাগ করতে বলা হয়েছে। তবে এই বিষয়ে সেলিম আলি প্রকাশ্যে কোনও মন্তব্য করেননি। বিষয়টি নিয়ে দলের জেলা নেতৃত্বের সঙ্গে বারেবারে যোগাযোগের চেষ্টা হলেও কোনও উত্তর মেলেনি।