নিউজবাংলা ডেস্ক : “তৃণমূলে যাওয়া মস্তবড় ভুল ছিল, এরজন্য জনতার কাছে করজোড়ে ক্ষমা প্রার্থনা করছি আমি”, ঠিক এই ভাষাতেই তৃণমূলের বিরুদ্ধে সুর চড়ালেন কাঁথির বর্ষীয়ান সাংসদ শিশির অধিকারী। বুধবার সন্ধ্যে নাগাদ রামনগরে প্রকাশ্য জনসভায় (Sisir Adhikary) দাঁড়িয়ে স্বপরিবারে তৃণমূলে যোগ দেওয়ার সিদ্ধান্তের জন্য ক্ষমা প্রার্থনা করেন তিনি। শিশিরের দাবী, “সেদিন যদি চোখ মুখ ওইদিকে না ঘোরাতাম আজ তাহলে বাংলার যুবকদের এই দুর্দশা হত না। আমরা চরম ঘৃণা ভরে আপনাদের অনুরোধ করছি ওদের থেকে মুখ ফিরিয়ে নিন”।
ছেলে সৌমেন্দু অধিকারীর সমর্থনে ভোট প্রচারে বেরিয়েছিলেন শিশির অধিকারী। রামনগরের পদিমা ১ গ্রাম পঞ্চায়েতে নির্বাচনী জনসভায় যোগ দেন শিশির। সেখানেই তৃণমূলের বিরুদ্ধে লাগাতার আক্রমণ করেন শিশির অধিকারী। শিশিরের দাবী, “তৃণমূল দলটা চোর ডাকাতে ভরে গিয়েছে। এটা লক্ষ্মীর ভান্ডারে ভোট নয় কিংবা সমুদ্র সাথীর ভোট নয়, এটা দেশ গড়ার ভোট। এত দুর্নীতি জালিয়াতি আমি অন্য কোথাও বা কোন রাজ্যে দেখিনি”।
আরও পড়ুন : এবার কুনালের মন্তব্যে কি ঘুম ছুটবে তৃণমূলের, নিয়োগ দুর্নীতি নিয়ে বোমা ফাটালেন সদ্য অপসারিত তৃণমূলের রাজ্য সাধারণ সম্পাদক ! |
শিশিরের মতে, “আমি জানিনা আমার চেয়ে বয়স্ক লোক আর পশ্চিম বাংলার রাজনীতিতে আছে কিনা। সেই আমিই আপনাদের কাছে হাত জোড় করে ক্ষমা চেয়ে নিচ্ছি সেদিনের সিদ্ধান্তের জন্য। আমাদের সেদিনের ভুলের জন্য আজ বাংলাকে প্রায়শ্চিত্ত করতে হচ্ছে”।
প্রসঙ্গতঃ মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় তৃণমূল দল গঠন করার সময় শিশির অধিকারী কংগ্রেসের নেতা ছিলেন। তবে পরবর্তীকালে তিনি তৃণমূলে যোগ দেন। তিনি তৃণমূলের হয়ে কাঁথি পুরসভার চেয়ারম্যান হন, পরে বিধায়ক ও কাঁথির সাংসদ হিসেবে জয়ী হন শিশির। এরপর একে একে ছেলে শুভেন্দু অধিকারী তৃণমূলে এসে কাঁথি পুরসভার চেয়ারম্যান, তমলুকের সাংসদ, বিধায়ক ও রাজ্যের মন্ত্রী হয়েছেন। আর এক ছেলে দিব্যেন্দু প্রথমে বিধায়ক পরে তমলুকের সাংসদ হয়েছেন।
ছোট ছেলে সৌমেন্দু তৃণমূলে এসে কাঁথি পুরসভার চেয়ারম্যানের দায়িত্ব সামলেছেন। একসময় পূর্ব মেদিনীপুর জেলা অধিকারী পরিবারের গড় হিসেবে বিবেচিত হত। তবে ২০২১ এর বিধানসভা নির্বাচনের আগেই বিজেপিতে চলে যান শুভেন্দু। তারপর থেকেই অধিকারী পরিবারের সঙ্গে দূরত্ব বাড়তে থাকে তৃণমূলের। বর্তমানে গোটা অধিকারী পরিবারই তৃণমূল ছেড়ে যোগ দিয়েছেন গেরুয়া শিবিরে।
আরও পড়ুন : ময়নার বিজেপি কর্মীদের দেহ দ্বিতীয়বার ময়না তদন্তের নির্দেশ হাইকোর্টের, এক সপ্তাহ আগে উদ্ধার হয়েছিল ঝুলন্ত দেহ ! |
শিশিরের আক্ষেপ, “এখন কথায় কথায় আমাদের পরিবারের শ্রাদ্ধ করা হচ্ছে। আদালতকে অবমাননা করা হয়েছে”। তিনি মমতাকে কটাক্ষ করে বলেন, “মুখ্যমন্ত্রী টালির ছাউনিতে থাকেন। অথচ কলকাতায় তাঁর ২৯টি বাড়ি রয়েছে । তিনি কেন্দ্রীয় সরকারের কাছে ১০০ দিনের টাকার কোন হিসাব না দিয়েই যা খুশি তা করে বেড়াচ্ছেন। আবার এই রাজ্যে চাকরি ক্ষেত্রে দুর্নীতি যেটা অন্য কোথাও দেখা যায়নি। এমন সরকার কোনও ভাবেই ক্ষমতায় থাকতে পারে না”।
ভোটারদের প্রতি শিশিরের আবেদন, “অনেকের হয়তো এখনও সহানুভুতি আছে, ভুল করছেন। আপনারা এখনই সতর্ক হয়ে যান। না হলে মার খাওয়ার জন্য তৈরি হয়ে থাকতে হবে”। তিনি হুঁশিয়ারি দিয়ে বলেন, “যারা ভাবছেন যে মিউনিসিপ্যালিটিতে লুট করেছি, যারা ভাবছেন যে পঞ্চায়েতে লুট করেছি আমরা এভাবে চালিয়ে যাব তা আর হবে না”। শিশিরের আবেদন আমার প্রার্থনা আপনাদের ভবিষ্যৎ প্রজন্মকে সুখী করতে দেশকে সমৃদ্ধ করতে বিজেপির হাত শক্ত করুন”।
শিশির অধিকারীর মন্তব্যের বিষয়ে মন্ত্রী অখিল গিরি জানান, “ভোট এলেই ওনারা নাটক করেন। ওনার ক্ষমা চাওয়া আসলে সাধারণ মানুষের আইওয়াশ ছাড়া কিছু নয়। তৃণমূলে থেকে শিশির অধিকারী সহ তাঁর পরিবারের ৩ ছেলেই একাধিক সুবিধা নিয়েছেন। মন্ত্রী, বিধায়ক, সাংসদ, পুরসভার চেয়ারম্যান সমস্ত পদেই একচেটিয়া দখলে রেখেছিলেন শিশির অধিকারী। এখন সদলবলে বিজপিতে যোগ দিয়ে তাঁদের গুনগান করছেন। ওই পরিবারের প্রতি সাধারণ মানুষ বিশ্বাস, ভরসা হারিয়েছেন”।